নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে মোটর মেকানিক মোস্তফা কামাল রাজু (৩৫) ও পোশাক কারখানার শ্রমিক মিনারুল ইসলাম (২৯) নিহতের ঘটনায় পৃথক দুটি হত্যা হয়েছে। দুটি মামলায় ১৭২ জনকে এজাহারনামীয় আসামি করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় নিহত মোস্তফার স্ত্রী আকলিমা আক্তার এবং নিহত মিনারুলের ভাই নাজমুল হক বাদী হয়ে পৃথক মামলা দুটি করেন। এ নিয়ে জেলার বিভিন্ন থানায় ১৮টি হত্যাসহ মোট ২২টি মামলা হলো। এর মধ্যে ১৫টি হত্যাসহ ১৬টি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে।
মোস্তফা নিহতের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানসহ ৪০ জনের নাম রয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে আরও ১৫০ থেকে ২০০ জনকে। আসামিরা আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে আকলিমা আক্তারের করা মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন সাবেক সংসদ সদস্য (এমিপ) শামীম ওসমান, তাঁর ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমান ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান। মামলার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আমীর খসরু।
নিহত মোস্তফা কামাল সিদ্ধিরগঞ্জের নতুন মহল্লা এলাকায় ভাড়া থাকতেন। তাঁর গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জের পশ্চিম বিঘা এলাকায়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার আন্দোলন শুরু হলে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা নিপীড়ন ও নির্যাতন শুরু করেন। ওই দিন বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে আন্দোলনকারীরা সিদ্ধিরগঞ্জের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের সামনে জড়ো হন। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র, পিস্তল, বন্দুক, রাইফেল, রড নিয়ে হামলা চালানো হয়। এ সময় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। ছোড়া হয় এলোপাতাড়ি গুলি। এতে মোস্তফা কামালের মাথায় গুলি লাগে। আশপাশের লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২২ আগস্ট মোস্তফা কামাল মারা যান।
মিনারুল ইসলাম নিহতের ঘটনায় সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক সংসদ সদস্য শামীম ওসমান, নজরুল ইসলাম বাবু, কায়সার হাসনাত, গোলাম দস্তগীর গাজী, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীসহ ১৩২ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান, তাঁর ভাতিজা আজমেরী ওসমান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান। এ মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৩০০ থেকে ৪০০ জনকে। আসামি সবাই আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ২০ জুলাই সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজী রোডের আল আমিন নগর এলাকায় আন্দোলনকারীদের ওপর আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে হামলা চালানো হয়। এ সময় শামীম ওসমান তাঁর হাতে থাকা অস্ত্র দিয়ে গুলি করলে মিনারুলের পেটের নিচে গুলি লাগে। আশপাশের লোকজন মিনারুলকে উদ্ধার করে শহরের খানপুরে ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।