সড়কের বিভিন্ন স্থানে পিচ, পাথর ও খোয়া উঠে গেছে। সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্ত।
সড়কটির বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন। রয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ। সব মিলিয়ে বেহাল। প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, দেখা দিচ্ছে দীর্ঘ যানজট। এই দশা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরোনো সড়কের। এর ফলে ভুগতে হচ্ছে ওই সড়কে চলাচলকারী যানবাহন ও পথচারীদের।
নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাঢ়া থেকে রাজধানীর পোস্তগোলা পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়কের পুরোটাই বেহাল। সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ভগ্নদশার কারণে প্রতিনিয়ত যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে জানিয়ে দ্রুত সড়কটি মেরামতের জন্য ২০ আগস্ট সড়ক ও জনপথ ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলীকে চিঠি দেয় নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করে নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, সড়কটি বিভিন্ন স্থানে ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে যানজট লেগে থাকছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরোনো সড়কের পাগলা তালতলা এলাকায় সড়কের বিভিন্ন স্থানে পিচ, পাথর ও খোয়া উঠে গেছে। সড়কে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙা সড়ক দিয়ে যানবাহন ধীরগতিতে চালাতে হচ্ছে। সড়কের দুপাশের শোল্ডারিং ভেঙে গেছে। কাদামাটি গর্তের তৈরি হয়েছে। সেই কাদামাটির গর্তে প্রায়ই যানবাহনের চাকা আটকা পড়ে।
তালতলা এলাকার মতো মুন্সীখোলা, পাগলা, আলীগঞ্জ, দাপা, ফতুল্লা ও পঞ্চবটি এলাকায় সড়কের বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে। সাইড শোল্ডারিংগুলোতে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে সড়কের প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকা বিভিন্ন স্থানে ভেঙে গেছে। ভাঙা গর্তের কারণে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচলের কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
পাগলা তালতলা এলাকার রড ব্যবসায়ী শাহ্ নূর বলেন, পুরো সড়ক ভেঙে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। প্রায়ই মালবাহী কাভার্ডভ্যান ও ট্রাক দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে। সড়কের দুই পাশের শোল্ডারিং কাদামাটির গর্ত তৈরি হয়েছে।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে যায়, জেলার গুরুত্বপূর্ণ দুই লেনের সড়কটি অনেক দিন ধরে ভাঙাচোরা। গর্তে প্রায় সময় মালবাহী গাড়ি আটকে পড়ে। সেই গাড়ি গর্ত থেকে তুলতে রেকার লাগাতে হয়। অন্য গাড়ি দিয়ে টেনে তুলতে হয়। এসব ক্ষেত্রে যানজট আরও দীর্ঘ হয়।
নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক জিয়াউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, শিল্পনগরের এই সড়ক দিয়ে মালবাহী কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু ভাঙা সড়কের কারণে যানজট নিয়ন্ত্রণ করা ট্রাফিক পুলিশের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বছরের পর বছর ধরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরোনো সড়কের আশপাশে ইমারত নির্মাণসামগ্রীর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এখানে ইট, বালু, পাথর, রড, সিমেন্টসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া এই সড়কের পাশে রি–রোলিং মিলসহ বিভিন্ন শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। রাজধানীতে ইমরত নির্মাণসামগ্রীও এই সড়ক দিয়ে সরবরাহ করা হয়। ফলে গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মালবাহী যানবাহন চলাচল করে। কিন্তু বছরের পর বছর সড়কের বিভিন্ন স্থান ভেঙে থাকলেও মেরামতের উদ্যোগ নেই।
সওজ সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সড়কটি ১০ লেনে উন্নীত করার উদ্যোগ নেওয়া হতে পারে। এ–সংক্রান্ত একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছে। একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে এবং প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে, নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকায় যাওয়ার জন্য সড়কের ওই অংশ অতিক্রম করতে পাঁচ থেকে ছয় মিনিট সময় লাগবে। সড়কের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আটটি আন্ডারপাস রাখা হবে। সেখান দিয়ে যানবাহন ও লোকজন চলাচল করতে পারবে।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সড়ক ও জনপথ ঢাকা বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আহাদ উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, সড়কটি দ্রুত মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হবে। সড়কটি ২ লেন থেকে ১০ লেনে উন্নীতকরণের প্রস্তাবনা শিগগিরই পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। এর মধ্যে ছয় লেন থাকবে এক্সপ্রেসওয়ে এবং চার লেন দিয়ে স্থানীয় যানবাহন চলাচল করবে।
গুরুত্বপূর্ণ সড়কটির এই হাল নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, বছরের পর বছর সড়কটি ধ্বংস হয়ে পড়ে থাকলেও কোনো প্রতিকার করা হচ্ছে না। সড়কটি ১০ লেন বা ৮ লেন করার দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকলেও জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করতে হবে।