দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় ঝালকাঠি পৌরসভার গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
পিচঢালাই উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন স্থান ভাঙাচোরা। বৃষ্টি হলেই এসব গর্ত ও ভাঙাচোরা অংশে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। এই এবড়োখেবড়ো অবস্থা ঝালকাঠি পৌরসভার খানা ১৬টি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সড়কগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কগুলোর অবস্থা এতটাই খারাপ যে যানবাহন তো দূরের কথা, পথচারীদেরও চলাচল করতে কষ্ট হচ্ছে।
এসব সড়ক সংস্কারের দাবিতে এলাকাবাসী ক্ষোভে ফুঁসে উঠছে। গত ১২ জুলাই ওই ১৬টি সড়কের মধ্যে পৌর শহরের স্ট্যান্ড রোড থেকে কাঠপট্টির কাঁঠালতলা পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কের সংস্কারের দাবিতে স্থানীয় লোকজন সড়কে কচুগাছ রোপণ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, এ সড়কগুলো সংস্কারের জন্য প্রকল্প তৈরি করে স্থানীয় সরকার অধিদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই কাজ শুরু হবে।
ঝালকাঠি পৌর কার্যালয় সূত্র জানায়, শহরের ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডের ব্র্যাক মোড় থেকে পৌরসভার সীমানা সড়ক, ২ নম্বর ওয়ার্ডের গুরুদাম খালসংলগ্ন পূবালী সড়ক থেকে পূর্ব চাঁদকাঠি সড়ক, একই ওয়ার্ডের বসুন্ধরা সড়ক, রূপনগর থেকে জালাইকার বাড়ি সড়ক, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সুতালরী সড়ক, একই ওয়ার্ডের পুলিশ লাইনসের পাশ দিয়ে টাইগার স্কুল সড়ক, মুন্সি জাহাঙ্গীর সড়ক, মনু সড়ক থেকে দত্তবাড়ির সড়ক, ৫ নম্বর ওয়ার্ডের শিল্পকলা একাডেমি থেকে পদ্মা অয়েল ডিপুর সড়ক, একই ওয়ার্ডের ধোপার চকের সড়ক, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বাসন্ডা নদীরভাঙনকবলিত আবাসন এলাকা থেকে অতুল মাঝির খেয়াঘাট হয়ে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাদামতলা বাসন্ডা সেতুর পশ্চিম পাড় পর্যন্ত সড়ক, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম ঝালকাঠির অতুল মাঝির ঘাট থেকে কিফাইত নগরের গাবখান সেতুর টোলঘর পর্যন্ত সড়ক, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাঁশপট্টি সড়ক, ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শহীদ সরণি পৌর খেয়াঘাট সড়ক, একই ওয়ার্ডের সিটি পার্ক সড়ক এবং একই ওয়ার্ডের সিটি ক্লাব থেকে স্ট্যান্ড রোড হয়ে কাঠপট্টি পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার সড়কের অবস্থা খারাপ। সর্বশেষ সাত বছর আগে সড়কগুলো সংস্কার করা হয়েছিল।
২ নম্বর ওয়ার্ডের গুরুদাম খালসংলগ্ন পূবালী সড়ক থেকে পূর্ব চাঁদকাঠি সড়কটি যেকোনো সময় খালে বিলীন হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকার বাসিন্দারা। গত বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, সড়কটি বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরে খালের পূর্ব দিকে হেলে পড়েছে।
পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ২০০ কোটি টাকার উন্নয়নকাজ হবে। শিগগিরই সব অসমাপ্ত কাজ শেষ করা হবে।লিয়াকত আলী তালুকদার, মেয়র, ঝালকাঠি পৌরসভা
এই ওয়ার্ডের বাসিন্দা আইনজীবী মুহা. মাহবুব আলম বলেন, এ সড়কে প্রায় দুই শতাধিক পরিবার বসবাস করে। সড়কটি খালের অংশে (গাইডওয়াল) দিয়ে অবিলম্বে সংস্কার না করা হলে এটি খালে বিলীন হয়ে যাবে। তখন মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকবে না।
পৌরসভা ভবনের সামনে অবস্থিত ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শহীদ সরণি পৌর খেয়াঘাট সড়কটি দীর্ঘদিন থেকে অবহেলিত। এ সড়ক ভাঙাচোরা। সড়কটিতে খানাখন্দও আছে। এ ছাড়া এটি অনেক নিচু। ফলে সামান্য বৃষ্টি বা সুগন্ধার উঁচু জোয়ারে সড়কে হাঁটুসমান পানি উঠে যায়। এ সড়কেই মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়েছে।
এ সড়কের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন বলেন, দীর্ঘদিনের ভাঙাচোরা সড়কটি সংস্কার না করায় এলাকার বাসিন্দারা চরম ভোগন্তির মধ্যে আছে। সামান্য বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে সড়কটি তলিয়ে যায়। অথচ পৌর কর্তৃপক্ষের সামনেই এ সড়কের অবস্থান।
৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যবর্তী পৌর শহরের স্ট্যান্ড রোড থেকে কাঠপট্টির কাঠালতলা পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সড়কের সংস্কারের দাবিতে গত ১২ জুলাই স্থানীয় লোকজন সড়কে কচুগাছ রোপণ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। পরে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বাসিন্দারা বলেন, ঝালকাঠি শহরের কাঠপট্টি কাঁঠালতলা সড়কটি খানাখন্দে ভরে গেছে। সামান্য বৃষ্টিতে সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বেহাল সড়কে চলাচল করতে স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় জনসাধারণের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সম্প্রতি রিকশা থেকে পড়ে স্কুলগামী এক শিক্ষার্থীর হাত ভেঙে গেছে। তাই অবিলম্বে সড়কটি সংস্কারের জন্য পৌর মেয়রের প্রতি আহ্বান জানান তাঁরা।
পৌরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান বলেন, ‘দুই বছর আগে এই সড়ক মেরামতের জন্য বিল পাস করা হয়েছে। কিন্তু দরপত্র দিতে বিলম্ব হওয়ায় কাজ শুরু করা হয়নি। আমরা আশাবাদী শিগগিরই কাজ শুরু করা হবে।’
ঝালকাঠি পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী অলোক সমাদ্দার বলেন, এসব সড়ক মেরামত করার জন্য এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রকল্প অনুমোদন হলেই অল্পদিনের মধ্যে নতুন সড়ক নির্মাণ ও সংস্কারকাজ শুরু করা হবে বলে।