ওয়ার্ডের সবচেয়ে অবহেলিত জায়গা গোপালপুর মধ্যপাড়া এলাকা। এখানে যাতায়াতের জন্য প্রশস্ত কোনো রাস্তা নেই। আছে কয়েকটি সরু গলি।
টঙ্গী-ঘোড়াশাল আঞ্চলিক সড়কের আমতলী থেকে গোপালপুর কালভার্টের দিকে যেতে হাতের ডানে পড়ে গোপালপুর মধ্যপাড়া এলাকা। ওই এলাকায় কলকারখানার শ্রমিক, দিনমজুরসহ বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার কয়েক হাজার মানুষের বসবাস। কিন্তু যাতায়াতের জন্য নেই প্রশস্ত কোনো রাস্তা। পাড়ার মাঝখান দিয়ে আছে কয়েকটি গলি। গলিগুলো এতই সরু ও সংকীর্ণ যে যানবাহন চলাচল তো দূরের কথা, একের অধিক মানুষের হাঁটাই দায়।
ওই এলাকাটি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। গোপালপুর মধ্যপাড়া ছাড়াও টঙ্গী বিসিকের একাংশ, নদীবন্দরের একাংশ, মিড়াশপাড়া, আলেরটেকসহ বেশ কয়েকটি এলাকা নিয়ে গঠিত এ ওয়ার্ড। জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্যমতে, ওয়ার্ডটিতে মোট ভোটার সংখ্যা ১৩ হাজার ৭৭২ ।
তবে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ভোটারের সংখ্যার চেয়ে কয়েক গুণ। ভোটারদের মধ্যে নারী ভোটার ৭ হাজার ৬৩ এবং পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৬ হাজার ৭০৯ জন। ভোটকেন্দ্র পাঁচটি এবং ভোটকক্ষের সংখ্যা ৩৪টি। ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর মাজহারুল ইসলাম (দিপু)।
ওয়ার্ডটি ঘুরে এবং বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওয়ার্ডের সবচেয়ে অবহেলিত জায়গা গোপালপুর মধ্যপাড়া এলাকা। এখানে যাতায়াতের জন্য প্রশস্ত কোনো রাস্তা নেই। পাড়ায় যোগাযোগের উপায় কয়েকটি সরু গলি। এসব গলি দিয়ে যানবাহন চলার উপায় নেই। ফলে পাড়ায় কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এমনকি কেউ মারা গেলে খাটিয়া দিয়ে লাশ বের করারও উপায় নেই। সরু রাস্তা ছাড়াও ওই এলাকায় সিটি করপোরেশনের তেমন কোনো নাগরিক সুবিধা পৌঁছায়নি।
গোপালপুর মধ্যপাড়া এলাকার বাসিন্দা দিনমজুর মোশারফ হোসেন বলেন, শুধু নামেই সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা তাঁরা। সিটি করপোরেশন গঠনের ১০ বছর পরেও কোনো নাগরিক সেবা মেলেনি। বৃষ্টির দিনে জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করে। সারা বছরই থাকে মশার যন্ত্রণা। এর বাইরে পুরো ওয়ার্ডে খেলার মাঠ, কবরস্থান, গণশৌচাগার। এর মধ্যে রাস্তার সমস্যা সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরু গলি ও সংকীর্ণ রাস্তার কারণে খুব ভুগতে হচ্ছে তাঁদের।
সম্প্রতি তৃতীয় মেয়াদে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনের ভোট গ্রহণ আগামী ২৫ মে। প্রতিটি ওয়ার্ডে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে নির্বাচনী ডামাডোল। ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে এবারও দাঁড়াবেন বর্তমান কাউন্সিলর মাজহারুল ইসলাম। গতবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন তিনি। এবার তাঁর পাশাপাশি আরও চারজনের নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁরা হলেন রোমান শেখ, দুলাল হোসেন, নূরনবী আনসারী ও তুহিন রহমান।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, নির্বাচন উপলক্ষে প্রার্থীর অনেকেই নিজেদের প্রচারণায় নেমে পড়েছেন। কেউ কেউ বাসাবাড়ির দেয়ালে সাঁটিয়েছেন পোস্টার। এর বাইরে চায়ের দোকান, কোনো আড্ডা বা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। মুঠোফোনে কল বা খুদে বার্তার মাধ্যমেও কেউ কেউ নিজেদের প্রার্থিতার কথা জানান দিচ্ছেন। পাশাপাশি এলাকার লোকজনের কথাবার্তায়ও বইছে নির্বাচনের হাওয়া।
ওয়ার্ডের ওয়াপদা (পাওয়ার গ্রিড) কলোনি এলাকায় কথা হয় কয়েকজন স্থানীয় গৃহিণীর সঙ্গে। তাঁরা জানান, ওয়ার্ডের কোথাও পয়োনিষ্কাশন নালা ঠিক নেই। এ কারণে বর্ষাকালে একটু ভারী বৃষ্টি হলেই তাঁদের বাসাবাড়িতে হাঁটুপানি জমে। পানির কারণে ঘর থেকে বের হওয়া যায় না। কেউ কেউ এ যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে অতিরিক্ত টাকা খরচ করে বাসার মেঝে উঁচু করেছেন।
এ ছাড়া সন্ধ্যা নামতেই শুরু হয় মশার উপদ্রব। হালিমা আক্তার নামের এক গৃহিণী বলেন, ‘আমরা সিটি করপোরেশনের বাসিন্দা। নিয়মিত টেক্স দেই। কিন্তু আমরা কোনো নাগরিক সুবিধা পাই না। মশার যন্ত্রণায় থাকা যায় না। বাচ্চাদের জন্য কোনো খেলার মাঠও নাই।’
সরু গলিসহ ওয়ার্ডের নানা সমস্যার বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় বর্তমান কাউন্সিলর মাজহারুল ইসলামের সঙ্গে। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘ওয়ার্ডের ভেতরে বিভিন্ন রাস্তার টেন্ডার হয়েছে। কিন্তু জাহাঙ্গীর আলমকে বহিষ্কার বা সিটি করপোরেশনে স্থিতিশীল অবস্থা না থাকায় ঠিকাদার কাজ করেননি।
আর মশা সারা বাংলাদেশেই আছে। আমাদের সিটি করপোরেশন থেকে যখন ওষুধ দেয়, ঠিক তখনই এলাকায় ওষুধ ছিটাতে পারি। খেলার মাঠ বা অন্যান্য নাগরিক সুবিধা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।’
নতুন কাউন্সিলর প্রার্থী কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। এর মধ্যে রোমান শেখ বলেন, ‘৪৪ নম্বর ওয়ার্ডটি বিভিন্ন কারণে অবহেলিত। রাস্তা, জলাবদ্ধতা বা মশার যন্ত্রণাসহ ওয়ার্ডের কোথাও একটা খেলার মাঠ নাই। আমি কাউন্সিলর নির্বাচিত হতে পারলে এসব সমস্যা থাকবে না।’