ভোর পাঁচটা থেকে যানজট ছড়িয়েছে বনানী পর্যন্ত

আজ বুধবার সকাল সোয়া সাতটার দিকে এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের কল। বললেন, ‘ভাই, সড়ক নিয়া আর পারতেছি না। আপনারা কিছু একটা করেন। সড়কের আজকের অবস্থা আরও বেশি খারাপ। ভোর পাঁচটা থেকেই জ্যাম চইল্যা গেছে বনানী পর্যন্ত। একটু পর অফিস শুরু হইব। হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নামব। তারা কীভাবে চলাচল করব! মানুষের কী যে একটা ভোগান্তি!’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ট্রাফিক পুলিশের ওই সদস্য রাজধানীর উত্তরা এলাকার। আজ ভোর পাঁচটা থেকেই ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গীর যানজট চলে গেছে রাজধানীর বনানী পর্যন্ত। কোনো গাড়িই সামনে এগোতে পারছে না। এদিকে বেলা বাড়তেই সড়কে মানুষের আনাগোনা বাড়ছে। তাই গণমাধ্যমকে ভরসা ভেবে প্রতিবেদকের মুঠোফোনে কল করে এমনটা বলছিলেন তিনি।

এরপর কথা হয় সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় গত সোমবার ও গতকাল মঙ্গলবার সড়কে যানজট ছিল। দিনভর ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ। কিন্তু আজকের অবস্থা আরও বেশি খারাপ। আজ ভোর পাঁচটা থেকেই ময়মনসিংহমুখী সড়কের টঙ্গীর মিলগেট থেকে রাজধানীর বনানী এবং ঢাকামুখী সড়কের গাজীপুরের বোর্ডবাজার পর্যন্ত যানজট দেখা দিয়েছে। এতে সকাল থেকেই চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে মানুষ।
তাঁদের ভাষ্য, বিআরটি প্রকল্পের কাজের কারণে এমনিতেই ঢাকার আবদুল্লাহপুর থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়েছে। এর ওপর বিভিন্ন অংশ খানাখন্দে ভরা। সামান্য বৃষ্টি হলেই সেসব খানাখন্দে পানি জমে যায়। সড়কের পাশের নালাও নোংরা-আবর্জনায় প্রায় ভরা। এতে নালার পানি উপচে ওঠে সড়কে। তৈরি হয় যানজটের। সোমবারের টানা বৃষ্টিতে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। গতকালও সকালের দিকে বৃষ্টি হয়। এতে গতকালও যানজটের ভোগান্তি এড়ানো যায়নি। কিন্তু এর মাঝে সড়ক মেরামত না করায় আজ ভোর থেকেই দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট।

উত্তরার হাউস বিল্ডিং ট্রাফিক পুলিশ বক্সের পরিদর্শক সাজ্জাদ হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজ ভোর পাঁচটা থেকেই যানজট চলে গেছে প্রায় বনানী পর্যন্ত। গাজীপুর অংশে কোনো গাড়িই ঢোকাতে পারছি না। এভাবে রাস্তায় কাজ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। মানুষ না বুঝে আমাদের গালি দেয়।’

একইভাবে সড়কের পরিস্থিতি তুলে ধরে টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকার পরিদর্শক শেখ শাহাদাত আলী বলেন, ‘রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ। এত করে বলার পরও প্রকল্পের কোনো লোক আমাদের কথা শোনেনি। তারা মিলগেটের অল্প একটু রাস্তা, সেটাও ঠিক করে দেয়নি। যানজট চলে গেছে বোর্ডবাজার পর্যন্ত।’

গত ১৫ আগস্ট উত্তরায় গাড়ির ওপর গার্ডার পড়ে পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনার পর থেকে বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণকাজ বন্ধ আছে। আজ সকাল সাড়ে আটটায় সরেজমিনে সড়কটির গাজীপুরের বিভিন্ন অংশে ইট, বালু, সিমেন্টসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী অগোছালোভাবে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এতে কোথাও কোথাও সড়ক সংকুচিত হয়ে পড়েছে। কোথাও তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। এসব খানাখন্দে জমে আছে পানি। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা টঙ্গীর মিলগেট এলাকায়। সেখানে গাড়ি চলছে এক লেনে। এর ওপর ওই লেনেও প্রচুর গর্ত, খানাখন্দ। এতে উভয়মুখী সড়কে দেখা দিয়েছে দীর্ঘ যানজট।

ভোগান্তির বিষয়ে জানতে গতকাল সন্ধ্যায় কথা হয় প্রকল্পের পরিচালক মহিরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, সড়কের স্থায়ী নির্মাণকাজ চলছে। নভেম্বরের দিকে কাজ শেষ হলে আর ভোগান্তি থাকবে না। সড়ক মেরামত করা হয়নি, ট্রাফিক পুলিশের এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময়ই যেখানে বেশি ভাঙা, সেখানে মেরামত করি। অনেক সময় বৃষ্টির কারণে আবার নষ্ট হয়ে যায়। তাই স্থায়ী কাজ করা হচ্ছে।’