বান্দরবানে কেএনএফের সঙ্গে সশরীর বৈঠক কাল বা পরশু

বান্দরবান জেলার মানচিত্র
বান্দরবান জেলার মানচিত্র

বান্দরবানে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সঙ্গে পার্বত্য চট্টগ্রামের নতুন সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) সশরীর বৈঠক কাল সোমবার বা পরশু মঙ্গলবারের মধ্যে হচ্ছে। বৈঠকে আলোচ্য বিষয় ঠিক করতে গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সভা হয়েছে। তবে রুমা উপজেলায় বৈঠকের নির্ধারিত স্থান ও তারিখ সম্পর্কে সভা শেষে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্যরা সুনির্দিষ্টভাবে জানাতে চাননি।

গতকাল সন্ধ্যা সাতটায় মেঘলা পর্যটন এলাকার একটি অবকাশযাপনকেন্দ্রে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কমিটির আহ্বায়ক ক্যশৈহ্লা মারমা। আরও উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্যসচিব লালজার লম বম, কমিটির মুখপাত্র কাঞ্চনজয় তঞ্চঙ্গ্যা ও অন্য সদস্যরা।

সভা শেষে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সদস্যরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে নিশ্চিত করেছেন, বৈঠকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির আহ্বায়ক ক্যশৈহ্লা মারমার নেতৃত্বে আট-নয়জনের একটি দল অংশ নেবে। তাদের সঙ্গে সরকারের প্রতিনিধিরা থাকবেন। অপর দিকে কেএনএফের প্রধান নাথান বম বৈঠকে উপস্থিত থাকছেন না। সাধারণ সম্পাদক ভানচুংলিয়ান বমের নেতৃত্বে আট-নয়জন উপস্থিত থাকতে পারেন। প্রথম বৈঠকে পরস্পরের মধ্যে পরিচিত হওয়া, দাবিদাওয়া সম্পর্কে আলোচনা ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ব্যাপারে আশ্বস্ত করা নিয়ে মতবিনিময় হবে। তারপর পরবর্তী সময়ে আবারও আলাপ-আলোচনা কোথায় ও কখন হবে, তা নির্ধারণ করা হতে পারে।

প্রথমবারের অনুষ্ঠেয় বৈঠকে কোনো গণমাধ্যমকর্মীকে যাওয়ার অনুমোদন দেওয়া হবে না। তবে বৈঠক শেষে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির মুখপাত্র বৈঠকের ব্যাপারে সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরবেন। প্রয়োজনে বৈঠকের ছবিও সরবরাহ করা হবে। যানবাহন ও অন্যান্য সীমাবদ্ধতার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সভা শেষে জানানো হয়েছে।

শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির মুখপাত্র ও জেলা পরিষদের সদস্য কাঞ্চনজয় তঞ্চঙ্গ্যা বলেছেন, কেএনএফের সঙ্গে দু-এক দিনের মধ্যে হতে পারে। সেভাবে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গতকাল শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির সভা হয়েছে।

এর আগে ৫ অক্টোবর সশরীর প্রথম বৈঠক রুমা উপজেলা সদর থেকে চার কিলোমিটার দূরে মুনলাইপাড়ায় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কেএনএফের নেতারা প্রথমে মুনলাইপাড়ায় বসতে রাজি হলেও পরে স্থান পরিবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছেন। এ কারণে সবকিছুর প্রস্তুতি নিয়েও শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত তারিখে বৈঠক হয়নি। পরবর্তী সময়ে উভয় পক্ষের আরও যোগাযোগের ভিত্তিতে বৈঠকের স্থান পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে বিভিন্ন কারণে বৈঠকের তারিখ ও স্থান জানানো যাচ্ছে না বলে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটির নেতারা জানিয়েছেন।

পাহাড়ে নতুন সশস্ত্র সংগঠন কেএনএফ গত বছরের মাঝামাঝি থেকে বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি উপজেলার দুর্গমে ও রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নে তৎপরতা শুরু করে। তাদের দাবি, তারা বম, পাংখুয়া, লুসাই, খুমি, খেয়াং ও ম্রোদের অধিকারের জন্য আন্দোলন করছে। সংগঠনটি গড়ে ওঠে মূলত বান্দরবানের রুমা উপজেলায়। এর প্রধান রুমা উপজেলা সদর বাজারের বাসিন্দা নাথান বম। তিনি ২০১২ সালে কুকি-চিন ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনস (কেএনডিও) নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। সেটি পরবর্তী সময়ে কেএনএফ নামে সশস্ত্র সংগঠনে রূপান্তর করেন।

কেএনএফের গোপন আস্তানায় সমতলের জঙ্গিগোষ্ঠী জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্কীয়ার জঙ্গিরা প্রশিক্ষণ নেয় বলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়। কেএনএফের কথিত সামরিক শাখার নাম কেএনএ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গত বছরের অক্টোবরে কেএনএফ ও শারক্কীয়া জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে। অভিযানে পাহাড় থেকে ৩৮ জন জঙ্গি ও অনেক কেএনএফ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় কেএনএফের হামলায় নিরাপত্তা বাহিনীর পাঁচ সদস্য নিহত হয়েছেন।

সশস্ত্র কেএনএফের সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য গত মে মাসে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিটি গঠন করা হয়। এ পর্যন্ত কয়েক দফা কেএনএফ নেতাদের সঙ্গে অনলাইন বৈঠকের এবারে সশরীর বৈঠকের আয়োজন করা হচ্ছে।