প্রতিপক্ষের ঘরবাড়িতে হামলা চালিয়েছে নিহতের পক্ষের লোকজন। আজ সোমবার পাবনার হিমাইতপুর ইউনিয়নে
প্রতিপক্ষের ঘরবাড়িতে হামলা চালিয়েছে নিহতের পক্ষের লোকজন। আজ সোমবার পাবনার হিমাইতপুর ইউনিয়নে

পাবনায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় মামলা, প্রতিপক্ষের লোকজন বাড়িছাড়া

পাবনায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে জালাল উদ্দিন (৪০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে নিহত ব্যক্তির ভাই লাবু হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেছেন। মামলায় ২৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।

এদিকে ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। কয়েকটি বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে নিহত ব্যক্তির প্রতিপক্ষের লোকজন বাড়িছাড়া হয়েছেন।

জেলা সদরের হিমাইতপুর ইউনিয়নে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি দুইভাবে বিভক্ত হয়ে আছে। একপক্ষে নেতৃত্ব দেন ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সদস্য মুন্তাজ আলী। অন্য পক্ষে রয়েছেন ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাসেম। গত শুক্রবার রাতে এলাকার একটি ইসলামি জলসায় কর্তৃত্ব নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বাগ্‌বিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। এর জের ধরেই পরদিন শনিবার সকালে ইউনিয়নের বেতেপাড়া গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষে জালাল উদ্দিন নিহত হন। তিনি ইউনিয়নের কাজীপাড়া গ্রামে শুকুর আলীর ছেলে ও আবুল হাসেমের সমর্থক।

স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘটনার পর থেকেই আবুল হাসেমের সমর্থকেরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তাঁরা প্রতিপক্ষের কিছু বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। কয়েকটি দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করেন। একটি বাড়ি থেকে চারটি গরু ছিনিয়ে নিয়ে যান। এতে পুরো এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে প্রতিপক্ষের লোকজন বাড়িছাড়া হন।

আজ সোমবার দুপুরে সরেজমিন ইউনিয়নের বেতেপাড়া গ্রামে দেখা যায়, পাবনা মানসিক হাসপাতালের দেয়াল শেষ হলেই গ্রামটি শুরু। পুরো গ্রামেই সুনসান। মানুষের চলাচল খুব কম। দুই–চারজন নারী বাইরে ঘুরছেন। পুরুষ মানুষের তেমন দেখা নেই। যাঁরা আছেন, তাঁদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ।

আখলিমা খাতুন নামের এক নারী বলেন, সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকেই তাঁরা আতঙ্কের মধ্যে আছেন। মাঝেমধ্যে মহড়া চলছে। ভাঙচুর চলছে। ফলে ভেতর–ভেতর অনেক বাড়ির পুরুষেরাই বাড়িছাড়া।

এ প্রসঙ্গে জানতে মুন্তাজ আলী ও আবুল হাসেমের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কাউকেই পাওয়া যায়নি। দুজনের মুঠোফোন বন্ধ রয়েছে।

পাবনা জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আইনজীবী মাসুদ খন্দকার বলেন, ‘এলাকাটিতে দীর্ঘদিন ধরেই দুই পক্ষের মধ্যে ব্যক্তিগত বিরোধ রয়েছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। রাজনৈতিক কোনো বিষয় থাকলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুস সালাম বলেন, সংঘর্ষ ও নিহত হওয়ার ঘটনার পর থেকেই এলাকাটি বিশেষ নজরদারিতে রাখা হয়েছে। পুলিশি টহল জোরদার করা হয়েছে। ঘটনায় নিহত ব্যক্তির ভাই বাদী হয়ে মামলা করেছেন। তবে মামলার আসামিরা আতঙ্কেই বাড়িছাড়া হয়ে আছেন। তাঁদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে। সংঘর্ষের বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।