বরগুনা প্রেসক্লাবে আটকে রেখে মারধরের পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিক তালুকদার মাসউদের মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। মৃত্যুর দুই দিন পর আজ সোমবার দুপুরে তালুকদার মাসউদের স্ত্রী সাজেদা বেগম বাদী হয়ে ১৩ জনকে আসামি করে বরগুনা সদর থানায় মামলাটি করেন। আসামিদের মধ্যে পাঁচজন সাংবাদিক।
গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টার দিকে বরগুনা প্রেসক্লাবে তালুকদার মাসউদকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। পরে খবর পেয়ে বরগুনা সদর থানার পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার তাঁর মৃত্যু হয়।
তালুকদার মাসউদ দৈনিক ভোরের ডাক পত্রিকার বরগুনা জেলা প্রতিনিধি ছিলেন। এ ছাড়া বরগুনা সদর উপজেলার সদর ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ছিলেন।
এ ঘটনায় হওয়া মামলার আসামিরা হলেন এনটিভির বরগুনা জেলা প্রতিনিধি আ স ম হাফিজ আল আসাদ ওরফে সোহেল হাফিজ, যমুনা টেলিভিশনের প্রতিনিধি ফেরদৌস খান ইমন, ডিবিসি নিউজের আবদুল মালেক, সময় টেলিভিশনের সাইফুল ইসলাম, মোহনা টেলিভিশনের জাফর হোসেন হাওলাদার এবং তাঁদের সহযোগী আরিফুল ইসলাম (২৮), মো. কাসেম হাওলাদার (৩০), মো. ছগির হোসেন (২৮), ওয়ালিউল্লাহ ইমরান (২৮), জাহিদুল ইসলাম (২৮), সোহাগ হাওলাদার (২৫), এ এস এম সিফাত (২৭) ও শহিদুল ইসলাম (৪৫)।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, তালুকদার মাসউদ সাংবাদিকতা করায় বরগুনা প্রেসক্লাবের সদস্য হওয়ার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে ২০১৫ সালের ২৯ জুলাই ‘বরগুনা জেলা প্রেসক্লাব’ নামে একটি সংগঠন করেন। এতে বরগুনা প্রেসক্লাবের নেতৃস্থানীয় কিছু সদস্য তালুকদার মাসউদের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টার দিকে বরগুনা প্রেসক্লাবের সদস্য মুশফিক আরিফের সঙ্গে বরগুনা প্রেসক্লাবে গিয়ে ক্যারাম খেলছিলেন তালুকদার মাসউদ। সেটি দেখে এনটিভির বরগুনা প্রতিনিধি সোহেল হাফিজ ক্ষিপ্ত হয়ে তালুকদার মাসউদকে গালিগালাজ শুরু করেন। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে তর্কের একপর্যায়ে সোহেল হাফিজসহ আসামিরা প্রেসক্লাবের গেট বন্ধ করে হামলা চালান।
এজাহারের বর্ণনা অনুযায়ী, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও আসামিরা গেট তালাবদ্ধ করে রাখেন। প্রায় এক ঘণ্টা প্রেসক্লাবে আটক থাকার পর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম মিজানুর রহমান, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি বশিরুল আলম প্রেসক্লাবে প্রবেশ করে তাঁকে উদ্ধার করে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালের শের-ই–বাংলা মেডিকেল কলেজ হাপসাতালে পাঠানো হয়। ঘটনার ১৩ দিন পর শনিবার রাত ১১টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তালুকদার মাসউদ।
তালুকদার মাসউদের স্ত্রী সাজেদা বেগম বলেন, ‘জেলা প্রেসক্লাব গঠনের পর থেকেই বরগুনা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এনটিভির প্রতিনিধি সোহেল হাফিজ ও তাঁর অনুসারী কিছু সাংবাদিক আমার স্বামীর ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন। জেলা প্রেসক্লাব বন্ধ করতে বেশ কয়েকবার সোহেল হাফিজ আমার স্বামীকে হুমকিও দিয়েছেন। এই রেষেই সোহেল হাফিজসহ অন্যরা আমার স্বামীকে প্রেসক্লাবে আটকে রেখে নির্মম নির্যাতন করেন। যার শিকার হয়ে আমার স্বামী মৃত্যুবরণ করেছেন।’ স্বামীর মৃত্যুর পর এক মেয়ে ও ১৩ বছর বয়সী এক ছেলেকে নিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন উল্লেখ করে সাজেদা বলেন, ‘আমি এই হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার চাই।’
এ বিষয় জানতে হাফিজ আল আসাদ ওরফে সোহেল হাফিজের মুঠোফোনে আজ সোমবার বিকেলে কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
বরগুনা প্রেসক্লাবের সভাতি গোলাম মোস্তফা কাদের প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় মামলা হওয়ার বিষয়টি তিনি শুনেছেন। ১৯ ফেব্রুয়ারি প্রেসক্লাবে অপ্রীতিকর ঘটনায় মাসউদ আহত হলেও চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে তিনি বরগুনায় এসেছিলেন। পরে অসুস্থ হয়ে আবারও হাসপাতালে ভর্তি হন বলে শুনেছেন।
বরগুনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম মো. মিজানুর রহমান বলেন, সাংবাদিক তালুকদার মাসউদের স্ত্রী সাজেদা বেগম বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।