অন্যের জমি কৌশলে নিজের করে নেওয়ার নেশা ছিল ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর। কর্তৃত্ব ধরে রাখতে দলীয় পদে বসান স্বজনদের।
নিয়োগ, গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) কর্মসূচি, কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) কর্মসূচি, উন্নয়ন প্রকল্প—এমন কোনো খাত নেই, যেখান থেকে গত ১৬ বছর টাকা নেননি তিনি। নানা কৌশলে ও নামমাত্র মূল্যে অন্যের জমি নিজের নামে করেছেন। ক্ষমতার অপব্যবহার করে সরকারি জমি নিজের করে সরকারের টাকায় উন্নয়নকাজ করিয়ে নিয়েছেন।
যাঁর বিরুদ্ধে এত অভিযোগ, তিনি বরগুনা-১ (সদর-আমতলী-তালতলী) আসনে পাঁচবারের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। ৩০ বছর ধরে বরগুনা জেলা আওয়ামী লীগের সর্বেসবা ছিলেন তিনি। এ সময় তিনি কখনো সাধারণ সম্পাদক, কখনো সভাপতির পদে আসীন ছিলেন। আত্মীয়স্বজনকে দলীয় পদে বসিয়ে এমন বলয় তৈরি করেছিলেন, যেখানে অন্যরা ছিলেন কোণঠাসা।
২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় শম্ভুর আয় ছিল ২ লাখ ১০ হাজার টাকা, ব্যাংকে জমা ছিল ৩ লাখ টাকা। তাঁর সম্পত্তির তালিকায় ছিল ৫৭ লাখ টাকার জমি, একতলা দালান বাড়ি ও দুটি টিনের ঘর। আর স্ত্রীর নামে সঞ্চয় ছিল ১২ লাখ টাকা ও একটি ফ্ল্যাট। ১৫ বছরের ব্যবধানে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হলফনামা অনুযায়ী, তাঁর আয় ৫৫ লাখ টাকার বেশি। নিজের নামে ব্যাংকে ৩ কোটি টাকার বেশি এবং স্ত্রীর নামে ১৫ লাখ টাকার বেশি জমা আছে। সঞ্চয়পত্র ও স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ নিজের নামে ৬৭ লাখ টাকার বেশি এবং স্ত্রীর নামে ৭৬ লাখ টাকার বেশি। কোটি টাকার বেশি দামের দুটি গাড়ি আছে। কৃষি-অকৃষি মিলিয়ে নিজের নামে কোটি টাকার জমি এবং স্ত্রীর নামে একটি ফ্ল্যাট বেড়ে দুটি হয়েছে। তবে স্থানীয়দের দাবি, তাঁর সম্পদ এর চেয়ে অনেক বেশি।
জমি দখলে ক্ষমতার অপব্যবহার
শম্ভুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি বরগুনা সদর উপজেলা পরিষদের সামনে সরকারের অধিগ্রহণ করা জমি নিজের দখলে নিয়েছেন। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) একটি দিঘির প্রায় অর্ধেক নিজের করে নেন। এই জমির পরিমাণ ৪৩ শতাংশ। দাম কয়েক কোটি টাকা। দিঘির এই অংশ ভরাট করে নতুন ভবন, প্লে গ্রাউন্ড, সড়ক ও ড্রেনেজ নির্মাণ, ল্যাম্পপোস্ট স্থাপনের কাজ করিয়েছেন পৌরসভার টাকায়। দিঘির বাকি অংশের সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করাতে তিনি জেলা পরিষদ থেকে ১ কোটি ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দের ব্যবস্থা করেন। সেই কাজ নিজস্ব ঠিকাদার দিয়ে করান। টাকার বড় অংশই তাঁর পকেটে যায়। একই কাজের জন্য তিনি ২০২২ সালে টিআর প্রকল্প থেকে ২ লাখ ৩১ হাজার ৮৩৩ টাকা বরাদ্দ নেন। এই স্থাপনা তাঁর এত প্রিয় ছিল যে তিনি এলাকায় এলে নিজের আমতলাপাড়ের বাড়িতে না থেকে এখানেই থাকতেন।
বরগুনা পাউবোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৬১-৬২ সালে পাউবো বাঁধ নির্মাণের জন্য উপজেলা পরিষদের সামনের ওই জমি অধিগ্রহণ করা হয়। পরে সেই জমিতে পরিষদের মসজিদের ব্যবহারের জন্য একটি দিঘি খনন করা হয়।
জেলা প্রশাসন ও পাউবোর কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, শম্ভু ২০০৯ সালে অধিগ্রহণ করা জমি তাঁর মায়ের দাবি করে অবমুক্তি বা ফেরত চেয়ে জেলা প্রশাসকের (ডিসি) কাছে আবেদন করেন। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালে ৪৩ শতাংশ জমি তাঁকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ভূমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী, অব্যবহৃত থাকলে আগের মালিক বা তাঁর ওয়ারিশরা সরকারের অধিগ্রহণ করা জমি ফেরত নিতে পারেন। তবে ক্ষতিপূরণ বাবদ নেওয়া সরকারের টাকা ফেরত দেওয়ার বিধান আছে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রধানের কাছে আবেদন করতে হয়। ওই সংস্থা এ-সংক্রান্ত অনাপত্তিপত্র (এনওসি) ডিসি কার্যালয়ে পাঠায়। ডিসি তা ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠান। সেখান থেকে মতামত আসার পর ডিসি আবেদনকারীর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের টাকা ফেরত নিয়ে জমি অবমুক্ত করার আদেশ দেন।
এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ভাষ্য, এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। ৮ থেকে ১০ বছর সময় লেগে যায়। কিন্তু ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু তিন বছরে জমিটি ফেরত পান।
তবে অধিগ্রহণ করা জমি আগের মালিককে ফেরত দেওয়ার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের ১৯৯৮ সালের এবং আপিল বিভাগের ২০০২ সালের পৃথক দুটি সিদ্ধান্ত আছে। সিদ্ধান্তে এসব জমি ফেরত দেওয়ার বিষয়ে মালিকদের দাবির এখতিয়ার রহিত করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এটি পালনে ব্যত্যয় দেখা যায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১০ সালের ১৬ জুন ভূমি মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব সারা দেশের ডিসি ও ভূমি অধিগ্রহণকারী অফিসপ্রধানদের কাছে একটি চিঠি দেন। তিনি আদালতের নির্দেশনা পালনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। শম্ভুর ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় হয়।
শম্ভুর জমিসংক্রান্ত বিষয়ে বরগুনা পাউবোর কার্যালয়ে পাওয়া চিঠিতে দেখা গেছে, পাউবোর তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী শম্ভুর জমি বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে তৎকালীন ডিসিকে চিঠি দেন। এর বাইরে জমি অবমুক্তির আবেদন, অনাপত্তিপত্রসহ অন্য কোনো নথি বরগুনা পাউবো দপ্তরে পাওয়া যায়নি।
এ ব্যাপারে বরগুনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি পাউবো থেকে নয়, ডিসি কার্যালয় থেকে হয়েছিল। তাই এখানে কোনো নথি নেই। পাউবোর অনাপত্তি লাগে, এমন তথ্য জানালে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই।’
বরগুনার ডিসি মোহাম্মদ শফিউল আলমকে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি এখানে নতুন। বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে জানতে হবে।’
শম্ভুর জমির নেশা
বরগুনা সদরের টাউন হল সেতুর উত্তর পাড়ের উঁচু প্রাচীরঘেরা বাড়িটি যে কারও নজরে পড়ে। ২১ শতাংশ জমির এই বাড়ির মালিক ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু। এর ১ শতাংশ তাঁর নিজের নামে, বাকি ২০ শতাংশ তাঁর দুই মেয়ের নামে। অভিযোগ আছে, ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে প্রকৃত মূল্যের চেয়ে কম টাকা দিয়ে তিনি জমিটি কিনেছেন। ওই জমির মালিক ছিলেন বিধান চন্দ্র শীল। যথাযথ দাম পেয়েছেন কি না, জানতে চাইলে তিনি সরাসরি কোনো জবাব দেননি। তিনি বলেন, ‘মনে অনেক কষ্ট।’
আমতলী পৌরসভার সাবেক মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিয়ার রহমানের কাছ থেকে তাঁর চাওড়া মৌজার ৫ শতাংশ জমি নামমাত্র দামে দলিল করে নেন শম্ভু। এ বিষয়ে মতিয়ার রহমান বলেন, সাবেক এমপি ব্যক্তিগত কার্যালয় করার জন্য নামমাত্র মূল্যে তাঁর কাছ থেকে জমিটি নেন।
তালতলী উপজেলার বড় নিশানবাড়িয়া মৌজার ১৫০ নম্বর খতিয়ানের ১৪ একর জমি প্রভাব খাটিয়ে দখল করার অভিযোগ আছে শম্ভু ও তাঁর ছেলে সুনাম দেবনাথের বিরুদ্ধে। জমির মালিকপক্ষের একজন ফারুক হোসেন বলেন, ‘ওই জমি আমরা নিলামে কিনি। নিলামের বিরুদ্ধে এক পক্ষ আদালতে মামলা করে। রায়ে জমিটি আমরা পাই। ২০২১-২২ সালের দিকে শম্ভু ও তাঁর ছেলেসহ তিনজন ১৪ একর জমির দলিল করেন। রাখাইন সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তিকে জমির মালিক বানিয়ে দলিলটি করেছিলেন তাঁরা। তবে বর্তমানে জমিটি আমাদের দখলে আছে।’
আমতলী পৌর শহরের পুরাতন লঞ্চঘাট এলাকায় পাউবোর অধিগ্রহণ করা ১২ শতাংশ জমি নিজের বাবার দাবি করে দখলে নেওয়ার অভিযোগ আছে শম্ভুর বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে বরগুনা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন, ২০১৩ সালে হাঁস-মুরগির খামার করার জন্য ৬ শতাংশ জমি ইজারা দেওয়া হয়েছিল। মেয়াদ ছিল তিন বছর। তবে সেটি আর নবায়ন করা হয়নি। জমিটি সাবেক সংসদ সদস্যের দখল থেকে মুক্ত করা হবে।
টিআর-কাবিখার টাকা আত্মসাৎ
অভিযোগ আছে, গত ১৬ বছরে এলাকায় টিআর, কাবিখা ও ৪০ দিনের কাজের যত প্রকল্প এসেছে, শম্ভু সিংহভাগ প্রকল্পে নামমাত্র কাজ করিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছেন। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০২১ ও ২০২২ সালে ছোট-বড় প্রায় ৪৩২টি প্রকল্পে ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল। তবে নামমাত্র কাজ হয়েছে। বেশির ভাগ অর্থ আত্মসাৎ করেছেন শম্ভু। প্রতিটি কাজের জন্য লাখে ২০ হাজার টাকা করে কমিশন আদায় করা হতো তাঁর নামে।
নথি ঘেঁটে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরে বরগুনা-১ আসনের তিনটি উপজেলায় এমপির বিশেষ বরাদ্দের আওতায় ১৮১টি প্রকল্পে তিন কিস্তিতে ১ কোটি ১৪ হাজার ৬৬৬ টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এর মধ্যে ১৮টি প্রকল্পে কিছু কাজ হলেও বাকিগুলোতে কোনো কাজ না করেই টাকা উঠিয়ে নেওয়া হয়।
স্থানীয় একাধিক ব্যক্তির অভিযোগ, শম্ভুর পছন্দের লোকজন ছিলেন এসব প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে। মূলত টাকা ভাগাভাগি নিশ্চিত করতে তাঁদের কাজগুলো দেওয়া হতো। ওই সময় বরগুনা সদর ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান গোলাম আহাদের একটি অডিও ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে তাঁকে বলতে শোনা যায়, বরাদ্দের অর্ধেক টাকা শম্ভুকে দিয়ে কাজ আনতে হয়। বাকি টাকা ভাগাভাগি হয় প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা লোকজনের মধ্যে। ফলে কাজ করার টাকা থাকে না।
২০২১-২২ অর্থবছরে টিআর, কাবিখা ও কাবিটার আওতায় ২৮০টি প্রকল্পে বরাদ্দ আসে শম্ভুর নামে। এর মধ্যে ২৩৩টি টিআর প্রকল্পে ১ কোটি ৭৫ লাখ ৯৯৯ টাকা এবং ৪৭টি কাবিখা বা কাবিটা প্রকল্পে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৯২৪ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এসব প্রকল্পের একটিতেও কাজ না করে টাকা তুলে নেওয়া হয়। আমতলী সরকারি কলেজ মাঠে বালু ফেলার প্রকল্প দেখিয়ে ২ লাখ টাকা তোলা হলেও ওই মাঠে কোনো ফেলা হয়নি। একই ঘটনা ঘটে ওই নুরুল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং আমতলী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠের ক্ষেত্রেও।
নিয়োগ-বাণিজ্য
২০১৮ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বরগুনায় সংবাদ সম্মেলন করে শম্ভুর নামে ২৪টি দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির। অভিযোগের মধ্যে অন্যতম ছিল নিয়োগ-বাণিজ্য। এতে বলা হয়েছিল, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী কাম দপ্তরি নিয়োগে প্রত্যেকের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা করে নিয়েছিলেন শম্ভু। পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগের সুপারিশে নিয়েছিলেন ১০ লাখ টাকা করে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের জন্য নেন ৭ থেকে ৮ লাখ টাকা করে। জেলা হাসপাতালের কর্মচারী নিয়োগে নিতেন ৫ থেকে ৭ লাখ টাকা করে।
নিয়োগ-বাণিজ্যের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়। বরগুনা সদরের আনোয়ার হোসেন নামের একজন অভিযোগ করেন, ‘বরগুনা সদরের গর্জনবুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে চাকরির জন্য স্কুল কমিটির সভাপতি আমার কাছ থেকে এমপিকে দেওয়ার কথা বলে ১৩ লাখ টাকা নেন। পরে আরেকজনের কাছ থেকে বেশি টাকা নিয়ে তাঁকে চাকরি দেওয়া হয়। আমার টাকা ফেরত পাইনি।’
দলে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব
ধীরেন্দ্র দেবনাথ নিজের প্রভাব বজায় রাখতে দলীয় নানা পদে স্বজনদের বসিয়েছেন। তাঁর স্ত্রী মাধবী দেবনাথ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, একমাত্র ছেলে সুনাম দেবনাথ জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক। ছেলের শ্বশুর অমল তালুকদার জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ, চাচাশ্বশুর সুবল তালুকদার প্রচার সম্পাদক।
ছোট ভায়রা সিদ্দিকুর রহমানকে বানিয়েছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান। সিদ্দিকুর যুবলীগ নেতা বাদশা হত্যা মামলার অন্যতম আসামি। তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি করে প্রভাব বিস্তার করা, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, টেন্ডারবাজিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
বরগুনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ হোসেন মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, ‘শম্ভু দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের উপেক্ষা করে তাঁর পরিবার ও অনুসারীদের বিভিন্ন পদে বসান। স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিপক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে দলীয় প্রার্থীদের হারিয়ে নিজের কর্তৃত্ব ধরে রাখেন। প্রতিবাদ করলে প্রতিহিংসার শিকার হতে হতো।’
দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি জন্য এলাকার মানুষের কাছে বিতর্কিত হলেও আওয়ামী লীগ দ্বাদশ নির্বাচনে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে মনোনয়ন দেয়। তবে দলের তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। এতে শোচনীয়ভাবে হেরে যান তিনি। ভোট পাওয়ার দিক দিয়ে তিনি তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা আত্মগোপনে চলে যান। গত সোমবার রাতে রাজধানীর উত্তরা এলাকা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। রাজধানীর নিউমার্কেট থানায় দায়ের করা ব্যবসায়ী আবদুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে গতকাল আদালতের মাধ্যমে ছয় দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এর আগে অবৈধভাবে ৫০০ কোটি টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। কমিশনের উপপরিচালক সিলভিয়া ফেরদৌস গত ১০ সেপ্টেম্বর এক চিঠিতে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, তাঁর ছেলে সুনাম দেবনাথ, স্ত্রী মাধবী দেবনাথ ও ছেলের স্ত্রী কাসপিয়া তালুকদারের সম্পদের হিসাব তলব করেছেন।