মা দিবস

১০ বছর ধরে অসুস্থ মায়ের সেবা করে যাচ্ছেন মাসুদ

মাকে ভালোবাসার জন্য বিশেষ দিনের প্রয়োজন হয় না। তার পরও প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার বিশ্বজুড়ে পালিত হয় মা দিবস।

মায়ের খাওয়া শেষে গামছা দিয়ে হাত-মুখ মুছে দিচ্ছেন ছেলে মাসুদ হাওলাদার। গত শুক্রবার সকালে পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার আমরাজুড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

বাবা আবদুল মালেক হাওলাদার অসুস্থ হয়ে পাঁচ বছর বিছানায় পড়ে ছিলেন। বাবাকে মৃত্যুর আগপর্যস্ত সেবা করেছেন ছেলে মাসুদ হাওলাদার (৩৭)। বাবার মৃত্যুর সাত বছর পর মা রিজিয়া খাতুনও (৭৫) অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হন। সেই থেকে স্বাভাবিক চলাফেলা করতে পারছেন না। ১০ বছর ধরে অসুস্থ মায়ের সেবা করে আসছেন মাসুদ। বাবার পরে শয্যাশায়ী মায়ের সেবা করাকে সৌভাগ্য মনে করছেন মাসুদ।

পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার দক্ষিণ বেতকা গ্রামের মাসুদ হাওলাদার ১৪ বছর ধরে বসবাস করছেন পার্শ্ববর্তী গ্রাম আমরাজুড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পের সরকারি ঘরে। সেখানে মা, স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে সুখের পরিবার তাঁর। মাসুদ হাওলাদার পেশায় মাছ ব্যবসায়ী।

গত শুক্রবার সকালে মাসুদ হাওলাদারের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে রাখা পাটিতে বসে মা ভাত খাচ্ছেন। পুরো সময় পাশে বসে থাকেন মাসুদ। কখনো মায়ের পাতে ভাত তুলে দিচ্ছেন। আবার গ্লাসে পানি ঢেলে মায়ের হাতে তুলে দেন। খাওয়া শেষে মায়ের হাত ধুইয়ে গামছা দিয়ে মুখ মুছিয়ে দিয়ে কোলে করে মাকে ঘরে রেখে আসেন। এরপর চলে যান মাছ কিনতে।

মাসুদ হাওলাদার জানান, প্রতিদিন তিন বেলা মাকে খাবার খাওয়ান তিনি। মায়ের গোসল করানো, মাথায় তেল দিয়ে দেওয়া, পোশাক বদল করা—সব কাজ তিনি নিজ হাতে করেন। সকালে উঠে মায়ের মুখ ধোয়ানো, ব্রাশ করানোর পর খাবার খাওয়ান। এরপর তিনি নদীর পাড়ে গিয়ে জেলেদের কাছ থেকে মাছ কিনে এনে বাড়িতে বসে বিক্রি করেন। দুপুরে এক দিন পর পর মাকে গোসল করান। মা যখন খাবার খান, সব সময় মাসুদ পাশে বসে থাকেন।

মাসুদ হাওলাদার বলেন, ‘আমরা তিন ভাই। বাকি দুই ভাইয়ের আলাদা সংসার। বাবার মৃত্যুর পর আমি কয়েক বছর ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করেছি। তখন ছোট ভাই সোলায়মান হাওলাদারের কাছে মা থাকতেন। আমি মায়ের খাওয়ার খরচ ছোট ভাইকে পাঠাতাম। এরপর বাড়িতে চলে আসি। গ্রামে ঘরবাড়ি ছিল না। আমরাজুড়ি আবাসনের একটি ঘরে পরিবার নিয়ে উঠি। ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে মাকে আমার কাছে নিয়ে আসি। এর কয়েক বছর পর মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তিনি শয্যাশায়ী হয়ে যান। এর পর থেকে মায়ের সেবা করে আসছি। মায়ের সেবা করার সুযোগ পেয়েছি, এটা আমার সৌভাগ্য।’

মাসুদ হাওলাদারের স্ত্রী সাবিনা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী মাকে খুব ভালোবাসেন। মাকে যেন সব সময় দেখে রাখতে পারেন, সে জন্য বাড়িতে বসে মাছ বিক্রি করেন। মায়ের প্রতি এত দরদ আজকাল খুব কম ছেলেমেয়ের মধ্যে দেখা যায়। যখন স্বামী ঘরে থাকেন না, আমি শাশুড়ির সেবা করি। আমার তিন সন্তান বাবাকে দেখে তারাও দাদিকে খুব ভালোবাসে।’