কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন। আজ বুধবার দুপুরে ক্যাম্পাসে
 ছবি: প্রথম আলো

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আজ বুধবার দুপুরে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে ওই মানববন্ধন হয়। এতে শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই হল ছাড়বেন না বলে জানিয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের ভাষ্য, শিক্ষকদের ওপর হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ও হল বন্ধ করার মতো কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আলোচনা করে সব মহলের ন্যায্য দাবি মেনে নিলে সংকট নিরসন হবে।

এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে অনলাইনে অনুষ্ঠিত ৯২তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শিক্ষক সমিতির কর্মসূচির জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্ত নেয়।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আজ বুধবার বিকেল চারটায় শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছে। শিক্ষার্থীদের বাড়ি পৌঁছানোর জন্য দুটি বাসও দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা বলেছেন, রোজা, ঈদের ছুটির পর তাঁরা বাড়ি থেকে ফিরেছেন কয়েক দিন হলো। এরই মধ্যে বাড়ি ফিরলে তাঁদের আর্থিক ক্ষতি হবে। অনেকের টিউশনি আছে। আগামী শুক্রবার গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা হবে। তাঁদের স্বজনেরা পরীক্ষা দিতে আসবে। এই সময়ে তাঁদের পক্ষে হল ত্যাগ করা কোনোভাবেই সম্ভব না। এ জন্য তাঁরা হলে থাকবেন। কোনোভাবেই তাঁরা বাড়ি ফিরবেন না।

দুপুরে সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ হাসিনা ও নওয়াব ফয়জুন্নেছা চৌধুরানী ছাত্রী হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, কাজী নজরুল ইসলাম হল ও শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা হলে আছেন। কেউ আড্ডা দিচ্ছেন। কেউ পড়ার টেবিলে আছেন। কেউ হলের ফটকের সামনে জটলা বেঁধে আছেন। কেউ মানববন্ধনে গেছেন।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থী সালমা আক্তার বলেন, ‘ঈদের ছুটির পর মাত্র বাড়ি থেকে এলাম। এখন আবার ফেরা কষ্টের। এত টাকা যদি পরিবহন খাতে দিই, মাস তাহলে চলবে কেমনে। তার ওপর টিউশনি করি চারটি। বারবার বন্ধ দিলে টিউশনিও তো চলে যাবে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের অন্তত তিনজন শিক্ষার্থী জানান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি হতে পারে এই সপ্তাহে। তখন বহিরাগতরা হলে উঠবেন। এ জন্য তাঁদের বের করে দিয়ে একটি মহল হল বন্ধের ইন্ধন দেয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের অন্তত তিনজন শিক্ষার্থী জানান, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি হতে পারে এই সপ্তাহে। তখন বহিরাগতরা হলে উঠবেন। এ জন্য তাঁদের বের করে দিয়ে একটি মহল হল বন্ধের ইন্ধন দেয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ও বহিরাগতদের ওপর ভর করে ক্যাম্পাসে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিতে চায়।

প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিছু শিক্ষার্থী হল ছাড়ছেন। কিছু আছেন। বিকেল চারটার মধ্যে তাঁদের হল ত্যাগ করতে হবে। নির্ধারিত সময়ে হল ত্যাগ না করলে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে। অতীতেও বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে হল বন্ধ করা হয়। আমরা তো হল সিলগালা করিনি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. আমিরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার রাতে জরুরি সিন্ডিকেটের সভায় হল ত্যাগের সিদ্ধান্ত হয়। আমরা সেটি রাতেই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রচার করেছি।’

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন। আজ বুধবার দুপুরে ক্যাম্পাসে

শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান বলেন, ‘বর্তমান উপাচার্যের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষকেরা নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ১৮ জন শিক্ষক প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন। উপাচার্য এই বিশ্ববিদ্যালয় চালাতে পারছেন না। তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা করেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য থাকবেন না। থাকবেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। আমাদের শিক্ষার্থীরাও হল ছাড়বেন না।’