রাজশাহীতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান। রোববার বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে
রাজশাহীতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান। রোববার বেলা ১১টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে

রাজশাহীতে ভোক্তার ডিজি

‘এক পণ্য নিয়ে কৃষির তিন দপ্তরের তিন রকম তথ্যে বিপদে আছি’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেছেন, ‘খাদ্যের ক্রাইসিস যখন হয়, তখন ডিমান্ড ও সাপ্লাইয়ের ভারসাম্য থাকে না। আলু নিয়ে দেখেছি, কৃষির তিনটা বিভাগ তিন রকমের তথ্য দিয়েছে। মিনিস্ট্রিতে একটা আলাপে দেখেছি, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যে রিপোর্ট দিয়েছে সেটার সঙ্গে কৃষি বিপণনের তথ্যের মিল নেই। এই দুটি অধিদপ্তরের সঙ্গে আবার কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের তথ্যের মিল নেই। এটা দিয়েছে ঢাকার এসবি অফিস। এটা যদি হয়, আমরা বিপদে আছি।’

আজ রোববার সকালে রাজশাহী বিভাগীয় ভোক্তা অধিকার সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ আলীম আখতার খান এসব কথা বলেন। রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলনকক্ষে এ সম্মেলনের আয়োজন করে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) রাজশাহী বিভাগ।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসকের উদ্দেশে ভোক্তার ডিজি বলেন, ‘ডিসি সাহেবকে বলব, আপনার জেলায় কৃষি বিভাগ বলেন, “আমি একটা রিপোর্ট চাই। সেটার ওপর আমরা বিশ্বাস করব, অন্য রিপোর্ট চাই না।” কৃষি মন্ত্রণালয়কে বলা হয়েছে, আপনারা একটা অভিন্ন রিপোর্ট দেন, যাতে করে আমরা এলসি খুলতে পারি। এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই আমদানি হবে।’ তিনি বলেন, ‘ইউরোপ-আমেরিকা থেকে পণ্য আনতে গড়ে দুই-তিন মাস সময় লাগে। তাহলে আমরা চার-পাঁচ মাস আগে জানতে পারলে আমদানি করতে পারব। ক্রাইসিস মোমেন্টে জানলে ক্রাইসিস দূর হবে না। আমরা বর্তমানে সেই অবস্থায় পড়েছি।’

দ্রুত আমদানি করতে গিয়ে খারাপ পণ্য নিতে হয় জানিয়ে মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, ‘পেঁয়াজ আমদানির পর দেখা গেল অন-থার্ড (এক-তৃতীয়াংশ) পেঁয়াজ নষ্ট। আমরা ক্রাইসিস মেইনটেন করার জন্য ওই পেঁয়াজ কিনতে বাধ্য হচ্ছি। এই কারণে যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছিল, তখন টু-থার্ডকে (দুই–তৃতীয়াংশ) পুরো এক ধরে, ১০০–এর মধ্যে ৩০ ভাগ নষ্ট হলেও তাকে আমরা ১০০ ভাগ ধরে মূল্য নির্ধারণ করছি। পেঁয়াজের দুটো অংশ ছিল, একটা অংশ প্রায় ভেজা পেঁয়াজ আসত। আমি নিজে হাত দিয়ে ধরে দেখেছি। এগুলো জনগণের জন্য পজিটিভ নয়।’

ভোক্তার ডিজি বলেন, ‘এই যে তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে গেল, এটার কারণ হলো কী পরিমাণে আমদানি লাইনে আছে, সেটার তথ্যগুলো খুব নির্ভরযোগ্য ছিল না। পরবর্তী সময়ে যখন ওনারা (আমদানিকারকেরা) আনবেন, আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। একই মূল্য থাকলেও ডলারের মূল্য বাড়লেই আমাদের দেশে পণ্যের মূল্য বেড়ে যায়। তাই হিসাব সঠিক থাকতে হয়।’

সম্প্রতি হিমাগার থেকে আলু সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে বাধ্য করায় রাজশাহীর পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানান ভোক্তার ডিজি। তিনি বলেন, ‘আমরা দ্রব্যমূল্য পেয়ে থাকি কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে। সেখান থেকে আমরা পেয়েছি যে ২৭ টাকার মধ্যেই কোল্ড স্টোরেজগুলোতে আলুর দাম রাখা হয়েছে। এর সঙ্গে কোল্ড স্টোরেজের ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ ধরে ৩৯ টাকায় বিক্রি হলে যৌক্তিক মূল্য বলা হয়েছে। তারপরও আরও কিছু লাভ ধরে ৪৫ টাকা কৃষি বিপণন অধিদপ্তর দিয়েছে। আমরা ওই মূল্যেই বিক্রি করার জন্য আন্তরিক ছিলাম। পবার ইউএনও এটা করেছেন, তাঁকে ধন্যবাদ জানাই।’

সম্মেলনে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ, জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার, ক্যাবের কেন্দ্রীয় সভাপতি জামিল চৌধুরী, রাজশাহী জেলার সভাপতি লিয়াকত আলী, সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফাসহ স্থানীয় অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।