শরীরে অন্তত ছররা গুলির ৩০০টি চিহ্ন। গুলিগুলো শরীরের ভেতরে চামড়ার নিচে ছড়িয়ে আছে। সংসারের অভাব ঘোচাতে শরীরে গুলি নিয়ে ফুটপাতে দোকান পেতে বসেছেন আবদুল মজিদ (২২)। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে তিনি গত ৪ আগস্ট বিকেলে বগুড়ার শেরপুর থানার সামনে পুলিশের গুলিতে তিনি আহত হন। তাঁর শরীরের ৩৬টি ছররা গুলি অস্ত্রোপচার করে বের করা হলেও বাকিগুলো থেকে গেছে।
বগুড়ার শেরপুর শহরের ধুনট রোড বাস টার্মিনাল এলাকায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের পাশে খাদ্যগুদামের সীমানা দেয়ালের পাশে দোকান দিয়েছেন মজিদ। দোকানটি কাঠের তৈরি। দোকানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে বোতলজাত পানি, বিস্কুট, চকলেট, চিপস, চায়ের ফ্লাস্ক, পান ও সিগারেট।
শেরপুর পৌর শহরের হাসপাতাল সড়কে দুই কক্ষের একটি টিনশেড ভাড়া বাড়িতে মজিদের পরিবারের বসবাস। তাঁর মা দীর্ঘদিন ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত। বড় ভাই রাকিব শেখ (২৬) দৈনিক মজুরিভিত্তিক লেদমিস্ত্রি। মজিদকে নিয়ে গত ১০ সেপ্টেম্বর প্রথম আলো অনলাইনে ‘৩০০টি ছররা গুলি শরীরে নিয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছেন মজিদ’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর অনেকে তাঁর সাহায্যার্থে এগিয়ে আসেন।
আবদুল মজিদ বলেন, পুলিশের গুলিতে আহত হওয়ার পর শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বগুড়ার মাঝিড়ার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) ও ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা শরীরে থাকা ৩০০টি গুলির মধ্যে ৩৬টি অস্ত্রোপচার করে বের করেছেন। বাকি গুলি এখনো শরীরে থাকায় অসহ্য যন্ত্রণা সহ্য করতে হচ্ছে।
শরীরে গুলি নিয়ে দোকান দেওয়ার বিষয়ে মজিদ বলেন, তাঁরা দিনমজুর পরিবার। সংসারে অভাব লেগেই থাকে। অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলে সংসার চলে না। তাই শরীরে গুলির যন্ত্রণা সহ্য করেই ফুটপাতে দোকান বসাতে হয়েছে। তিনি বলেন, বগুড়ার ধুনটের এক ভাই তাঁকে চিকিৎসার জন্য ২০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন। সেই টাকা দিয়ে একটি স্টল কিনে ফুটপাতে দোকান বসিয়েছেন। দোকানে দুই হাজার টাকা বিক্রি হলে ২০০ টাকা আয় হয়। তাতে সংসারে কিছুটা অভাব দূর হয়।
মজিদের বড় ভাই রাকিব শেখ বলেন, মজিদকে নিয়ে প্রথম আলোতে সংবাদ করার পর স্থানীয় রাজনৈতিক দলের নেতাসহ হিতৈষী অনেকে তাঁদের পরিবারকে অন্তত ৮০ হাজার টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। সেই টাকা দিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন। সরকারিভাবে অর্থসহায়তা করার কথা শুনেছেন। তবে এখনো সেটি পাননি।