সুন্দরবন থেকে বহু পথ পাড়ি দিয়ে বাগেরহাটের চিতলমারীতে আসা কুমিরটি
সুন্দরবন থেকে বহু পথ পাড়ি দিয়ে বাগেরহাটের চিতলমারীতে আসা কুমিরটি

একটি কুমিরের ভ্রমণকাহিনি

সুন্দরবনের একটি কুমির বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার বাংলাবাজারে চলে গেছে। এ জন্য তাকে পাড়ি দিতে হয়েছে শত কিলোমিটার। কুমিরটির গায়ে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসানো থাকায় কীভাবে সে সুন্দরবন থেকে বাংলাবাজারের লোকালয়ের পুকুর পর্যন্ত গেল, সে সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া গেছে।

বন বিভাগ জানিয়েছে, কুমিরের জীবন ও গতিবিধি সম্পর্কে জানার জন্য সুন্দরবনে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসানো চারটি কুমির ছাড়া হয়েছিল। এর মধ্যে তিনটিই সুন্দরবনে আছে। যেটি বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার বাংলাবাজারে চলে গেছে, সেটি করমজলের কুমির রোমিও ও জুলিয়েটের বাচ্চা। বয়স ৮ থেকে ১০ বছর। সুন্দরবনের জোংড়া খালের মুখে কুমিরটিকে ছাড়া হয়েছিল।

গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় কুমিরটিকে উদ্ধার করা হয়। কুমিরটি পশুর নদ ধরে সুন্দরবন থেকে বের হয়। এরপর মোংলা নদী ধরে রামপাল হয়ে পিরোজপুর চলে যায়। সেখানে তুশখালী, বলেশ্বর, কঁচা নদী হয়ে সন্ধ্যা ও কালিগঞ্জা নদী পার হয়ে কুমিরটি মধুমতী নদীতে যায়। এরপর প্রায় এক সপ্তাহ ধরে কুমিরটি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার কাছে মধুমতী নদীতে ছিল।

কুমির নিয়ে গবেষণার জন্য শরীরে স্যাটেলাইট ট্যাগ বসিয়ে নদীতে ছাড়ার কাজটি যৌথভাবে করছে বন বিভাগ ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচার (আইইউসিএন)। তাদের সহযোগিতা করছে জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (জিআইজেড)।

বন থেকে কুমিরটি লোকালয়ে চলে যাওয়ার বিষয়ে আইইউসিএনের ব্যবস্থাপক সারোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, সুন্দরবনের নদী থেকে কুমিরটি এমন দূরে যেতেই পারে। নদীতে তো আর বেড়া নেই। সুন্দরবনে ছাড়ার পর থেকেই এটি ঘুরছিল। বনের নদী থেকে বেরিয়ে লোকালয়ের নদীতে চলে যায়। বাগেরহাটের মোংলা, রামপাল, মোরেলগঞ্জ, শরণখোলা হয়ে এটি পাশের পিরোজপুরের নদ-নদী ঘুরে বেড়ায়। পরে অবশ্য এটি বনের দিকে ফিরতে শুরু করেছিল। তবে আবার গোপালগঞ্জের দিকে চলে যায়।

বন বিভাগ ও গবেষণা–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানাচ্ছেন, কুমিরের শরীরে বসানো এই ট্রান্সমিটার কিটের মেয়াদ এক বছর। শরীরে বসানোর পর তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যায়। এর পর থেকে ঘণ্টায় ঘণ্টায় আপডেট তথ্য ম্যাপের মাধ্যমে দিতে থাকে। ব্যাটারিচালিত এই যন্ত্রে একটি ক্ষুদ্র অ্যানটেনা আছে, যার মাধ্যমে এটি স্যাটেলাইটের সঙ্গে যুক্ত থাকে।

খুলনা বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল বলেন, চিতলমারী থেকে উদ্ধারের পর কুমিরটিকে তাদের রেসকিউ সেন্টারে নেওয়া হয়েছে। একে এবার সুন্দরবনের ঝাপসি বা করাপুটিয়া এলাকায় ছাড়া হবে।