সরকারি বরিশাল কলেজের মাঠে ভবন নির্মাণ বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করা হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে এ কর্মসূচি পালন করেন কলেজ মাঠ রক্ষা কমিটির সদস্য ও শিক্ষার্থীরা। কলেজ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ শেষে তাঁরা সমাবেশ করেন।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন কলেজ মাঠ রক্ষা কমিটির সভাপতি শাহ সাজেদা। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন মাঠ রক্ষা কমিটির সদস্যসচিব বাসদের বরিশাল জেলা সমন্বয়ক মনীষা চক্রবর্তী। বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য দেন তেঁতুলতলা মাঠ আন্দোলনের সংগঠক সৈয়দা রত্না, সমাজসেবক ও চিকিৎসক হাবিবুর রহমান।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, কলেজের পূর্ব পাশে বিকল্প স্থান থাকার পরও সরকারি বরিশাল কলেজের একমাত্র খেলার মাঠ নষ্ট করে ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। অথচ ২০০০ সালের খেলার মাঠ ও জলাধার সংরক্ষণ আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, খেলার মাঠের শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না বা সেটা ভাড়াও দেওয়া যাবে না। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ বিকল্প জমি নেই বলে অজুহাত দিয়ে একমাত্র খেলার মাঠ নষ্ট করে সেখানে বহুতল ভবন করার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু তাঁরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চান, এই সিদ্ধান্ত থেকে কলেজ প্রশাসনকে সরে আসতে হবে। না হয় তাঁরা ঐক্যবদ্ধভাবে এই সিদ্ধান্ত বদলাতে কঠোর আন্দোলনে যাবেন।
কলেজের অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন, ‘আমরা এর আগেও এই কলেজের পুকুরসহ অনেক ঐতিহ্য নষ্ট করে কথিত উন্নয়ন করার পাঁয়তারা দেখেছি। সেগুলো নাগরিক সমাজের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে প্রতিহত করা হয়েছিল। এবারও যদি কলেজ প্রশাসন তাদের সিদ্ধান্ত না বদলায়, তেমনটাই করা হবে।’
সমাবেশে বক্তব্য দেন জাসদ বরিশাল জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল হক, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, জাসদ বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি শহিদুল ইসলাম, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক নজরুল হক, পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়ক লিংকন বায়েন, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের বরিশাল মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক শাহ আজিজ, বাসদ বরিশাল জেলা শাখার সদস্য দুলাল মল্লিক, বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শুভংকর চক্রবর্তী, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি বরিশাল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আসাদুর রহমান, বাকশিস বরিশাল জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ আমিনুর রহমান, চারুকলা বরিশালের সংগঠক ও আইনজীবী সুভাষ দাস, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ বরিশাল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক হিরণ কুমার দাস, বরিশাল সাধারণ নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ বরিশাল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক পুষ্প চক্রবর্তী, ব্লাস্ট বরিশাল জেলা শাখার সমন্বয়কারী শাহিদা তালুকদার, গণসংহতি আন্দোলন বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি দেওয়ান আবদুর রশীদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি শিকদার হারুনর রশীদ, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলা শাখার সভাপতি অধ্যাপক টুনু রানী কর্মকার প্রমুখ।
সমাবেশে সংহতি জানায় প্রকৃতি ও জীবন ক্লাব, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্ট, বরিশাল রিকশা-ভ্যানচালক-শ্রমিক ইউনিয়ন, দর্জি শ্রমিক ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, ইজিবাইক সংগ্রাম পরিষদ, অডেসাস, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, সরকারি বরিশাল কলেজের খেলার মাঠে কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি এলাকার শিশু-কিশোররা খেলাধুলা করে, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখানে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে ও নানা সাংস্কৃতিক আয়োজন হয়। শিক্ষার্থীদের খেলার মাঠের জন্য অশ্বিনী কুমার দত্তের বাসভবন ভেঙে এই মাঠের জায়গা বের করা হয়েছিল। কলেজের নিজস্ব বিকল্প জায়গা থাকার পরও একমাত্র খেলার মাঠ নষ্ট করার এই পরিকল্পনা থেকে কর্তৃপক্ষকে অবিলম্বে সরে আসতে হবে।
তবে এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ মো. আলী হোসেন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কলেজ বড় হয়েছে। অনেক শিক্ষার্থী হওয়ায় ক্লাসে জায়গার সংকুলান হয় না। এ জন্য দীর্ঘদিন আমরা ভবন নির্মাণের জন্য চেষ্টা করছি। অবশেষে এখানে ছয়তলা একটি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের বিকল্প স্থান না থাকায় মাঠে এই ভবন করতে হচ্ছে।’
এদিকে সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা বরিশাল নগর ভবনে যান। সেখানে সিটি করপোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহর কাছে দাবিসংবলিত একটি স্মারকলিপি দেন। এ সময় মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ মাঠ রক্ষা কমিটিকে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে এ বিষয়ে প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকের আশ্বাস দেন।
১৯৬২ সালে নগরের কয়েকজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তির সহযোগিতায় এ অঞ্চলের শিক্ষানুরাগী ও ভারতবর্ষের মুক্তিসংগ্রামের অন্যতম সংগঠক অশ্বিনী কুমার দত্তের বাসভবনে নাইট কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। ১৯৭৩ সালে নাইট কলেজের নাম পরিবর্তন করে বরিশাল কলেজ রাখা হয়। ১৯৮৬ সালে কলেজটি সরকারি করা হয়। এরপর কলেজ উন্নয়নের নামে ১৯৯১ সালে কলেজ কর্তৃপক্ষ অশ্বিনী কুমার দত্তের মূল বাসভবনটি ভেঙে ফেলে। কলেজের একটি পুকুর কয়েকবার ভরাট করার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু নগরবাসীর প্রতিবাদে পুকুরটি আর ভরাট করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।