সুন্দর জীবনের আশায় দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়ায় পাড়ি দিয়েছিলেন দিদারুল ইসলাম (সালমান)। দালালের মাধ্যমে যেতে অনেক কষ্ট করতে হয় তাঁর। মাস তিনেক আগে একটি কাজ পেয়ে নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু প্রবাসে যাওয়ার পর থেকে আলসার ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হন। অসুস্থ হওয়ার খবরে দেশে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করেছিলেন স্বজনেরা; কিন্তু এর আগেই মারা গেছেন তিনি।
আজ বুধবার সকালে কম্বোডিয়ায় মারা গেছেন দিদারুল ইসলাম। কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশের দূতাবাস না থাকায় লাশ দেশে আনার সম্ভাবনা না দেখে সেখানেই দাফনের জন্য অনুমতি দিয়েছেন স্বজনেরা। দিদারুল ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার আঠারবাড়ী ইউনিয়নের খালবলা গ্রামের মো. সিরাজুল ইসলামের ছেলে।
দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে দিদারুল ছিলেন মেজ। স্নাতক তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত পড়ার পর আর পড়ালেখা করেননি। বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে কম্বোডিয়ায় যাওয়ার মনস্থির করেন। প্রায় ছয় লাখ টাকা খরচ করে স্থানীয় এক দালালের মাধ্যমে কম্বোডিয়ায় যাওয়ার জন্য গত ১ ফেব্রুয়ারি দেশ ছাড়েন। মালয়েশিয়া হয়ে কম্বোডিয়ায় যান তিনি।
পরিবারের সদস্যরা জানান, দিদারুলকে কম্পিউটার অথবা সুপারশপে কাজ দেওয়ার কথা বলা হলেও তাঁকে একটি পোশাক কারখানায় কাজ দেওয়া হয়। এক মাস কাজ করার পর কোম্পানি থেকে বের করে দেওয়া হয়। এরপর কাজহীন থাকার পর নান্দাইলের কানুরামপুর এলাকার একজনের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে তিন মাস আগে আরেকটি পোশাক কারখানায় কাজ পান। এর পর থেকে ভালো কিছুর আশা করছিলেন। কিন্তু ১৫ দিন আগে হঠাৎ শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসকের কাছে যান। আলসার ধরা পড়ার পর চিকিৎসায় কোনো পরিবর্তন হচ্ছিল না। চার দিন আগে কিডনি জটিলতা দেখা দেয়। এর মধ্যে ১৪ অক্টোবর দেশে ফিরিয়ে আনতে বিমানের টিকিটও কাটেন স্বজনেরা। কিন্তু অবস্থা বেশি খারাপ হওয়ায় আনা সম্ভব হয়নি। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে স্বজনেরা দিদারুলের মৃত্যুর খবর পান।
দিদারুলের বড় ভাই রিয়াজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সুন্দর জীবনের আশায় দিদারুল বিদেশে গিয়েছিলেন। তাঁকে শেষবারের মতো দেখতেও পেলেন না। স্থানীয় দালাল কাজ দেওয়ার কথা বলে নিয়ে গিয়েছিলেন, বাস্তবে কিছুই পাননি। খাবারের অনিয়ম করায় গ্যাস্ট্রিক থেকে আলসার ধরা পড়ে। লাশ আনার জন্য যোগাযোগ করেছিলেন। কিন্তু কম্বোডিয়ায় বাংলাদেশের দূতাবাস নেই। তাই সেখানেই লাশ দাফনের জন্য অনুমতি দেন।
দিদারুলের চাচাতো ভাই আজহারুল ইসলাম বলেন, ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে চাচা-চাচি কাঁদতে কাঁদতে পাগলপ্রায়। চাচিকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। সুন্দর জীবনের আশায় প্রবাসে গেলেও তাঁর লাশ শেষবারের মতো দেখতে না পাওয়ার আক্ষেপ সারা জীবন বয়ে বেড়াতে হবে।