টিসিবি পণ্য বিক্রি
টিসিবি পণ্য বিক্রি

বরিশালে ওএমএস-টিসিবির কার্যক্রমেও স্বস্তি মিলছে না বাজারে

নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যায্যমূল্যে খোলাবাজারে (ওএমএস) চাল-আটা ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) চাল, ডালসহ তিনটি পণ্য বিক্রি করছে সরকার। সারা দেশের মতো বরিশালেও ওএমএস ও টিসিবির কার্যক্রম পরিচালনা করা হলেও বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসছে না। নিত্যপণ্যের পাশাপাশি শাকসবজির বাজার লাগামহীন হওয়ায় নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের।

বরিশালের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ ও বাজার-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের সুযোগে বাজারব্যবস্থায় যে শক্তিশালী মধ্যস্বত্বভোগী চক্র গড়ে উঠেছে, সেটা ভাঙতে হবে। এটি করতে না পারলে শুধু ওএমএস ও টিসিবির কার্যক্রম দিয়ে বাজারে শৃঙ্খলা আনা যাবে না।

বরিশাল খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল নগরে ওএমএসের চাল ও আটা বিক্রি কার্যক্রমের জন্য সরকারি তালিকাভুক্ত ৪০ ডিলার আছেন। তাঁদের মধ্যে প্রতিদিন ১১ জন পালা করে নগরের বিভিন্ন পয়েন্টে চাল ও আটা বিক্রি করেন। সেখান থেকে একজন ব্যক্তি ৩০ টাকা কেজি দরে পাঁচ কেজি চাল ও ২৪ টাকা কেজি দরে পাঁচ কেজি আটা কিনতে পারছেন।

জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক এস এম তাহসিনুল হক প্রথম আলোকে বলেন, বরিশাল নগরে তাঁরা ডিলারদের মাধ্যমে প্রতিদিন ১১ টন চাল ও সাড়ে ১৬ টন আটা ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করছেন। বর্তমানে জেলা ও মহানগর পর্যায়ে ওএমএসের কার্যক্রম চলমান। বিশেষ পরিস্থিতিতে তা উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারণ করা হয়। এ জন্য তাঁদের তালিকাভুক্ত ডিলার আছেন।

বরিশাল আঞ্চলিক টিসিবি কার্যালয় সূত্র জানায়, বরিশাল মহানগর ও জেলার ১০টি উপজেলায় টিসিবির কার্যক্রম চলমান। তারা আগে ট্রাক থেকে যে কাউকে পণ্য বিক্রি করলেও এখন সেভাবে পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। টিসিবির নির্দিষ্ট কার্ডধারীরা বর্তমানে পণ্য কিনতে পারছেন। প্রতি মাসে একজন কার্ডধারী একবার ৩০ টাকা কেজি দরে পাঁচ কেজি চাল, ৬০ টাকা কেজি দরে দুই কেজি মসুর ডাল ও ১০০ টাকা কেজি দরে দুই লিটার সয়াবিন তেল কিনতে পারছেন। বর্তমানে নগরে ৯৪ হাজার পরিবার এই কার্ড দিয়ে পণ্য নিতে পারছে। আর নগরের বাইরে পুরো জেলায় কার্ডধারী উপকারভোগীর সংখ্যা ১ লাখ ২৯ হাজার।

নগরের উত্তর আলেকান্দা ও আমির কুটির এলাকার তিন কার্ডধারী দুলিয়া আক্তার, কালাম হোসেন ও কুট্টি বেগম। তাঁরা প্রত্যেকেই দিনমজুর। তাঁরা বলেন, বাজারের যে অবস্থা, তাতে প্রতি মাসে অন্তত দুবার করে পণ্য দিলে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যেত।

টিসিবির বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক শতদল মণ্ডল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপাতত কার্ডের মাধ্যমেই আমরা পণ্য বিক্রি করছি। এটা আরও বাড়ানো হবে কি না বা অন্য কোনো ফরম্যাটে করা হবে কি না, নতুন কোনো নির্দেশনা আপাতত নেই।’

সরকার ভর্তুকি দিয়ে সরবরাহব্যবস্থা বাড়িয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করলেও কিছুতেই বাজার নিয়ন্ত্রণে আসছে না। নিত্যপণ্যের সঙ্গে সবজির বাজার এখন সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে। এ অবস্থায় সাময়িক সময়ের জন্য বড় শহরগুলোয় ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রয়কেন্দ্র চালু হয়েছে। বরিশালেও সেটি চালুর সম্ভাবনা আছে বলে জানা গেছে।

ওএমএসের কার্যক্রমের পরেও খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে না আসার কারণ জানতে চাইলে জেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক এস এম তাহসিনুল হক বলেন, এর সবচেয়ে বড় কারণ মধ্যস্বত্বভোগী চক্র। এই চক্র ভাঙতে সরকার নতুন পরিপত্র জারি করেছে। এখন থেকে উৎপাদিত চাল বাজারজাত করতে হলে বস্তায় মিলারের নাম, ঠিকানা, উৎপাদনের তারিখ ও মূল্য লেখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এটা বাস্তবায়নে এখন শক্তিশালী তদারকি প্রয়োজন। সেটা করতে পারলে এর সুফল পাওয়া যাবে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) বরিশাল জেলার সাধারণ সম্পাদক রনজিৎ দত্ত প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকায় সবজির বাজার চালু হয়েছে। বরিশালে চালুর ভাবনা আছে বলে শুনেছেন। এ ছাড়া জেলা টাস্কফোর্সের সভায় পাইকারি বাজারে পণ্য বিক্রির সময় ক্রেতাকে ক্যাশমেমো দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এরপরও অনেকে এটি মানছেন না। মধ্যস্বত্বভোগীর চোরা ফাঁদ ভাঙতে শক্তিশালী উদ্যোগ দরকার। পাশাপাশি সরবরাহ বাড়াতে বড় শহরের পাশাপাশি গ্রাম পর্যায়ে টিসিবি ও ওএমএসের কার্যক্রম বাড়ানো প্রয়োজন।