লক্ষ্মীপুরে সেই কেন্দ্রের ভোট বাতিল, আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ফের বিজয়ী ঘোষণা

ব্যালটে সিল মারছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আজাদ হোসেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওর স্ক্রিনশট
ফাইল ছবি

লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনে উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণের সময় ৫৭ সেকেন্ডে ৪৩টি ব্যালটে সিল মারার ঘটনায় এক কেন্দ্রের ভোট বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। আজ মঙ্গলবার বিকেলে ওই কেন্দ্রের ভোট বাতিল করে সংশোধিত ফল ঘোষণা করা হয়েছে।
এতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মিয়া গোলাম ফারুককে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। সংশোধিত ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশের জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) কার্যালয়ে পাঠিয়েছেন উপনির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, কমিশন এক কেন্দ্রের ভোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়নের দক্ষিণ খাগুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোট বাতিল করে সংশোধিত ফল ঘোষণা করা হয়েছে। ওই আসনের প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে প্রাপ্ত ভোটের যে ব্যবধান, তা বাতিল কেন্দ্রের মোট ভোটের চেয়ে বেশি। এ জন্য নতুন করে আর নির্বাচন করার প্রয়োজন হয়নি। আওয়ামী লীগ প্রার্থী মিয়া গোলাম ফারুককে বেসরকারিভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।

ফরহাদ হোসেন আরও বলেন, নির্বাচনের দিন ব্যালট বইয়ে ৫৭ সেকেন্ডে নৌকা প্রতীকে ৪৩টি সিল মারার ঘটনার তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেছে। একই সঙ্গে তদন্তকালে ঘটনায় জড়িত সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আজাদ হোসেনসহ দুজনের বিরুদ্ধে মামলার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

গত মঙ্গলবার লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের উপনির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ স্থগিত রেখে অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রিটার্নিং কর্মকর্তা, লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে পৃথক পৃথকভাবে তদন্তের নির্দেশ দেয় কমিশন। তাঁদের তদন্ত প্রতিবেদনের পর কমিশন এক কেন্দ্রের ফলাফল বাতিল করে।

কমিশন সূত্র জানায়, লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের একটি কেন্দ্রে জাল ভোট দেওয়ার প্রমাণ পেয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। সেখানে দুজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। ওই কেন্দ্রে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও বিভাগীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

গত শুক্রবার একটি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা অনবরত সিল মারা আজাদ হোসেনকে তুলে নিয়ে যায়। পরে তাঁকে রাতে চন্দ্রগঞ্জ থানায় সোপর্দ করা হয়। পরে তাঁকে ৫৪ ধারায় কারাগারে পাঠায় পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে আছেন।

৫ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে একটি ভোটকেন্দ্রে ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে ওই নেতাকে একাধিক ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে সিল মারতে দেখা যায়। পরে ভোট গ্রহণে অনিয়ম নিয়ে গত সোমবার প্রথম আলোর অনলাইনে ওই ভিডিওসহ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পর দিন ছাপা পত্রিকায়ও তা প্রকাশিত হয়।

৫৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ভোটকক্ষে বসে এক ব্যক্তি ব্যালট পেপারে নৌকা প্রতীকে সিল মারছেন। তাঁর গলায় নৌকা প্রতীকের কার্ড ঝুলছে। এ সময় তাঁকে ৪৩টি ব্যালটে নৌকা প্রতীকে সিল মারতে দেখা যায়।

আজাদ হোসেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দিঘলী ইউনিয়নের দক্ষিণ খাগুড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার এজেন্ট হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। আজাদ চন্দ্রগঞ্জ থানা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। গত ৮ অক্টোবর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাঁকে বহিষ্কার করেছে জেলা ছাত্রলীগ।

লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনের উপনির্বাচনের দিন জাতীয় পার্টি ও জাকের পার্টির প্রার্থী ভোট বর্জন করেন। নির্বাচনে কারচুপি, এজেন্ট বের করে দেওয়া ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে সেদিন দুপুরে তাঁরা ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য এ কে এম শাহজাহান কামাল মারা যান। ৩ অক্টোবর আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ৪ অক্টোবর উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়।