নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায় একটি বিদ্যালয়ের ক্লাস চলাকালে হঠাৎ একের পর এক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। আজ রোববার উপজেলার চালাকচর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। চিকিৎসকেরা বলছেন, শিশুরা গণমনস্তাত্ত্বিক রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছয়জন মাথাব্যথা, শরীর কাঁপা, দুর্বলতা, দাঁতে দাঁত লেগে যাওয়ার মতো অসুস্থতা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছে। এ ঘটনায় তিন দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাশেদুল হাসান মাহমুদ বলেন, বেশি অসুস্থ হয়ে পড়া ছয়জন শিক্ষার্থীকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তাদের সবাই মেয়ে। গণমনস্তাত্ত্বিক রোগ (ম্যাস হিস্টিরিয়া) নামে একটি রোগে তারা আক্রান্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাধারণত মানসিক ও আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে এ ধরনের রোগ হয়।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদ্যালয়টিতে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ২৫০ জন শিক্ষার্থী আছে। গত বৃহস্পতিবার ক্লাস চলাকালে ছাত্রীরা অসুস্থ হতে শুরু করে। ওই দিন এক ছেলেসহ মোট নয়জন অসুস্থ হয়। তাদের প্রাথমিক সেবা দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকার পর আজ সকালে বিদ্যালয়ের মাঠে অ্যাসেম্বলি শুরু হয়। অ্যাসেম্বলিতে জাতীয় সংগীতের সময়ই তিন ছাত্রী মাথা ঘুরে পড়ে যায়। তাদের কার্যালয়ে নিয়ে মাথায় পানি দিয়ে ও তরল খাবার খাইয়ে সুস্থ করে তোলা হয়। পরে ক্লাস শুরু হয়।
শিক্ষকেরা জানান, ক্লাস শুরু হওয়ার পর একজন, দুজন করে শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হতে শুরু করে। এভাবে ৩০ জন অসুস্থ হওয়ার পর বিদ্যালয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তাদের সবার অসুস্থতার ধরন প্রায় একই—মাথাব্যথা, শরীর কাঁপা, দুর্বলতা ও দাঁতে দাঁত লেগে যাওয়া ইত্যাদি।
শিক্ষার্থীদের অসুস্থতার খবর তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রেজাউল করিমকে জানানো হয়। ঘটনা শুনে তিনি দ্রুত উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাশেদুল হাসান মাহমুদকে নিয়ে বিদ্যালয়ে আসেন। এ সময় পাঁচজন চিকিৎসক ও নার্সের সহায়তায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের সেবা দেওয়া হয়।
চালাকচর বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোস্তফা হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার অসুস্থ হওয়া ৯ শিক্ষার্থীর বাড়িতে গিয়ে তাঁরা খোঁজখবর নিয়েছেন। কারণ অনুসন্ধানের জন্য তাঁদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন, ওই দিন অসুস্থ হওয়া শিক্ষার্থীদের অধিকাংশই বাড়ি থেকে কিছু না খেয়ে বিদ্যালয়ে এসেছিল। এ ছাড়া ওই দিন তাপমাত্রাও বেশি ছিল। আজ আবার ৩০ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিন দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
ইউএনও মো. রেজাউল করিম বলেন, বিদ্যালয়টিতে অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের অবস্থার উন্নতি হয়েছে। তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজখবরও রাখা হচ্ছে। বিদ্যালয়ে এসে শিক্ষার্থীদের একের পর এক অসুস্থ হওয়ার কারণ অনুসন্ধানে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি কমিটি করা হয়েছে। একই সঙ্গে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যাতে সকালে বাড়ি থেকে নাশতা করে এবং দুপুরের খাবার সঙ্গে নিয়ে আসে, সেটা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।