দলছুট সাত্তারের মাধ্যমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ ফিরে পাওয়ার ‘চেষ্টায়’ আ.লীগ

আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া
আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া

দেশের ১১টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাত্র একটিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে জয় পেয়েছিল আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী। সেটাও সেই ১৯৭৩ সালে। এরপরের ১০টি নির্বাচনের ৬টিতে বিএনপি, ৩টিতে লাঙ্গল ও ১টিতে স্বতস্ত্র প্রার্থী জয়ী হন। চারটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে হেরেছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থীরা।

আগামীকাল বুধবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচন। এতে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির দলছুট নেতা আবদুস সাত্তার ভূঁইয়াকে সমর্থন দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। সাংগঠনিকভাবে বিএনপি-দলীয় সাবেক এই সংসদ সদস্যের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণাতেও সরব কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।

রাজনৈতিক নেতা ও বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কৌশল হচ্ছে আবদুস সাত্তারের মাধ্যমে বিএনপির এ দুর্গে আঘাত করা। অর্থাৎ এই নির্বাচনে সাত্তারকে জয়ী করার মাধ্যমে তাঁকে আওয়ামী লীগে ভেড়ানো। যাতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার জয় সহজ হয়।

এই বক্তব্যের ইঙ্গিত পাওয়া যায় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেনের মন্তব্যেও। গত রোববার বিকেলে সরাইলে আবদুস সাত্তারের এক নির্বাচনী সভায় তিনি বলেন, ‘মা-বোনদের নিয়ে ইলেকশনের দিন কেন্দ্রে যাবেন। কেন্দ্রে গিয়ে লাইন ধরে দাঁড়াবেন। কলা (আবদুস সাত্তারের প্রতীক) তো পুষ্টি। নাম্বার ওয়ান প্রতীক। কলার ছড়ি (ছড়া) থেকে আগামী ইলেকশনে বের হয়ে আসবে নৌকা।’ সভায় তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কেন উকিল আবদুস সাত্তারের পক্ষে দাঁড়ালাম, শোনেন। বিএনপি তাঁকে টিস্যু পেপারের মতো ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ালেন।’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনটি আওয়ামী লীগ তাঁদের জোটের শরিক জাপাকে ছেড়ে দেন। তখন জাপার প্রার্থী হন দলটি কেন্দ্রীয় অতিরিক্ত মহাসচিব রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া। তাঁর সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন জাপার দুইবারের সংসদ সদস্য রেজাউলের শ্বশুর জিয়াউল হক ভূঁইয়া। সেবার ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া ৮৩ হাজার ৯৯৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. মঈন উদ্দিন। তিনি পান ৭৫ হাজার ৪১৯ ভোট। এর আগে আওয়ামী লীগের কোনো প্রার্থী এখানে এত ভোট পাননি।

এবারের উপনির্বাচনেও মঈন উদ্দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। দলের সিদ্ধান্তে তিনিসহ আওয়ামী লীগের তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। পরে সাত্তারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হন জাতীয় পার্টির দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধা। তবে তিনিও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। এর পর আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আবু আসিফ আহমেদকে সাত্তারের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠলেন। অবশ্য গত শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টা থেকে তাঁকে খোঁজ পাচ্ছে না পরিবার। প্রশাসনের লোকজনও তাঁকে উদ্ধার করতে পারেনি। সব মিলিয়ে সাত্তারের মাঠ এখন ফাঁকা।

সরাইল উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির পতন ঘটিয়ে এ আসনটিকে আগামী নির্বাচন থেকে নৌকার উপযোগী করে তোলা তাঁদের লক্ষ্য। এজন্য দলের ভেতরের সব দ্বন্দ্বকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। আওয়ামী লীগ এখানে ঐক্যবদ্ধ।

সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাজমুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এমন কোনো দল নয় যে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে নিবে। আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া একজন প্রবীণ রাজনৈতিক ও আইনজ্ঞ ব্যক্তি। এখানে আমাদের কোনো প্রার্থী না থাকায় আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে তাঁর পক্ষে কাজ করছি। আগামী নির্বাচনে আমরা এখানে অবশ্যই নৌকা প্রতীকের প্রার্থী দেব।’