বরিশাল নগরে শতবর্ষী দুটি জলাধার ভরাট করে সেখানে স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন স্থানীয় লোকজন। সোমবার দুপুরে নগরের হাসপাতাল সড়কের গুপ্ত কর্নারে এ কর্মসূচির আয়োজন করে সংক্ষুব্ধ বরিশালবাসী ও পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।
এ সময় বক্তারা বলেন, বরিশাল নগরের সব কটি খাল-পুকুর ও দিঘি একের পর এক ভরাটের পর স্থাপনা নির্মাণ করে নগরের সামগ্রিক পরিবেশকে বিপন্ন করা হচ্ছে। এসব জলাশয় ভরাট করার কাজ নির্বিঘ্নে চললেও প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর নির্বিকার। তাঁরা এ অবস্থা থেকে উত্তরণ চান।
বক্তারা বলেন, নগরে একসময় ২৪টি খাল ছিল। এর অধিকাংশই ভরাট করা হয়েছে। যেসব খাল অবশিষ্ট আছে, তা–ও দখলে-দূষণে বিপন্ন। নগরে একসময় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার দিঘি ও পুকুর থাকলেও নগরায়ণের অজুহাতে তাঁর অধিকাংশই ভরাট করা হয়েছে। বর্তমানে নগরের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের হাসপাতাল রোডে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের আওতাধীন মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের প্রাঙ্গণে থাকা ৩৩ শতাংশ পুকুর এবং ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিপুরের সীতারামের দিঘিটি ভরাটকাজ চলছে। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে বরিশাল নগর দ্রুত বিরান হয়ে মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে।
সমাবেশে বক্তব্য দেন বরিশালের প্রবীণ উন্নয়ন সংগঠক আনোয়ার জাহিদ, সাংস্কৃতিক সংগঠক শুভংকর চক্রবর্তী, উন্নয়নকর্মী আবদুল আউয়াল, কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের বরিশাল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক রনজিৎ দত্ত, বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি স্বপন খন্দকার, বরিশালের নদী খাল বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সদস্যসচিব কাজী এনায়েত হোসেন, বেলার বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন প্রমুখ।
পরে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার, সিটি করপোরেশনের মেয়র ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ বলেন, পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের পুকুর ভরাটের বিষয়টি তাঁকে জানানো হয়নি। এ সময় তিনি বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া এবং তাৎক্ষণিক পুকুরটি ভরাটকাজ বন্ধ রাখতে সিটি করপোরেশনের সচিবকে নির্দেশ দেন।
স্থানীয় লোকজন বলেন, গত বৃহস্পতিবার থেকে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের পুকুরটি বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। সেখানে নতুন ভবন নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে। এরই মধ্যে পুকুরটির অর্ধেকের বেশি বালু দিয়ে ভরাট করা হয়েছে।
জেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, এখানে একটি পাঁচতলা ভবন হবে। যেখানে ৫০ বেডের হাসপাতাল ছাড়াও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ ও সদর উপজেলা ভবন নির্মিত হবে।
এদিকে নগরের কাশিপুর বাজারসংলগ্ন সীতারামের দিঘির একসময় আয়তন ছিল ২ দশমিক ৯৮ একর। দখল হতে হতে এখন প্রায় এক একরে এসে ঠেকেছে দিঘি। অবশিষ্ট অংশটুকুও রাতের আঁধারে বালু ফেলে ভরাট করা হচ্ছে। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান আলী হোসেন এ বালু ফেলছেন।
আলী হোসেন বলেন, ওই দিঘি তিনি প্রয়াত আদম আলীদের কাছ থেকে কিনেছিলেন। এরপর তা তিনি অন্যদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। যাঁরা জমিটি কিনেছেন, তাঁরাই এখন বাড়ি করার জন্য সেটি ভরাট করছেন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী রফিকুল আলম বলেন, পরিবেশ আইন, ২০০০ অনুযায়ী কোনো পুকুর বা অন্য জলাশয় ভরাট দণ্ডনীয় অপরাধ। ব্যক্তিগত পুকুর বা দিঘি ভরাট করতে হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন প্রয়োজন।
রফিকুল আরও বলেন, হাসপাতাল রোডের পুকুর ভরাটের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরকে অবহিত করা হলেও তারা দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেয়নি। সীতারামের দিঘি ভরাটও বন্ধ করা হয়নি।
পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এ এইচ এম রাশেদ বলেন, হাসপাতাল রোডের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর যে পুকুর ভরাট করছে, সেটি ঠেকাতে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সীতারামের দিঘির বিষয়েও জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আদালতে মামলা করা হয়েছে। এরপরও ভরাট করা হলে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবেন।