ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় গতকাল শনিবার দিনে বৃষ্টি ছিল কম। বৃষ্টি না হলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করেছিলেন এ উপজেলার বাসিন্দারা। কিন্তু গতকাল রাতভর বৃষ্টিতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। আজ রোববার সকাল নয়টা পর্যন্ত টানা বৃষ্টি হয়েছে।
বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে বলে জানান ধোবাউড়া সদর ইউনিয়নের জুগিরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা আলাল উদ্দিন (৬০)। তিনি বলেন, রাত থেকে দুই ফুটের মতো পানি বেড়েছে। গোয়ালঘরে এক ফুটের মতো পানি। দুটি গরু সরিয়ে নিতে উঁচু জায়গা খুঁজছিলেন তিনি।
গতকাল রাতভর ভারী বৃষ্টিতে উপজেলার সাতটি ইউনিয়নে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হয়েছে। নিম্নাঞ্চলে বৃদ্ধি পেয়েছে পানি, প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। পানিবন্দী মানুষের খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
ধোবাউড়া পোড়াকান্দুলিয়া সড়কে কথা হয় ধোবাউড়া সদর ইউনিয়নের পঞ্চনন্দপুর গ্রামের ফারুক মিয়ার (২৬) সঙ্গে। তিনি বলেন, এক রাতের বৃষ্টিতে অন্তত দুই ফুট পানি বেড়েছে।
আজ সকাল নয়টার দিকে গিয়ে দেখা যায়, ধোবাউড়া সদর ইউনিয়নের বলরামপুর চৌরাস্তা থেকে বাগড়া সড়ক তলিয়ে গেছে। সেখানে ধোবাউড়া সদর ইউনিয়ের বাঘড়া গ্রামের মজিবুর রহমান (৫৫) বলেন, ‘গত রাত থেকে এ এলাকায় অন্তত চার ফুট পানি বেড়েছে। এ রকম বন্যা আগে দেখিনি।’
বলরামপুর গ্রামের সাজন মানকিন বলেন, রাতের বৃষ্টির কারণে পানি বেড়েছে। মানুষ ও গবাদিপশু পানিতে আটকা। ফসল-মাছ সব নষ্ট হয়ে গেছে।
আবু হনিফা (৫৮) নামের এক নারী বলেন, ‘রাইতের বৃষ্টিতে আমরা কষ্টে পড়ছি বেশি। তিনটা গরু নিয়ে বিপদে পড়ছি। গরুগুলো কই নিবাম, বুঝতেছি না। পানি আরও বাড়বে।’
এদিকে আজ রোববার সকালে ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়ার বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে।
আজ সকাল আটটার দিকে ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত শারমিন বলেন, গতকাল পানি কিছুটা কমলেও রাত থেকে টানা বৃষ্টিতে মারাত্মক অবস্থা শুরু হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে কেউ আশ্রয় নিয়েছেন কি না, সে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী খাদ্যসামগ্রীর ৩৫০টি প্যাকেট করা হয়েছে। সেগুলো বিভিন্ন ইউনিয়নে বিতরণ করা হবে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। গত শুক্রবার দিনভর বৃষ্টি চলে। টানা বর্ষণে ধোবাউড়া উপজেলার দক্ষিণ মাইজপাড়া, গামারীতলা, ঘোষগাঁও ইউনিয়নের বিভিন্ন পয়েন্টে নেতাই নদের বাঁধ ভেঙে ও পাহাড়ি ঢলে গ্রাম প্লাবিত হতে শুরু করে। শুক্রবার রাতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। পুরো উপজেলা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। এর মধ্যে দক্ষিণ মাইজপাড়া ও ঘোষগাঁও ইউনিয়নের অবস্থা বেশি খারাপ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, স্বাধীনতার পর ১৯৮৮ সালের বন্যাকে সবচেয়ে ভয়াবহ মনে করা হতো। কিন্তু এবারের পানি সবকিছু ছাড়িয়ে গেছে। হালুয়াঘাট ও ধোবাউড়া উপজেলার বন্যা ও অতিবৃষ্টির কারণে ফুলপুর ও তারাকান্দা উপজেলাতেও পানি ঢুকেছে। নিচু এলাকায় তলিয়ে গেছে ফসল।