গরমের সঙ্গে বেড়েছে লোডশেডিং, হাঁসফাঁস 

  • চাহিদার তুলনায় ৩০ থেকে ৩২ শতাংশ কম বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। 

  • গাজীপুর মহানগরের চেয়ে গ্রামের অবস্থা আরও নাজুক। 

  • জ্বালানি তেল ও গ্যাস–সংকটের কারণে এমন পরিস্থিতি হয়েছে।

লোডশেডিং

গরমে এমনিতেই অতিষ্ঠ মানুষ। তার ওপর বেড়েছে লোডশেডিং। দুই সপ্তাহ ধরে গাজীপুরে বিদ্যুতের আসা–যাওয়া চলছে। এ সংকটের কারণ হিসেবে জ্বালানি তেল ও গ্যাস–সংকটকে দুষলেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা।

গাজীপুরে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি–১–এর নবনিযুক্ত জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক আবুল বাশার (আজাদ) জানালেন, গাজীপুরে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে কম। প্রতিদিন ৮০ থেকে ৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম পাওয়া যাচ্ছে। যার কারণে লোডশেডিং বেড়েছে।

বিদ্যুৎ পরিস্থিতির খবর জানতে গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা দেড়টার দিকে গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১–এর কার্যালয়ে গিয়ে জানা গেল, নতুন জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপকের যোগদান উপলক্ষে বৈঠক চলছে। এ সময় বাইরে ছিল কাঠফাটা রোদ আর প্রচণ্ড গরম। সেবাপ্রার্থী অনেকেই বাইরে অট্টালিকার ছায়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন মধ্যবয়সী গাজীপুর মহানগরের মজলিশপুর এলাকার বাসিন্দা আফজাল মণ্ডল। তিনি একটি মিটার পরিবর্তনের আবেদন করতে এসেছেন।

জেলাটিতে প্রতিদিন চাহিদার তুলনায় ৮০ থেকে ৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম পাওয়া যাচ্ছে।

লোডশেডিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে আফজাল বলেন, ‘শুনেছিলাম কয়লা ফুরিয়ে গিয়েছিল, তাই বিদ্যুৎ থাকত না। এরপর আবার শুনলাম কয়লা এসেছে। এরপর বিদ্যুৎও ভালোই পেয়েছিলাম। কিন্তু দুই সপ্তাহ ধরে আবার লোডশেডিং বেড়েছে। এখন কী সমস্যা, সেটিও জানি না। লোডশেডিং আর গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাজীপুরের বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ দিনে চাহিদার তুলনায় ৩০ থেকে ৩২ শতাংশ কম বিদ্যুৎ পাচ্ছে। অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ চাহিদার অর্ধেকে নেমে এসেছে। কোথাও কোথাও লোডশেডিং হচ্ছে ছয়–সাত ঘণ্টার বেশি।

এর ফলে গরমের মধ্যে অসহনীয় বিদ্যুৎ–বিভ্রাটে চরম কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। গাজীপুর মহানগরের চেয়ে গ্রামের অবস্থা আরও নাজুক। গ্রামের বাসিন্দারা জানান, কয়েক দিন ধরে গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে লোডশেডিং। নিয়ম করে দুপুরে এক ঘণ্টা, বিকেলে ৩০ মিনিট, সন্ধ্যায় আবার ৩০ মিনিট বিদ্যুৎ থাকছে না। রাতেও কয়েকবার বিদ্যুৎ চলে যায়।

কয়েকটি গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অনেক এলাকায় দিনের বেলায় বিদ্যুৎ থাকে না বললেই চলে। সন্ধ্যার দিকে বিদ্যুৎ এলেও কিছুক্ষণ পর চলে যায়। লোডশেডিংয়ের কথা বলতে গিয়ে কালিয়াকৈর উপজেলার মধ্যপাড়া এলাকার আবুল কাশেম বলেন, গত বুধবার সন্ধ্যায় একবার, রাত ১২টার দিকে একবার, এরপর রাত আড়াইটার দিকে আবারও বিদ্যুৎ চলে যায়।

একই বর্ণনা দেন উপজেলার ভান্নারা এলাকার বাদশা মিয়া। তিনি বলেন, রাত পৌনে তিনটার দিকে একবার, আবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে বিদ্যুৎ চলে যায়। গ্রাম দুটিতে গতকাল বিদ্যুৎ পরিস্থিতির খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ গেছে তিন থেকে চারবার। একবার বিদ্যুৎ চলে গেলে এক ঘণ্টার আগে কখনো আসে না।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসনের ভাওয়াল সম্মেলনকক্ষে জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমানের সভাপতিত্বে গাজীপুরে সেবা ডিজিটাইজেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। জুম প্ল্যাটফর্মে যোগ দিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিচ্ছিলেন এটুআইয়ের প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ুন কবীর। তাঁর বক্তব্য চলার সময় হঠাৎ চলে যায় বিদ্যুৎ। এতে তাঁর সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে বিকল্প বিদ্যুৎ চালু করে অনুষ্ঠান শেষ করা হয়।

গাজীপুর মহানগরের কোনাবাড়ী জরুণ এলাকার বাসিন্দা মোখলেছুর রহমান গতকাল দুপুরে জানান, গত ১২ ঘণ্টায় ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। এর মধ্যে কিছুদিন বিদ্যুতের সমস্যা কমে গিয়েছিল। কিন্তু এক সপ্তাহ ধরে আবারও সমস্যা হচ্ছে।

মোখলেছুর রহমান বলেন, ‘বুধবার রাত আটটার দিকে কারখানা থেকে বাসায় গিয়ে দেখি বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুৎ আসে রাত সোয়া নয়টার দিকে। রাতের খাওয়া শেষে ১১টার দিকে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছি, এমন সময় আবারও বিদ্যুৎ চলে যায়। রাতে এমন আরও কয়েকবার হয়েছে। এরপর ফজরের আজান শুনে ঘুম ভেঙে দেখি বিদ্যুৎ নেই। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছি।’

গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে প্রতিদিন বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৪০০ থেকে ৪৫০ মেগাওয়াট। তার বিপরীতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে ৩০০ থেকে ৩১০ মেগাওয়াট। গতকাল গাজীপুরে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ৩৯৬ মেগাওয়াট। ওই চাহিদার বিপরীতে পাওয়া গেছে ৩১৩ মেগাওয়াট। আর আগের দিন ৪০০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে সরবরাহ ছিল ৩৩০ মেগাওয়াট।

গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১–এর জ্যেষ্ঠ মহাব্যবস্থাপক আবুল বাশার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এখানে নতুন যোগদান করেছেন। চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ কম পাওয়ায় কোনো কোনো এলাকায় লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। জ্বালানি তেল ও গ্যাস–সংকটের কারণে এমন পরিস্থিতি হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।