ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার হারুয়া বাজারে এক টাকায় শিঙাড়া বিক্রি করেন প্রদীপ মোদক
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার হারুয়া বাজারে এক টাকায় শিঙাড়া বিক্রি করেন প্রদীপ মোদক

২৬ বছর ধরে ‘এক টাকার শিঙাড়াওয়ালা’ ময়মনসিংহের প্রদীপ

এক টাকায় এখন কিছু পাওয়া যায় না। তবে ব্যতিক্রম হলো ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার হারুয়া বাজারের প্রদীপ মোদকের শিঙাড়া। এখানে এক টাকায় শিঙাড়া পাওয়া যায়। ২৬ বছর ধরে তিনি একই দামে শিঙাড়া বিক্রি করছেন। লোকে এখন তাঁকে ‘এক টাকার শিঙাড়াওয়ালা’ বলেন।

ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ সড়কের পাশে ঈশ্বরগঞ্জের হারুয়া বাজারে পলিথিন টানিয়ে প্রদীপ মোদকের ব্যবসা। পাশের বড়জোড়া গ্রামে তাঁর বাড়ি। স্ত্রী মমতা রানী, দুই ছেলে দেব মোদক ও শুভ মোদককে নিয়ে তাঁর সংসার। দুই ছেলে তাঁকে ব্যবসায় সহযোগিতা করেন। যা আয় হয়, তা দিয়েই চলে তাঁদের চারজনের সংসার।

সম্প্রতি এক বিকেলে প্রদীপের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, শিঙাড়া-পিঁয়াজু ভাজছেন তিনি। পাশে বসে সেগুলো বিক্রি করছেন বড় ছেলে দেব মোদক। ফাঁকে ফাঁকে মুড়ির মোয়া প্যাকেট করছেন দেব। ক্রেতা শিঙাড়া বা পিঁয়াজু, যেটাই কেনেন না কেন, দাম এক টাকা করে।

প্রদীপ মোদক বলেন, ২৬ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করেন তিনি। নিজের ১০ শতাংশ ভিটে ছাড়া তাঁর আর কোনো জমি নেই। বড় ছেলে দশম শ্রেণি এবং ছোট ছেলে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন। ছেলেরা পড়ালেখা করলে ব্যবসার কাজে সহযোগিতার কেউ থাকে না। তাই পড়ালেখা বাদ দিয়ে তাঁরা বাবার সঙ্গে ব্যবসার কাজে যুক্ত হয়েছেন। প্রদীপ বাড়িতে দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে প্রতিদিন দুই হাজারের মতো শিঙাড়া বানিয়ে বাজারে আসেন। পরে গরম–গরম ভেজে বিক্রি করেন। পিঁয়াজু বানানোর সব আয়োজন সম্পন্ন করে দোকানে এনে ভাজেন।

প্রদীপ মোদকের দোকানে এক টাকার শিঙাড়া-পিঁয়াজু খেতে ভিড় করেন অনেকে

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির এই সময়ে এক টাকায় শিঙাড়া-পিঁয়াজু বিক্রি করে কীভাবে চলেন—জানতে চাইলে প্রদীপ মোদক বলেন, দীর্ঘ সময় এক টাকায় শিঙাড়া-পিঁয়াজু বেচতে বেচতে ‘এক টাকার শিঙাড়াওয়ালা’ হিসেবে তাঁর একটা পরিচিতি হয়ে গেছে। এক টাকার কথা শুনে কৌতূহলের বশে দূর থেকে অনেকে আসেন। শেষ বয়সে এগুলোর দাম বাড়ালে পরিচিতি ও সুনাম দুটোই নষ্ট হবে। তাই তিনি দাম বাড়াননি। প্রতিদিন যত উপকরণ নিয়ে আসেন, সবই বিক্রি করে বাড়ি যান। দাম একই রাখতে দিন দিন আকার ছোট করেছেন।

প্রদীপের দোকানে আসা মাহবুব মাসুম নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘পুরো বাজারে উনার মতো সৎ ব্যবসায়ী আমি একজনকেও পাইনি। কারণ, উনি চাইলেই শিঙাড়া-পেঁয়াজুর দাম বাড়াতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। আর দামে কম থাকলেও উনার খাবারের মান খুবই ভালো এবং অনেক সুস্বাদু।’

হারুয়া বাজারের মুদি দোকানি মো. মোস্তফা মিয়া বলেন, ‘এক টাকায় শিঙাড়া-পেঁয়াজু, শুনেই বিস্মিত হন অনেকে। অন্য উপজেলা থেকেও বিভিন্ন বয়সী মানুষ তাঁর দোকানে ভিড় জমান।’