নরসিংদীর মাধবদীতে টেক্সটাইল কারখানার শ্রমিক জামান মিয়া (১৭) নিহতের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা করা হয়েছে। এই মামলায় আরও ৩০০ থেকে ৩৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
আজ রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নিহত জামান মিয়ার ভগ্নিপতি মো. আঙ্গুর মিয়া নরসিংদীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাকিবুল হকের আদালতে মামলার আবেদন করেন। এই সময় আদালতের বিচারক পুলিশকে মামলাটি তালিকাভুক্ত করার নির্দেশ দেন।
নিহত জামান মিয়া ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার দেউলডাংরা এলাকার শহিদুল ইসলামের ছেলে। নরসিংদীর মাধবদীর ভগিরথপুর এলাকায় থেকে স্থানীয় একটি টেক্সটাইল কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন জামান মিয়া।
মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২১ জুলাই সদর উপজেলার মাধবদীর মেহেরপাড়ার পৌলানপুর এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান নিয়ে তৎকালীন সরকারের দমন–পীড়ন ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্লোগান চলছিল। দুপুর সাড়ে ১২টায় আওয়ামী লীগের ৩০০ থেকে ৩৫০ নেতা-কর্মী হাতে লাঠিসোঁটা ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও এলোপাতাড়িভাবে গুলিবর্ষণ করেন। এ সময় তাঁদের ছোড়া একাধিক গুলি জামান মিয়ার পেটসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় বিদ্ধ হয়। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। পাঁচ দিন পর ২৫ জুলাই সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকাল পৌনে ৯টার দিকে জামানের মৃত্যু হয়।
মামলার আরজিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদের ও আসাদুজ্জামান খান কামাল শক্ত হাতে ছাত্রদের আন্দোলন দমনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তাঁদের পরোক্ষ সহযোগিতা, উসকানিমূলক বক্তব্য ও হুকুমে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের অজ্ঞাতনামা আসামিরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা চালিয়ে জামানকে গুলি করে হত্যার মাধ্যমে পেনাল কোডের ১৪৩ / ১৪৯ / ৩০২ / ১০৯ / ৩৪ ধারার অপরাধ করেছেন। তাঁদের নির্দেশেই ছাত্র-জনতার যৌক্তিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে কোনো ধরনের উসকানি ছাড়াই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীরা একযোগে পিটিয়ে ও গুলিবিদ্ধ করে শিক্ষার্থীদের হত্যা ও আহত করেছিলেন।
আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, আদালত মামলাটি তালিকভুক্ত করতে মাধবদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় তিনজনের নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা ৩০০ থেকে ৩৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।