গাজীপুর সিটি নির্বাচন

নিজের টাকায় নির্বাচন করবেন আজমত-জায়েদা, শ্বশুরের টাকায় শাহনুর

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আজমত উল্লা খান গতকাল জুমার নামাজ শেষে গণসংযোগ করেন। এ সময় সবার কাছে নৌকা মার্কায় ভোট ও দোয়া চান তিনি
ছবি: প্রথম আলো

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন নিজের পেশা ও ব্যবসার আয় দিয়ে নির্বাচন করবেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী এম এম নিয়াজ উদ্দিন স্ত্রী ও মেয়ের কাছ থেকে নির্বাচনের খরচের টাকা নেবেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম ঘরভাড়া, চাচা ও শ্বশুরের দেওয়া টাকায় নির্বাচনী ব্যয় মেটাবেন। এ ছাড়া অন্য প্রার্থীদের কেউ নিজের আয়, দলের অনুদান ও ধারদেনা করে ভোট করবেন।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামার সঙ্গে নির্বাচনের খরচ ও টাকার উৎস–সম্পর্কিত ফরমে প্রার্থীরা নিজেই এসব তথ্য উল্লেখ করেন।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সিটি নির্বাচনে একজন মেয়র প্রার্থী ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে পারবেন। কোথা থেকে তাঁরা টাকা পাবেন, কীভাবে খরচ করবেন, সেটি তাঁরা নির্বাচন কমিশনের ফরমে উল্লেখ করেছেন। নির্বাচনের পর তাঁদের হিসাব-নিকাশ খতিয়ে দেখা হবে।

সূত্রে জানা গেছে, আজমত উল্লা খান নির্বাচনে ৩০ লাখ টাকা ব্যয় করবেন। নিজের আইন পেশা থেকে আয় হওয়া টাকা দিয়ে এ ব্যয় মেটাবেন। সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের মা স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন নিজের ব্যবসার আয়ের টাকা দিয়ে নির্বাচনের ওই খরচ চালাবেন। জাতীয় পার্টির প্রার্থী নিয়াজ উদ্দিন ব্যবসার আয় থেকে ৫ লাখ, স্ত্রীর কাছ থেকে ১০ লাখ এবং প্রবাসী মেয়ের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা নিয়ে নির্বাচনের ওই ৩০ লাখ টাকা খরচ করবেন।

নির্বাচনী প্রচার–প্রচারণায় মেয়র প্রার্থী জায়েদা খাতুন ও তাঁর ছেলে সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। শুক্রবার দুপুরে গাজীপুরের সালনা এলাকায়

স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকার শাহনুর নিজের গৃহসম্পত্তি ভাড়ার আয় থেকে ১৮ লাখ ও শ্বশুর এনামুল হকের ব্যবসা থেকে ৫ লাখ ও চাচা নাজিম সরকারের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা নিয়ে নির্বাচনের ব্যয় মেটাবেন। এ ছাড়া আশরাফুল ও মতিউর রহমান নামের দুজনের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়ে তিনি নির্বাচনী ব্যয় মেটাবেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী গাজী আতাউর রহমান নির্বাচনে ব্যয় ধরেছেন ৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এর মধ্যে শিক্ষকতা পেশা থেকে তিন লাখ, ধার হিসেবে এক লাখ ও বাকি টাকা দলের অনুদান থেকে খরচ করবেন।

গণফ্রন্টের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম নির্বাচনে তিন লাখ টাকা ব্যয় করবেন। এর মধ্যে নিজের দুই লাখ ও দুজনের কাছ থেকে এক লাখ টাকা নেবেন। জাকের পার্টির প্রার্থী রাজু আহমেদ নির্বাচনে খরচ করবেন দুই লাখ টাকা। স্বতন্ত্র প্রার্থী হারুন অর রশিদ নিজের ব্যবসার আয় থেকে নির্বাচনের জন্য ১৬ লাখ টাকা খরচ করবেন।

কোন খাতে কার কত ব্যয়

আজমত উল্লা খান নির্বাচনী পোস্টার বাবদ সাড়ে ৪ লাখ, ক্যাম্পের জন্য ৪০ হাজার ও এজেন্টদের যাতায়াত বাবদ ৬০ হাজার টাকা খরচ করবেন। ঘরোয়া বৈঠক বা সভা খরচ ধরেছেন ২ লাখ ৮৭ হাজার। এ ছাড়া প্রচারপত্রে ২ লাখ, হ্যান্ডবিল ৬ লাখ, ডিজিটাল ব্যানার ১ লাখ ৬৫ হাজার, ১১৪টি পথসভার জন্য ১ লাখ ১৪ হাজার এবং মাইকে প্রচারের জন্য ৬ লাখ ৮৪ হাজার ব্যয় হবে তাঁর। এর বাইরে প্রতীকের জন্য ১ লাখ ১৪ হাজার, অফিস আপ্যায়নে ৩০ হাজার ও কর্মীদের জন্য ২ লাখ ১৩ হাজার ৭৫০ টাকা খরচ করবেন তিনি।

জায়েদা ব্যয়ের খাত দেখিয়েছেন পোস্টার ৩ লাখ ৪২ হাজার, নির্বাচনী ক্যাম্প ও কর্মীদের জন্য ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা, প্রার্থীর কেন্দ্রীয় নির্বাচনী ক্যাম্প ও কর্মীদের জন্য ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। প্রার্থীর যাতায়াত খরচ দেখানো হয়েছে আড়াই লাখ টাকা। এ ছাড়া ঘরোয়া বৈঠকের জন্য ২ লাখ সাড়ে ৫৬ হাজার, লিফলেটের জন্য ৮ লাখ, ৫৭টি পথসভার জন্য ৪৫ হাজার ৬০০, মাইকে প্রচারের জন্য ৯৬ হাজার ৯০০ এবং অফিস আপ্যায়নে ১ লাখ ৭৪ হাজার ও কর্মীদের জন্য ৫ লাখ ১৩ হাজার টাকা খরচ করবেন জায়েদা।

নির্বাচনী প্রচারণায় স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সরকার শাহনুর ইসলাম। শুক্রবার সকালে গাজীপুরের টঙ্গী এলাকায়

সরকার শাহনুর ইসলাম পোস্টার বাবদ ৩ লাখ, ৫৭টি ক্যাম্পের জন্য ২ লাখ, কেন্দ্রীয় ক্যাম্পের জন্য ৫০ হাজার, ঘরোয়া বৈঠক ও সভার জন্য সাড়ে ৩ লাখ, লিফলেটের জন্য সাড়ে ৪ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়েছেন এ ছাড়া হ্যান্ডবিল বাবদ ৪০ হাজার, ব্যানারের জন্য আড়াই লাখ, পথসভার জন্য ৫০ হাজার ও মাইকে প্রচারের জন্য আড়াই লাখ টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। এর বাইরে অফিস আপ্যায়নে ৯০ হাজার, কর্মীদের জন্য দেড় লাখ, প্রচার খরচ ৪০ হাজার ও বিবিধ খরচ ১ লাখ টাকা দেখিয়েছেন তিনি।

নিয়াজ উদ্দিন পোস্টারে ৬০ হাজার, নির্বাচনী ক্যাম্প ও কর্মীদের পেছনে ৪ লাখ, কেন্দ্রীয় ক্যাম্প বাবদ ৩ লাখ ও কর্মীদের জন্য ২ লাখ টাকা খরচ করবেন। প্রার্থীর যাতায়াত খরচ ধরা হয়েছে ৭০ হাজার। এ ছাড়া ঘরোয়া বৈঠক বাদ সাড়ে ৫০ হাজার, প্রচারপত্র ছাপা ২ লাখ, পথসভার জন্য ৬০ হাজার, মাইকে প্রচারের জন্য ১ লাখ ১৪ হাজার ও অফিস আপ্যায়নের জন্য ২০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। এর বাইরে ডিজিটাল ব্যানারে ১ লাখ ৬৫ হাজার, প্রতীক খরচ ১ লাখ ১৪ হাজার, হ্যান্ডবিলের জন্য ৬ লাখ ও কর্মীদের খরচ বাবদ তিনি ২ লাখ ১৭ হাজার ৭০০ টাকা ব্যয় করবেন।

গাজী আতাউর রহমানের ব্যয় পোস্টারে ১ লাখ ৭০ হাজার, নির্বাচনী ক্যাম্পে ১ লাখ ২০ হাজার, প্রার্থীর যাতায়াত খরচ ৫ লাখ, ঘরোয়া বৈঠক বা পথসভায় ২০ হাজার টাকা ধরা হয়েছে। এ ছাড়া প্রচারপত্রে ১ লাখ ২০ হাজার, হ্যান্ডবিলে ৬০ হাজার, ব্যানারে ৫০ হাজার, প্রতীকের জন্য ৩০ হাজার, মাইকিংয়ে ৬০ হাজার, আপ্যায়নে ৪০ হাজার ও কর্মীদের পেছনে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ দেখিয়েছেন তিনি।

আতিকুল ইসলাম পোস্টার বাবদ ৩০ হাজার, দুটি নির্বাচনী ক্যাম্পে ২০ হাজার, অফিসের জন্য ১৭ হাজার, প্রচারপত্রে ৩ হাজার, ডিজিটাল ব্যানারের জন্য ১ লাখ ২৭ হাজার, প্রতীকের জন্য ৩ হাজার, আপ্যায়নে ৫০ হাজার, কর্মীদের জন্য ৪০ হাজার টাকা খরচ দেখিয়েছেন। এ ছাড়া বিবিধ হিসেবে ১০ হাজার টাকার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি। জাকের পার্টির রাজু আহমেদ পোস্টারে ৪৫ হাজার, ক্যাম্পে ৩০ হাজার, অফিসে ৫ হাজার, যাতায়াতে ৩০ হাজার, ঘরোয়া বৈঠক ও পথসভায় ৫ হাজার, লিফলেটে ৬২ হাজার টাকা খরচ করবেন। এ ছাড়া পথসভা, মাইকে প্রচার ও বিবিধ হিসেবে ৫১ হাজার টাকা খরচ করবেন তিনি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী হারুন অর রশিদ পোস্টারের জন্য দেড় লাখ, নির্বাচনী ক্যাম্পে ২ লাখ ২৪ হাজার, ক্যাম্পের আনুষঙ্গিক ৩৫ হাজার, যাতায়াতে ১ লাখ ৪০ হাজার, ঘরোয়া বৈঠক ও পথসভায় ২ লাখ ৯ হাজার খরচ করবেন। এ ছাড়া লিফলেটে ২৫ হাজার, হ্যান্ডবিলে ২৫ হাজার, ব্যানারে ৪৩ হাজার, ১১৪টি পথসভার জন্য ৫৭ হাজার, পোর্ট্রেট বাবদ ২ লাখ ৮৫ হাজার, প্রতীকে ৩০ হাজার, আপ্যায়নে ৭৫ হাজার টাকা ব্যয় হবে। এর বাইরে কর্মীদের জন্য ৪৮ হাজার, প্রচারে ১ লাখ এবং বিবিধ হিসেবে ৬৫ হাজার টাকা খরচ দেখিয়েছেন তিনি।