ছয় বছর বয়সী মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলামের ডান হাতে ক্যানুলা লাগানো। সেদিক দিয়ে চলছে স্যালাইন। শয্যার পাশে বসে থাকা মা নুরনাহার বেগম বলেন, ছেলের শরীরের গিঁটে গিঁটে অসম্ভব ব্যথা। জ্বর নিয়ে হাসপাতালে আসার পর তার ডেঙ্গু ধরা পড়ে। আশরাফুলের চিকিৎসা চলছে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এই হাসপাতালে তার মতো ১১ জন রোগী ভর্তি আছে এখন। এই ১১ জনসহ গত এক সপ্তাহে টেকনাফে ৩৪ জনের শরীরে ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে।
হঠাৎ করে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালে চাপ বেড়েছে। ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে মশারি টানিয়ে। তবে রোগীর ভিড় বাড়ায় সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
আশরাফুলের মা নুরনাহার বেগম বলেন, ‘কয়েক দিন আগে হঠাৎ করে ছেলের জ্বর ও সর্দি-কাশি দেখা দেয়। ছেলের সারা শরীরে ব্যথা। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে এলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। এখানে এসে দেখি, আমার ছেলের মতো অনেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত।’
টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চিকিৎসক প্রণয় রুদ্র প্রথম আলোকে বলেন, চলতি জুলাই মাসে ৪৬ জন রোগী ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছে। আর এ নিয়ে বর্তমান মৌসুমে আক্রান্ত হয়েছে ১১৭ জন। এর মধ্যে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমে আসে। তবে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে টেকনাফে কেবল দুজনের ডেঙ্গু ছিল। এর পর থেকেই বেড়ে যায়। এখন প্রায় প্রতিদিন জ্বর, মাথাব্যথা ও শরীরব্যথা নিয়ে রোগী আসছে হাসপাতালে। রক্ত পরীক্ষায় তাদের অনেকেরই শরীরে ডেঙ্গু ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। প্লাটিলেট কমে যাওয়ায় এ পর্যন্ত ১১ জন রোগীকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।
চিকিৎসক প্রণয় রুদ্র বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে থাকায় মশার প্রজননক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। এ জন্য ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে যত্রতত্র প্লাস্টিক বর্জ্য না ফেলা, বাড়ির আশপাশের ঝোপজঙ্গল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং দিনে–রাতে মশারি টানিয়ে রাখা জরুরি।
গতকাল রোববার রাতে সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডেঙ্গু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, রোগীর উপচে পড়া ভিড়। এর মধ্যে এক পাশে মশারি টানিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের। চিকিৎসকেরা জানান, এই হাসপাতালে সাধারণ লক্ষণ নিয়ে আসা ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। তবে রোগ জটিল হলেই তাদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় কক্সবাজার সদর হাসপাতালে।
হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) মো. এনামুল হক বলেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর চাপ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বাড়তি রোগীর চাপ সামাল দিতে চিকিৎসকেরা হিমশিম খাচ্ছেন। সাধারণ রোগীদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমাতে ডেঙ্গু রোগীদের আলাদা ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
টেকনাফ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সরোয়ার আলম বলেন, এটি একটি পর্যটন শহর। এখানে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি পর্যটকের সমাগম ঘটছে। কিন্তু পৌরসভার বাসস্ট্যান্ড এলাকার অবস্থা দেখলে মনে হয় ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়। চারদিক ময়লা-আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। যত্রতত্র পানিও জমে রয়েছে। আর এ জন্য এডিস মশার বংশবৃদ্ধিও ঘটছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো আদনান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য টেকনাফ পৌরসভা ও পাঁচটি ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন এলাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান শুরুর জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।