ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে থাকার আবেদন করেছেন ফুলপরী খাতুন। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থী উপদেষ্টা সেলিনা নাসরীনের কার্যালয়ে
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে থাকার আবেদন করেছেন ফুলপরী খাতুন। আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে শিক্ষার্থী উপদেষ্টা সেলিনা নাসরীনের কার্যালয়ে

ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার ফুলপরী নতুন হলে উঠছেন

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার ফুলপরী খাতুন হল পরিবর্তনের আবেদন করেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে থাকতে চান। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আজ শনিবারের মধ্যে ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরীকে নতুন হলে থাকার ব্যবস্থা করা হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শাহাদাত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ফুলপুরীকে তাঁর পছন্দমতো ছাত্রী হলে আজকেই তাঁর একটি আসন বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। এ জন্য শিক্ষার্থী উপদেষ্টা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন। আজ থেকে ক্যাম্পাসে তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়া হবে।

এর আগে আজ সকাল ১০টার দিকে বাবা আতাউর রহমান, ভাই হজরত আলীর সঙ্গে ক্যাম্পাসে আসেন ফুলপরী। কুমারখালী শিলাইদহ খেয়াঘাট এলাকা থেকে পুলিশি নিরাপত্তায় তাঁকে ক্যাম্পাস আনা হয়। ক্যাম্পাসে আসার পরপরই ফুলপুরকে নেওয়া হয় প্রক্টর শাহাদাত হোসেনের কার্যালয়ে।

ফুলপরী প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমানে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে তাঁর সংযুক্তি আছে। কিন্তু যেহেতু সেখানে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে, সে জন্য তিনি আর ওই হলে থাকতে চাচ্ছেন না। তাঁর পছন্দ অনুযায়ী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে তাঁকে আসন দেওয়া হবে বলে প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী উপদেষ্টা সেলিনা নাসরিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিধিবিধান রয়েছে। সেগুলো মেনেই তাঁকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে যাওয়া হবে। তিনি যে সিটে উঠতে চান, সেই সিটে তাঁকে ওঠানো হবে। আজকে অফিস সময়ের মধ্যেই এ কাজ সম্পন্ন করা হবে।’

দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে ফুলপরীক নিয়ে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে যান শিক্ষার্থী উপদেষ্টা। হলটির প্রাধ্যক্ষ মিয়া মো. রাসিদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ফুলপরীকে নিয়ে হলের কয়েকটি কক্ষ ঘুরে দেখেছেন তিনি। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী এই ছাত্রীর পছন্দমতো একটি আসন তাঁকে দেওয়া হয়েছে।

১২ ফেব্রুয়ারি রাতে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতন করার অভিযোগ করেন ফিন্যান্স বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী ফুলপরী খাতুন। নির্যাতনের সময় তাঁকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালিগালাজ ও ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। পরে এ বিষয়ে ফুলপরী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, হলের প্রাধ্যক্ষ ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।

ফুলপরীকে নির্যাতনের ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও পরিসংখ্যান বিভাগের ছাত্রী সানজিদা চৌধুরী ওরফে অন্তরাসহ পাঁচজনের আসন বাতিল করে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। আসন বাতিল হওয়া অন্য শিক্ষার্থীরা হলেন চারুকলা বিভাগের হালিমা আক্তার ওরফে ঊর্মি, আইন বিভাগের ইসরাত জাহান ওরফে মিম, ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের তাবাসসুম ইসলাম ও একই বিভাগের একই সেশনের মুয়াবিয়া জাহান। তাঁদের শেখ হাসিনা হলের সংযুক্তি বাতিলের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সুপারিশের সিদ্ধান্ত নেয় হল প্রশাসন।

ফুলপরীকে নির্যাতনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে হলের প্রভোস্ট শামসুল আলম, হাউস টিউটর মৌমিতা আক্তার, ইশরাত জাহানসহ কয়েকজনের দায়িত্বে চরম অবহেলা পেয়েছে আদালতের নির্দেশে গঠিত তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। আর প্রক্টর শাহাদাত হোসেনের কর্মকাণ্ড উদাসীন ও দায়সারাগোছের বলে প্রতিবেদনে এসেছে।

ফুলপরী খাতুনকে নির্যাতনের ঘটনায় ১ মার্চ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীসহ পাঁচ ছাত্রীকে সব ধরনের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার (সাসপেন্ড) করতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষ শামসুল আলমকে অবিলম্বে প্রত্যাহার করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্দেশনার পর ওইদিনই প্রাধ্যক্ষকে প্রত্যাহার করা হয়। তবে উপাচার্য ক্যাম্পাসে না থাকায় ওই ছাত্রীদের বহিষ্কারের বিষয়ে আজ বেলা একটা পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।