চারদিকে রঙিন কাপড় দিয়ে করা হয়েছে সাজসজ্জা। বাদ যায়নি রঙিন বাতির আলোকসজ্জা। অতিথিদের দেওয়া হয়েছে নিমন্ত্রণপত্র। পত্রে অতিথিদের নাম। অতিথিদের আপ্যায়নে থাকছে নিরামিষ খাবার। নানা আয়োজন একটি বিয়ের অনুষ্ঠানকে ঘিরে। তবে বিয়েটি কোনো মানুষের নয়। বট আর পাকুড়গাছের বিয়ে নিয়ে এত আয়োজন।
জয়পুরহাট শহরের তাজুর মোড়ে বট ও পাকুড়গাছের মধ্যে এ বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। শুক্রবার রাতে বিয়ে হয়। তার আগে গায়েহলুদ ও মঙ্গল শোভাযাত্রার অনুষ্ঠান। তাজুর মোড়ের লাড্ডু ও শিঙারা দোকানি ধীরেন চন্দ্র মহন্ত ব্যতিক্রমী এ বিয়ের আয়োজন করেন।
অতিথিদের দেওয়া নিমন্ত্রণপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, বধূ সেজে: কুমারী বটগাছ, পিতা: ধীরেন চন্দ্র মহন্ত, মাতা: ঝরণা রানী মহন্ত, ঠিকানা: সোনারগাঁ (তাজুর মোড়), জয়পুরহাট। বর বেশে: পাকুড়গাছ, পিতা: বাবু দাস, মাতা: মুণি দাস, ঠিকানা: সোনারগাঁ (তাজুর মোড়), জয়পুরহাট। অনুষ্ঠানসূচিতে সকালে গায়েহলুদ, মঙ্গল শোভাযাত্রা। বিকেলে বিবাহ। প্রীতিভোজ রাত সাড়ে আটটায়।
বিয়ের প্রধান অতিথি জয়পুরহাট পৌরসভার মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, বিশেষ অতিথি জয়পুরহাট পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কালীচরণ আগরওয়া, জয়পুরহাট চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (নাম নেই), জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুমন কুমার সাহা, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক রাসেল দেওয়ান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রমজান আলী সরদার।
শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, তাজুর মোড়ে সড়কের পূর্ব পাশে ইট দিয়ে ঘেরা বট ও পাকুড়গাছ। দুটি গাছের পাশে নারীরা গায়েহলুদের আনুষ্ঠানিকতার কাজ করছেন। সেখানে বাজানো হচ্ছিল ঢাকঢোল। বিয়ে দেখতে ভিড় করছেন লোকজন। পেছনে আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য রান্নার আয়োজন চলছে।
শহরের সোনারপট্টী এলাকার গৃহবধূ শ্রাবণী সাহা বট-পাকুড়গাছের বিয়ে দেখতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের বিয়েতে দাওয়াত করা হয়েছিল। এ জন্য এসেছি। বিয়ের আয়োজন দেখে মুগ্ধ।’ আয়োজকেরা জানান, সকালে গায়েহলুদের অনুষ্ঠান করার কথা ছিল। কিন্তু সেটি বিকেলে করা হয়েছে। রাতে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে অতিথিদের নিরামিষ খাবার খাওয়ানো হবে।
আয়োজক ধীরেন চন্দ্র মহন্ত প্রথম আলোকে বলেন, প্রকৃতির মঙ্গলের জন্য বট ও পাকুড়গাছের বিয়ের আয়োজন করেছেন। ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী যেভাবে মানুষের বিয়ে হয়, সেভাবে বট-পাকুড়ের বিয়ে হবে। ১২০টি বিয়ের নিমন্ত্রণপত্র বিলি করেছেন। তবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন হাজারখানেক মানুষকে। জয়পুরহাট পৌরসভার মেয়র অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন। রাতে আমন্ত্রিত অতিথিদের নিরামিষ ভোজ করানো হবে। ৪০ বছরের মধ্যে জয়পুরহাটে এমন ব্যতিক্রমী বিয়ে হয়নি বলে তিনি জানান।
ধীরেনের স্ত্রী ঝরণা রানী মহন্ত বলেন, ‘বটগাছ মেয়ে। আমি মেয়ের মা। ছেলে পাকুড়গাছের মা মুণি দাস। আমরা প্রতিবেশী। বিয়ে ঘিরে আমরা আনন্দ-উল্লাস করছি।’
জয়পুরহাটের সংস্কৃতিকর্মী লালন হোসেন বলেন, প্রকৃতি ও ব্যক্তির মঙ্গল কামনায় কখনো ব্যাঙের বিয়ে আবার কখনো বট-পাকুড়ের বিয়ে দেওয়া হয়। জয়পুরহাটের তাজুর মোড় এলাকার কিছু সনাতন ধর্মাবলম্বী মানুষ প্রকৃতির মঙ্গল কামনায় এমন বিয়ের আয়োজন করেছেন। বিয়ে ঘিরে আনন্দ-উৎসব হচ্ছে।