ঢাকার কেরানীগঞ্জে এক বিদ্যালয়ে পরীক্ষা চলার সময় আজ রোববার দুপুরে কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা এক অন্তঃসত্ত্বা শিক্ষিকাকে অপর শিক্ষক লাঞ্ছিত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষকের বিচার দাবি করেছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষিকা বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক-শিক্ষিকা প্রধান শিক্ষকের মেয়ে অফিস সহকারী ও জামাতা এই বিদ্যালয়েরই ওই অভিযুক্ত শিক্ষকের কাছে জিম্মি। তাঁদের কথামতো না চললে অপর শিক্ষক-শিক্ষিকাদের হুমকি দেওয়া হয়। পূর্বশত্রুতার জের ধরে আজ ষষ্ঠ শ্রেণির ইংরেজি পরীক্ষা চলাকালে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকে প্রধান শিক্ষকের জামাতা আমাকে তুই-তোকারি করে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। তিনি জানতেন আমি অন্তঃসত্ত্বা। এ সময় আমি প্রতিবাদ জানালে তিনি আমার গায়ে হাত তোলেন। আত্মরক্ষার জন্য আমার স্বামীকে কল দিয়ে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসি। তখন প্রধান শিক্ষক বহিরাগত লোকজন নিয়ে এসে বিদ্যালয়ের ভেতরে এনে আমার স্বামীকে মারধরের চেষ্টা করেন। প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে ওই সময় বিদ্যালয়ের সিসিটিভি ক্যামেরাও বন্ধ করে দেওয়া হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি এ ঘটনায় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। আমার সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে, আমি তার উপযুক্ত বিচার চাই।’
এ ঘটনার বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শিক্ষকের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর নম্বর সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরীক্ষারত একাধিক শিক্ষার্থী জানায়, ‘আমাদের পরীক্ষা চলাকালে প্রধান শিক্ষকের জামাতা ওই শিক্ষক ক্লাসে ঢুকে ওই ম্যামকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। একপর্যায়ে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এতে অন্তঃসত্ত্বা ম্যাডাম আঘাত পান। প্রধান শিক্ষকের জামাতা ওই শিক্ষক ও তাঁর স্ত্রী বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। আমরা শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি। এমন শিক্ষক আমরা বিদ্যালয়ে চাই না।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বিদ্যালয় পরিবারতন্ত্রের কাছে জিম্মি হয়ে আছে। প্রধান শিক্ষক আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে তাঁর মেয়েকে বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী পদে নিয়োগ করেন। তাঁর মেয়ে অফিস সহকারী পদে থাকলেও বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তাঁর নির্দেশেই চলতে হয়। পরে প্রধান শিক্ষক তাঁর জামাতাকে কৌশলে বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেন। এখন তাঁর মেয়ে ও জামাতা নিজেদের মতো করে বিদ্যালয় পরিচালনা করছেন। তাঁদের অপকর্মের প্রতিবাদ করায় আরেক শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে অন্যায়ভাবে বহিষ্কার করা হয়। প্রধান শিক্ষক এক ইউপি চেয়ারম্যানের ভগ্নিপতি হওয়ায় কেউ তাঁকে কিছু বলতে সাহস পান না। চেয়ারম্যানের প্রভাব খাটিয়ে তাঁরা বিদ্যালয়টিকে পরিবারতন্ত্রের মধ্যে জিম্মি করে রেখেছেন।’
তবে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দাবি করেন, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা সমাধান করে দিয়েছেন।
কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিনাত ফৌজিয়া বলেন, শিক্ষকদের এ ধরনের আচরণ অপ্রত্যাশিত। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।