‘৭ দিনের শিশুরে কেমনে বুঝামু, তার মা নাই’

জন্মের মাত্র সাত দিনের মধ্যে ডেঙ্গুতে মা–হারা হলো গাজীপুরের শ্রীপুরের ওয়াজিফা নূর
ছবি: প্রথম আলো

দুটি হাত আলতো করে নেড়ে আপন মনে খেলা করছে সাত দিন বয়সী শিশু ওয়াজিফা নূর। তাকে কোলে নিয়ে বসে আছেন নানি হীরা মণি। ওয়াজিফার দিকে তাকিয়ে বারবার নিজের চোখ মুছছিলেন নানি। গতকাল বুধবার রাতে গাজীপুরের শ্রীপুরের বহেরারচালা গ্রামে এই দৃশ্য দেখে উপস্থিত লোকজন চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিলেন না।

ওয়াজিফার মা সোমা আক্তার (২৬) ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে গতকাল মারা যান। গতকালই তাঁর জানাজা শেষে দাফন হয়। জানাজা উপলক্ষে স্বজনেরা যখন এসেছেন, তখন পুরো বাড়িতে মাতম চলছিল। সবাই সাত দিনের শিশুটির কী হবে, সেটা নিয়েই কথা বলছিলেন।

সোমা আক্তার বহেরারচালা গ্রামের আবুল হাশেমের মেয়ে। তাঁর বিয়ে হয়েছিল একই গ্রামের আল আমীনের সঙ্গে। ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার মাত্র ছয় ঘণ্টার মাথায় সোমা মারা যান। গত ২৭ সেপ্টেম্বর অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তিনি সন্তানের জন্ম দেন।

নাতনিকে কোলে নিয়ে সোমার মা হীরা মণি কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘সাত দিনের দুধের শিশুরে কী বুঝাব আমি। আমার হাতে সঁইপা তার মা চলে গেল। আমি তারে কেমনে বুঝামু, তার মা নাই।’ সোমার বড় মেয়ে আবিদা বিনতে আনিসার বয়স আট বছর।

সোমার মা হীরা মণি বলেন, সন্তানের জন্মের পর হাসপাতাল থেকে বাড়িতে আসার পরপরই মেয়ের জ্বর হয়। প্রথমে ভেবেছিলেন সাধারণ জ্বর। সেভাবেই চিকিৎসা চলছিল। জ্বরের পাঁচ দিনের মাথায় গতকাল সকালে সোমা ও তাঁর স্বামী হাসপাতালে ডেঙ্গু পরীক্ষা করাতে যান। পরীক্ষায় সোমার ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। তাঁকে দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে ময়মনসিংহের কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তীব্র শ্বাসকষ্ট শুরু হয় তাঁর। চিকিৎসা শুরুর আগেই তাঁর মেয়ে মারা যান।

কাঁদতে কাঁদতে হীরা মণি বলেন, ‘হাসপাতালে নেওয়ার সময় মেয়েটা আমার বারবার বলছিল, খুব খারাপ লাগতেছে। সুস্থ হয়ে বাচ্চাটারে কোলে নিব। বাচ্চাটারে বেশি কোলে নিতে পারি নাই। মেয়ের চাওয়া তো পূরণ হলো না, নাতনিটা মা-হারা হইল।’

সোমার বাবা আবুল হাশেম বলেন, শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তার একটি হাসপাতালে সোমার অস্ত্রোপচার হয়েছিল। অস্ত্রোপচারের জন্য হাসপাতালে থাকার সময় মেয়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে বলে তাঁদের ধারণা।