‘এমপি হওয়া ছলডাক ফেল দেকাচ্চে, এমপি হবার দিচ্চে না’

আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলম
ছবি: প্রথম আলো

বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে আলোচিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন ওরফে হিরো আলমের পরাজয় মেনে নিতে পারছেন না তাঁর সমর্থকেরা। সমর্থকদের দাবি, হিরো আলম নির্বাচনে হারেননি। ফলাফল পাল্টে তাঁকে হারানো হয়েছে। এ জন্য ফলাফল বাতিলের দাবিও করেন তাঁরা।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে সমর্থকেরা হিরো আলমের সঙ্গে দেখা করে ঘোষিত ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে তাঁকে ‘জনতার এমপি’ ঘোষণা দেন। এ সময় হিরো আলম সমর্থকদের সান্ত্বনা দেন এবং ফলাফল বাতিল চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করার কথা বলেন।

সকালে কাহালুর কালাই ইউনিয়নের পিলকুঞ্জ ফকিরপাড়ার ভোটার আনসার আলী শরীরে একতারা প্রতীকের লিফলেট পেঁচিয়ে হিরো আলমের সঙ্গে দেখা করতে আসেন। এ সময় তিনি হিরো আলমকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন। তিনি বলেন, ‘হামি গরিব, অভাবী মানুষ। ভাইয়ের জন্য জীবন দিয়ে খাটিছি। দুই কেন্দ্রেই তাঁক বহু ভোটে পাস করে দিচি। ম্যালা কেন্দ্রত একতারা পাস। তাহলে ভাই ফেল করবি ক্যান? ভাইকে ওরা ষড়যন্ত্র করে ফেল করে দিচে।’

মুরইল গ্রামের বানেচা বেগম বলেন, ‘ম্যালা নেতা-খ্যাতাক ভোট দিচি। কোনো উপকার পাইনি। হিরো আলম গরিবের ছল, হামাকের ছল। সগলি হামরা তাক ভোটটা দিনু। এমপি হওয়া সেই ছলডাক ওরা ফেল দেকাচ্চে, এমপি হবার দিচ্চে না।’

কাহালু সদরের তরুণ ভোটার আর কে রাব্বী বলেন, তরুণদের প্রায় সবাই হিরো আলমের পক্ষে কাজ করেছেন। কাহালুর সব কেন্দ্রে বিপুল ভোটে পাস করেছেন হিরো আলম। নন্দীগ্রামের দু-একটি কেন্দ্রে ট্রাক বা কুড়াল প্রতীকের কাছে হেরেছেন। কমপক্ষে ৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে হিরো আলমের জেতার কথা।

নন্দীগ্রাম উপজেলার ত্রিমোহনী গ্রামের আমজাদ হোসেন সকালে হিরো আলমকে জড়িয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বলেন, ‘এত দিন শুনচি ভোট চুরি-ডাকাতি হয়। দিনের ভোট রাতত হয়। এখন দেকিচ্চি ভোট ভালোভাবে শ্যাষ হলেও ফল ছিনতাই হয়।’

বৃহস্পতিবার বিকেলে বগুড়া জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে এসে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল সংগ্রহ করেন হিরো আলম।

এদিকে ফল পাল্টানোর অভিযোগ খতিয়ে দেখতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। বৃহস্পতিবার টেলিফোনে বগুড়ার জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মাহমুদ হাসানকে এ নির্দেশ দেন। এ ছাড়া প্রিসাইডিং কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরিত কেন্দ্রভিত্তিক ঘোষিত ফলাফলও পাঠানোর নির্দেশ দেন সিইসি।

এদিকে বিকেলে জেলা নির্বাচন কার্যালয়ে এসে কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফল সংগ্রহ করেছেন হিরো আলম। এ সময় তিনি বলেন, ‘ফলাফল বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে রিট করব। এ জন্য কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের কপি সংগ্রহ করেছি। ফলাফলে অনেক গরমিল পেয়েছি।’

হিরো আলমের অভিযোগ, নন্দীগ্রাম উপজেলা প্রশাসনের স্থাপিত নির্বাচন কমিশনের অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে যখন ফলাফল ঘোষণা চলছিল, তখন ৪৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ১ থেকে ৩৯টি কেন্দ্রের ফলাফল কেন্দ্রভিত্তিক ঘোষণা করা হয়। এরপর ফলাফল ঘোষণায় বিরতি দেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর ১০টি কেন্দ্রের ফল কেন্দ্রভিত্তিক ঘোষণা না করেই জাসদের প্রার্থীকে হঠাৎ বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।

বগুড়া-৪ উপনির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী এ কে এম রেজাউল করিম তানসেনের কাছে মাত্র ৮৩৪ ভোটের ব্যবধানে হেরে গেছেন হিরো আলম। বেসরকারিভাবে ঘোষিত ফলাফলে ২০ হাজার ৪০৫ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে জয়ী হন রেজাউল করিম (মশাল)। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আশরাফুল হোসেন (একতারা) পেয়েছেন ১৯ হাজার ৫৭১ ভোট।

নির্বাচনের ফল পাল্টানোর অভিযোগ তুলে হিরো আলম রাতে বগুড়া শহরতলির এরুলিয়ায় নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে তিনি ভোটের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘ভোট চুরি হয়নি, ফলাফল ছিনতাই হয়েছে। ন্যায়বিচার পেতে উচ্চ আদালতে যাব।’