কালাইয়ে বিএনপির বিরুদ্ধে পুলিশের ‘গায়েবি’ মামলা, সব সাক্ষী আ.লীগের

জয়পুরহাট জেলার মানচিত্র
জয়পুরহাট জেলার মানচিত্র

জয়পুরহাটের কালাই থানায় বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গত বৃহস্পতিবার একটি বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে মামলা করেছে পুলিশ। মামলার এজাহারে বিএনপির দলীয় কার্যালয় থেকে ২টি ককটেল, ২১টি বাঁশের লাঠি ও ৭টি কাঠের বাটাম জব্দের কথা উল্লেখ করা হয়। মামলায় যাঁদের সাক্ষী করা হয়েছে, তাঁরা সবাই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী।

কালাই থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আল-ইমরান বাদী হয়ে উপজেলা বিএনপি ও যুবদলের ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৭০-৮০ জনকে আসামি করে মামলাটি করেন।

বিএনপির নেতা-কর্মীদের দাবি, এটি ‘গায়েবি’ মামলা। ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে লোকসমাগম ঠেকাতে তাঁদের হয়রানি করতে এ মামলা করা হয়েছে। মামলা-হামলা করে রাজশাহীর সমাবেশে লোকসমাগম ঠেকানো যাবে না।

মামলার এজাহারে বাদী এসআই আল-ইমরান উল্লেখ করেন, ২৩ তারিখ রাতে তিনি এলাকায় টহল দিচ্ছিলেন। রাত সাড়ে ১০টার দিকে কালাই পৌরসভার পাঁচশিরা বাজারে থাকতে তিনি খবর পান, রাজশাহী ও ঢাকার সমাবেশ সফল করতে উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে গোপন বৈঠক করছেন দলটির নেতা-কর্মীরা। তাঁরা সেখানে সরকারি স্থাপনায় নাশকতার পরিকল্পনাও করছিলেন। তিনি সেখানে গিয়ে দেখেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা নিজেদের মধ্যে মারধর করছে। বিষয়টি তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান। এরপর রাত ১১টার দিকে থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে লাঠিপেটা করে পরিস্থিতি শান্ত করে। পরে বিএনপির কার্যালয় তল্লাশি করে ২টি ককটেল, ২১টি বাঁশের লাঠি ও ৭টি কাঠের বাটাম জব্দ করা হয়।

কালাই পৌর বিএনপির আহ্বায়ক মো. সাজ্জাদুর রহমান তালুকদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ মামলাটি গোপন রেখেছিল। আমরা গতকাল বিষয়টি জানতে পেরেছি। মামলার এজাহারে যে তারিখ ও সময় উল্লেখ করা হয়েছে, ওই দিন দলীয় কার্যালয়ে কোনো সভা হয়নি। এটি গায়েবি মামলা। রাজশাহীর সমাবেশে জনস্রোত ঠেকাতে আমাদের নামে গায়েবি মামলা দিয়েছে পুলিশ।’

বোড়াই এলাকার আলী আকবর (৫০), সাংকলই পূর্ব পাড়া এলাকার মো. ছানোয়ার হোসেন (৪২), কালাই বাজার এলাকার মো. হেলাল উদ্দিন মোল্লা (৫৫), থুপসাড়া এলাকার মো. মামুনুর রশীদ (৪০) ও কালাই দোকানদারপাড়া এলাকার মো. আসাদুজ্জামান নয়নকে (৩৭) ওই মামলার সাক্ষী করা হয়েছে। এজাহারে তাঁদের ‘পথচারী’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাঁচজন সাক্ষীর সবাই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। তাঁদের মধ্যে আলী আকবর আহাম্মেদাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, ছানোয়ার হোসেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি, হেলাল উদ্দিন পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান, মামুনুর রশীদ কালাই পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং আসাদুজ্জামান আওয়ামী লীগের কর্মী। তিনি কালাই পৌরসভার মেয়র রাবেয়া সুলতানার দেবর। মামলার বিষয়ে সাক্ষীরা কেউ কথা বলতে চাননি।

কালাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, কালাইয়ে বিএনপি ও যুবদলের নেতা-কর্মীরা নাশকতার পরিকল্পনা করছিলেন। তাঁদের দলীয় কার্যালয় থেকে ককটেল, বাঁশের লাঠি ও কাঠের বাটাম জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের তৎপরতা অব্যাহত আছে।

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যক্ষ সামছুল আলম প্রথম আলোকে বলেন, জয়পুরহাট সদর, পাঁচবিবি ও কালাই থানায় তাঁদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও সাজানো মামলা করা হয়েছে। ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীর বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে এসব মিথ্যা মামলা দিয়ে নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, যত মামলা-হামলা করা হোক, বিভাগীয় সমাবেশের জনস্রোত ঠেকানো যাবে না। তিনি মিথ্যা ও সাজানো মামলা দেওয়ায় ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।