আমবয়ানে শুরু বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব, জুমার নামাজে যোগ দিতে দলে দলে আসছেন মুসল্লিরা

ইজতেমার জামাতের সঙ্গে জুমার নামাজে অংশ নিতে মুসল্লিরা দলে দলে আসছেন। আজ শুক্রবার সকালে গাজীপুরের টঙ্গীতে
ছবি: প্রথম আলো

সকাল ৯টা। টঙ্গীর তুরাগতীরে যত দূর চোখ যায়, শুধু মানুষ। সড়ক-মহাসড়কে দল বেঁধে হাঁটছেন মুসল্লিরা। কারও মাথায়, কারও কাঁধে, আবার কারও হাতে একাধিক ব্যাগ। সকালের কনকনে শীত উপেক্ষা করে ছুটছেন তুরাগতীরের মাঠের দিকে। মানুষের এ ঢল তাবলিগের সবচেয়ে বড় জামাত বিশ্ব ইজতেমাকে ঘিরে।

আজ শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে মাওলানা সাদ কান্ধলভীর বিরোধী হিসেবে পরিচিত মাওলানা জুবায়ের অনুসরারীদের ইজতেমা। সারা দেশ থেকে আসা মুসল্লিদের পদচারণে গমগম করছে ইজতেমা মাঠ ও আশপাশের এলাকা।

আজ ফজরের নামাজের পর পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হকের আমবয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে ইজতেমা। দুপুর দেড়টায় জুমার নামাজ পড়াবেন বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়ের।

ইজতেমাকে ঘিরে গত মঙ্গলবার থেকেই মুসল্লিরা আসতে থাকেন। সবচেয়ে বেশি মুসল্লি আসেন গতকাল বৃহস্পতিবার। বিকেলের মধ্যে ভরে যায় ইজতেমা মাঠ। এর মধ্যে আজ ইজতেমার জামাতের সঙ্গে জুমার নামাজে যোগ দিতে রাজধানী ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার মুসল্লিরা আসছেন দলে দলে।

আজ সকাল ৯টার দিকে ইজতেমা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, পৌষের কনকনে শীত উপেক্ষা করে মুসল্লিরা ইজতেমা মাঠের দিকে আসছেন। কেউ চাদর মুড়ি দিয়ে, কেউ গরম কাপড় পরে, কেউবা গায়ে জড়িয়েছেন পাতলা কম্বল। তাঁদের কারও মাথায়, কারও কাঁধে, কারওবা হাতে একাধিক ব্যাগ ও ইজতেমার আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র। তাঁরা মাঠের চারপাশে থাকা বিভিন্ন ফটক দিয়ে মাঠে প্রবেশ করছেন।

ইজতেমার মিডিয়ার সমন্বয়ের দায়িত্বে থাকা জহির ইবনে মুসলিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের এবার রেকর্ডসংখ্যক লোক হয়েছে। মাঠ ও আশপাশের কোথাও জায়গা হচ্ছে না। আখেরি মোনাজাতের দিন আরও বেশি লোকের সমাগম হবে বলে আশা করছি।’

জহির ইবনে মুসলিম আরও বলেন, শুক্রবার ফজরের পর আমবয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মূল ইজতেমা শুরু হয়। তবে মুসল্লি বেশি থাকার কারণে গতকাল বাদ আসর থেকেই বয়ান শুরু হয়। আগামী রোববার আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে প্রথম পর্বের ইজতেমা।

ইজতেমাকে কেন্দ্র করে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তিনটি আলাদা সেক্টরে কাজ করছেন প্রায় ১০ হাজার পুলিশ সদস্য। এ ছাড়া ইজতেমার মাঠ ঘিরে আছেন র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা। পুলিশের নিজস্ব ১৪টি ওয়াচ টাওয়ারসহ র‌্যাবের নিজস্ব ওয়াচ টাওয়ার থেকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে পুরো ইজতেমাকে। মাঠের চারপাশে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য সিসিটিভি ক্যামেরা।

গাজীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এবার পুরো ইজতেমায় কাজ করছেন ৩০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। মুসল্লিদের ব্যবহারের জন্য ৩১টি ভবনে রয়েছে ৮ হাজার ৮৮৪টি শৌচাগার ও ৫৪৪টি গোসলখানা। ১৬টি গভীর নলকূপ দিয়ে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। চারটি ১১ কিলোভল্ট ফিডারের সাহায্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে। পাশাপাশি চারটি শক্তিশালী জেনারেটর প্রস্তুত রয়েছে। মুসল্লি­দের পারাপারের জন্য সেনাবাহিনীর পাঁচটি ভাসমান সেতু প্রস্তুত করা হয়েছে। মুসল্লিদের যাতায়াতের জন্য ১০টি বিশেষ ট্রেন চালু থাকবে।