পদ্মার ভাঙনে দৌলতদিয়ার ৪ নম্বর ফেরিঘাট বন্ধ

পদ্মার ভাঙনে দৌলতদিয়ার ৪ নম্বর ফেরি ঘাট বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় পন্টুনের সামনে থেকে পূর্ব দিকে পদ্মার পাড় ভাঙতে থাকে
ছবি: প্রথম আলো

পদ্মা নদীর ভাঙনে গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত থেকে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়ার ৪ নম্বর ফেরিঘাট বন্ধ রয়েছে। বর্তমানে দৌলতদিয়ার চারটির মধ্যে মাত্র দুটি ফেরিঘাট চালু রয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) কর্মীদের দাবি, ভাঙনে ২৫ মিটারের মতো অংশ ভেঙে গেছে। এতে ৪ নম্বর ফেরিঘাটসহ আশপাশের বসতভিটা ঝুঁকিতে পড়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো. সালাহ উদ্দিন বলেন, দৌলতদিয়ায় চারটির মধ্যে ৩, ৪ ও ৭ নম্বর ঘাট সচল ছিল। এখন শুধু দুটি ঘাট সচল আছে। দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত ঘাটটি সচল করতে বিআইডব্লিউটিএকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ঘাট এলাকার বাসিন্দারা জানান, শুক্রবার রাত সোয়া একটার দিকে হঠাৎ ৪ নম্বর ফেরিঘাটের পন্টুনের সামনে থেকে পূর্ব দিকে পদ্মার পাড় ভাঙতে থাকে। এতে এলাকায় আতঙ্ক দেখা যায়। এ সময় কর্তৃপক্ষ ঘাটটি বন্ধ করে দেয়। এর কিছুক্ষণ আগেই রাত একটার দিকে ওই ঘাট থেকে একটি রো রো (বড়) ফেরি যানবাহনবোঝাই করে পাটুরিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

৪ নম্বর ফেরিঘাটের পন্টুনের দায়িত্বে থাকা লস্কর শামসুল আলম বলেন, রাত একটার দিকে ঘাট থেকে রো রো ফেরি শাহ মখদুম ফেরি যানবাহন বোঝাই করে পাটুরিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সোয়া একটার দিকে পন্টুনের পূর্ব দিক থেকে অনেক জায়গাজুড়ে মাটি ধসে পড়তে থাকে। চোখের পলকে পানি যেন বলগ দিয়ে নিচের দিকে তলিয়ে যেতে থাকে। রাত দুইটা থেকে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তে ঘাটটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে রেকার এনে ঘাটটি টেনে ওপরে তোলা হয়।

শনিবার দুপুর ১২টার দিকে দেখা যায়, ৪ নম্বর ঘাটের সংযোগ সড়কের ওপর বিআইডব্লিউটিসির রেকার রাখা হয়েছে। মোটা রশি দিয়ে পন্টুনটি টেনে রাখা হয়েছে, যাতে স্রোতের তোড়ে তা চলে না যায়। র‌্যাম থেকে প্রায় ১০০ ফুট এলাকা নদীতে ধসে যাওয়ায় তা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। এ ছাড়া ঘাট এলাকার ১০টি পরিবার ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।

চা–দোকানি মনির ফকির বলেন, ‘রাত ১টার দিকে দোকান বন্ধ করে বাড়ি যাওয়ার কিছুক্ষণ পর শুনি, ঘাট ভেঙে যাচ্ছে। হঠাৎ এভাবে ঘাট ভেঙে যাওয়ার কথা শুনে সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। ঘাট থেকে মাত্র ১০ গজ দূরে আমার চায়ের দোকান। এর অদূরে নিজেদের বসত বাড়ি। ভাঙন হতে থাকলে দোকান-বাড়িঘর কিছুই রক্ষা করতে পারব না।’

শাহাদৎ মেম্বার পাড়ার হোসেন ফকির, নুরু শেখসহ কয়েকজন বলেন, কয়েক দিন ধরে পদ্মার পানি অনেক কমতে থাকায় চাপ বেড়েছে। যে কারণে নদীর ভাঙন ঠেকাতে পাড়ে ফেলা বালুভর্তি জিও ব্যাগ ধসে পড়তে শুরু করেছে। দ্রুত ভাঙন ঠেকানো না হলে ঘাটসহ স্থানীয় বাড়িঘর রক্ষা করা সম্ভব না।

ঘাটে উপস্থিত বিআইডব্লিউটিএর সংরক্ষক শ্রমিক হাবিবুর রহমান বলেন, প্রায় ২৫ মিটারের মতো এলাকা পদ্মা নদীতে ধসে গেছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কর্মকর্তারা ভাঙন পরিস্থিতি দেখে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবেন।

বিআইডব্লিউটিএর আরিচা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নেপাল চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ভাঙন ঠেকাতে জরুরি মেরামত করতে ট্রাকে করে বালু এনে জিও ব্যাগ ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘাট চালু করতে দুই-তিন লাগতে পারে।