কিশোরগঞ্জে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের ফেরিঘাট ইজারার দরপত্র জমা দানে বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাজিতপুরের দীঘিরপাড় ফেরিঘাটের জন্য জেলার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত দরপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা নির্ধারিত ছিল। তবে তাঁদের বাধার মুখে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কেউ প্রথমে এটি জমা দিতে পারছিলেন না। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে সবাই দরপত্র জমা দিয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জেলা শহরের গাইটালে অবস্থিত সওজ কার্যালয়ে গতকাল সকাল থেকে দরপত্র জমা দেওয়া নিয়ে উত্তেজনা দেখা দেয়। এটি জমা দিতে গেলে বিএনপির স্থানীয় কয়েকজন নেতা-কর্মী সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বাধা দেন। এতে কার্যালয় প্রাঙ্গণে একধরনের হট্টগোল ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। অবশ্য সবাই দরপত্র জমা দিতে সক্ষম হয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে বাধা দানকারীদের নাম-পরিচয় কেউ বলতে পারেননি। তবে তাঁরা সবাই স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মী বলে দাবি করেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমি যত দূর জেনেছি, বাইরের লোকজন এসে স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে প্রথমে নেগোসিয়েশনের চেষ্টা করে। এ নিয়ে ঝামেলার কথা শুনে আমি লোকজন পাঠাই। পরে নিয়ম অনুযায়ী দরপত্র জমা পড়ে।’
সওজ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বেলা দুইটায় দরপত্রের বাক্স খোলার নির্ধারিত সময় ছিল। বাক্স খুলে তিনটি দরপত্র পাওয়া গেছে। এতে সর্বোচ্চ দরদাতা করিমগঞ্জের বায়জিদ হাসান হৃদয়ের বকুল ট্রেডার্স ১ কোটি ৭০ লাখ টাকার দরপত্র জমা দিয়েছে। বাজিতপুরের পাটুলি এন্টারপ্রাইজ দ্বিতীয় দরদাতা হিসেবে জমা দিয়েছে ১ কোটি ৬২ লাখ টাকার দরপত্র। আর তৃতীয় দরদাতা হিসেবে কটিয়াদীর ইছামতি এন্টারপ্রাইজ জমা দিয়েছে ১ কোটি ৬১ লাখ টাকার দরপত্র।
বাজিতপুরের দীঘিরপাড় ফেরিঘাটটি গত বছরই প্রথম চালু হয়েছে। তিন বছরের জন্য নিয়ম থাকলেও পরীক্ষামূলকভাবে গতবার এক বছরের জন্য ঘাটটির ইজারা দেওয়া হয় বলে জানান জেলা সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শাকিল মোহাম্মদ ফয়সাল। তাঁর ভাষ্য, ওই সময় ৪৫ লাখ ৪১ হাজার ৬৬৬ টাকায় ইজারা দেওয়া হয়েছিল মেসার্স তরী বিল্ডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক ছয়বার দরপত্র আহ্বান করতে হয়। গত ২ অক্টোবর পঞ্চমবার দরপত্র আহ্বান পর্যন্ত কোনো বাধা-বিপত্তি আসেনি। তবে ষষ্ঠবার এসে বাধার মুখে পড়তে হলো। পুলিশ আসায় পরিস্থিতি শান্ত হয়।
নির্বাহী প্রকৌশলী আরও জানান, ফেরিঘাটের দরপত্র এখনো সনাতনী পদ্ধতিতে আহ্বান করা হয়। ই-টেন্ডার হলে এমন সমস্যার মুখে পড়তে হতো না।
ঘটনাটির সত্যতা নিশ্চিত করে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, সওজের দরপত্র জমাদানে সমস্যার কথা শুনে তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।