ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসন

বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত একরামুজ্জামানের পাশে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশীরা

একরামুজ্জামান ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পৌঁছালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীসহ নেতা–কমীরা তাঁকে বরণ করে নেন। শনিবার বিকেলে
ছবি: সংগৃহীত

বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দ এ কে একরামুজ্জামানের পাশে দাঁড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের তিন মনোনয়নপ্রত্যাশীসহ তাঁদের কর্মী-সমর্থকেরা। আজ শনিবার বিকেলে তিনি ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গেলে তাঁকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন নেতা-কর্মীরা। এ সময় বিএনপির সাবেক কিছু নেতা-কর্মী সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

একরামুজ্জামানকে বরণ করে নেওয়ার সময় কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক মো. নাজির মিয়া, তাঁর স্ত্রী নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রোমা আক্তার, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ টি এম মনিরুজ্জামান সরকার উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে তাঁরা স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন কমিশন থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। রোমা আক্তার ও মনিরুজ্জামান সরকার মনোনয়নপত্র জমা দিলেও যাচাই-বাছাইয়ে বাদ পড়েন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য বি এম ফরহাদ হোসেন আবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন।

একরামুজ্জামান বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ছিলেন। ২৮ নভেম্বর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরদিন একরামুজ্জামানকে এলাকায় অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে নাসিরনগর উপজেলা ও জেলা বিএনপি। একরামুজ্জামান নাসিরনগর উপজেলার বাসিন্দা এবং আর এ কে সিরামিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এর আগে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র এবং নবম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শী ও নেতা-কর্মীরা জানান, আজ দুপুরে ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের উদ্দেশে রওনা করেন একরামুজ্জামান। বেলা সাড়ে তিনটার দিকে তিনি সরাইল বিশ্বরোড এলাকায় পৌঁছান। তাঁকে বরণ করে নিতে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশী ওই নেতাদের অনুসারী কর্মী-সমর্থক ও বিএনপির সাবেক কিছু নেতা-কর্মী সেখানে জড়ো হন। বিশ্বরোড মোড় থেকে নেতা-কর্মীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নিজ গাড়িতে বসে নাসিরনগর উপজেলা সদরে পৌঁছান একরামুজ্জামান। বিকেল পাঁচটা থেকে সাড়ে পাঁচটার দিকে উপজেলা সদরে পৌঁছানোর পর আওয়ামী লীগ, বিএনপির নেতা-কর্মীসহ এলাকাবাসী তাঁকে অভ্যর্থনা জানান।

এ সময় নৌকার ওই তিন মনোনয়নপ্রত্যাশীসহ ফান্দাউক ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ফারুকুজ্জামান, উপজেলা সদর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক শেখ আবদুল আহাদ, চাতলপাড় ইউপির চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, বুড়িশ্বর ইউপির চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইকবাল চৌধুরী, গোকর্ণ ইউপির চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. শাহীন ও ধরমণ্ডল ইউপির চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা একরামুজ্জামানকে বরণ করে নেওয়ার পর উপজেলা সদরে মিছিলও করেন।

নৌকার মনোনয়নবঞ্চিত রোমা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার স্বামী ও আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী একরামুজ্জামানকে সমর্থন দিচ্ছি। আমরা তাঁর নির্বাচন করব। আমরা লোকজনকে জড়ো হতে নিষেধ করেছিলাম। তারপরও মানুষের ঢল নেমেছে। কারণ, সাধারণ মানুষ তাঁকে ভালোবাসেন।’ দলীয় প্রার্থীর পরিবর্তে স্বতন্ত্র প্রার্থীকে সমর্থনের করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তাঁকে (বর্তমান সংসদ সদস্য) পছন্দ করি না। পাঁচ বছর নাসিরনগরের কোনো উন্নয়ন হয়নি। এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে আমরা একরামুজ্জামানকে সমর্থন দিয়েছি।’

একরামুজ্জামানের বাসভবনে নৌকার মনোনয়নপ্রত্যাশীরা

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অসীম কুমার পাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শকে বিশ্বাস করি। নেত্রী আমাদের আসনে একজনকে মনোনয়ন দিয়েছেন। নেত্রীর প্রার্থীকেই সমর্থন করতে হবে। এখানে ব্যক্তিগত পছন্দের কোনো বিষয় নেই। আর কেউ যদি অন্য প্রার্থীকে সমর্থন করে সেটি একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়। তবে নীতি-আদর্শের দিক থেকে সেটি কতটা সঠিক, সেটা আমি বুঝতেছি না। তাঁদের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, আমরা ভাবছি।’

উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইকবাল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা একরামুজ্জামানকে সমর্থন দিয়েছি। কারণ, বিএনপি নির্বাচন করছে না। এখন খালি মাঠে তো কাউকে গোল দিতে দেব না। বিএনপি নির্বাচনে এলে ভিন্ন কিছু হতো।’

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব সিরাজুল ইসলাম কারাগারে আছেন। আহ্বায়ক আবদুল মান্নানের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। নাসিরনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি এম এ হান্নানের মুঠোফোন বন্ধ থাকায় এ ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।