সিলেটের এমসি কলেজে প্রতিষ্ঠাতা রাজা গিরিশচন্দ্র রায়ের ম্যুরাল স্থাপনকাজের শেষ সময়ের প্রস্তুতি চলছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়
সিলেটের এমসি কলেজে প্রতিষ্ঠাতা রাজা গিরিশচন্দ্র রায়ের ম্যুরাল স্থাপনকাজের শেষ সময়ের প্রস্তুতি চলছে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায়

এমসি কলেজে অবশেষে প্রতিষ্ঠাতা গিরিশচন্দ্র রায়ের ম্যুরাল, আজ উদ্বোধন

অবশেষে সিলেটের মুরারিচাঁদ (এমসি) কলেজের প্রতিষ্ঠাতা রাজা গিরিশচন্দ্র রায়ের ম্যুরাল স্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। আজ শনিবার বিকেলে এ ম্যুরালের উদ্বোধন করা হবে। কলেজ প্রতিষ্ঠার ১৩১ বছর পর প্রতিষ্ঠাতার স্মৃতি রক্ষায় এটিই প্রথম আনুষ্ঠানিক কোনো উদ্যোগ।

ম্যুরাল নির্মাণ কমিটির সমন্বয়ক ও কলেজের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আবদুল আহাদ জানান, আজ বেলা সোয়া চারটায় কলেজ ক্যাম্পাসে সমবেত কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হবে। পরে শুভেচ্ছাকথন, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতা হবে। এতে কলেজের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা উপস্থিত থাকবেন।

এর আগে গত বছরের আগস্ট মাসে কলেজের প্রধান ফটকের সামনে কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে প্রয়াত গুণী খান বাহাদুর সৈয়দ আবদুল মজিদ কাপ্তান মিয়ার ম্যুরাল স্থাপন করা হয়। তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিকে ডিগ্রি কলেজে রূপান্তরের ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। তবে কলেজের প্রতিষ্ঠাতা রাজা গিরিশচন্দ্রকে পাশ কাটিয়ে কাপ্তান মিয়ার ম্যুরাল স্থাপনে উদ্যোগ নেওয়ায় নানা মহলে সমালোচনা শুরু হয়। একাধিক প্রাক্তন শিক্ষার্থী বলেন, একজনকে সম্মানিত করতে গিয়ে আরেকজনকে অসম্মানিত ও খাটো করা হয়েছে। দুই ব্যক্তির ম্যুরালই একই সময়ে স্থাপন করা যেত। আর যদি কোনো কারণে একজনেরই ম্যুরাল স্থাপন করতে হয়, সে ক্ষেত্রে কলেজের প্রতিষ্ঠাতাকেই প্রাধান্য দেওয়া উচিত ছিল। অথচ সেটি না করে বিব্রতকর একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ।

পরে এ নিয়ে প্রথম আলোর অনলাইনে গত বছরের ২৩ আগস্ট ‘প্রতিষ্ঠাতাকে পাশ কাটিয়ে ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে সমালোচনা’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপরই প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা প্রতিষ্ঠাতার ম্যুরাল স্থাপনে উদ্যোগ নেন।

ম্যুরাল নির্মাণ কমিটির সদস্য ও মুরারিচাঁদ কলেজের গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রবীর রায় প্রথম আলোকে জানান, গত ২২ জুলাই ম্যুরালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকাজের উদ্বোধন করেন কলেজের অধ্যক্ষ আবুল আনাম মো. রিয়াজ। এর প্রায় চার মাস পর নির্মাণকাজ শেষে আজ ম্যুরালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হবে। ম্যুরালটি নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক খাতে সর্বমোট ব্যয় হয়েছে ১৪ লাখ ৯৬ হাজার ২১২ টাকা। এটা নির্মাণের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাতার অবদান ও নাম শুধু কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সিলেটে শিক্ষা বিস্তারে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন রাজা গিরিশচন্দ্র সেন। এর ধারাবাহিকতায় ১৮৯২ সালে তিনি এমসি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। অন্যদিকে সৈয়দ আবদুল মজিদ কাপ্তান মিয়া আসামের শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি আইনজীবী ও ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিবিদ হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। ১৯১৯ সালে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সিলেটে আনার পেছনেও কাপ্তান মিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। এর আগে ১৯১৬ সালে এমসি কলেজকে ডিগ্রি কলেজে রূপান্তরের পেছনেও তাঁর অবদান রয়েছে।