কক্সবাজার সৈকতে ভেসে আসার তিন ঘণ্টা পর মারা যাওয়া ডলফিনটি স্পিনার প্রজাতির। পানিতে নৈপুণ্য দেখিয়ে মানুষকে মুগ্ধ করে যে প্রজাতির ডলফিন, সেটা স্পিনার প্রজাতি। কীভাবে ডলফিনটি মারা পড়ল, সেটা নিয়েই এখন আলোচনা চলছে।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজার শহর থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে উখিয়ার পাটোয়ারটেক সৈকতে ভেসে আসে ডলফিনটি। এর প্রায় তিন ঘণ্টা পর ডলফিনটি মারা যায়।
মঙ্গলবার রাতেই কক্সবাজারে অবস্থিত বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের ল্যাবরেটরিতে মৃত ডলফিনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। আঘাতের কারণে ডলফিনটি মারা গেছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এ প্রসঙ্গে ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, স্পিনার প্রজাতির ডলফিনটির হৃৎপিণ্ডে রক্ত জমাট এবং যকৃতে ক্ষতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে বাহ্যিক কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। খাদ্যনালিতেও কিছু পাওয়া যায়নি। যকৃতে ক্ষত হওয়ায় সম্ভবত চার থেকে পাঁচ দিন ডলফিনটি খাবার খেতে পারেনি। এ কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছিল। পরে দিক্ভ্রান্ত হয়ে গভীর সাগর থেকে অসুস্থ ডলফিনটি উপকূলের দিকে ভেসে আসে। ডলফিনটি স্ত্রী লিঙ্গের।
ডলফিনের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার বলেন, এ রকম দুর্লভ প্রজাতির ডলফিনের বিচরণ গভীর সাগরে। দল বেঁধে তারা ছুটে বেড়ায়। বঙ্গোপসাগরেও এ প্রজাতির ডলফিনের বিচরণ রয়েছে। মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি গবেষণার জন্য মরা ডলফিনটি বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটে সংরক্ষণ করা হয়েছে। মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডলফিনের নমুনা ঢাকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজিতে (এনআইবি) পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বদরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, আঘাতের কারণেই ডলফিনটির মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু আঘাত কীভাবে পেল, সেটা নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। বৈরী পরিবেশে সাগর এখন উত্তাল আছে। জেলার সাড়ে পাঁচ হাজার মাছ ধরার ট্রলারের সব কটি ঘাটে নোঙর করা আছে। কিছু ট্রলার অবশ্য সাগরে ঝুঁকি নিয়ে মাছ ধরছে।
কক্সবাজার ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, সাগরে মাছ ধরার জালে ডলফিন, কচ্ছপ, হাঙর, তিমি ধরা পড়লে পিটিয়ে হত্যা না করে ছেড়ে দিতে জেলেদের নির্দেশনা দেওয়া আছে। তারপরও লোভের বশে কিছু জেলে হাঙর নিধন করেন। কিন্তু ডলফিনকে আঘাত করার কারণ থাকতে পারে না।
মৎস্য বিজ্ঞানীরা বলছেন, স্পিনার প্রজাতির ডলফিন গভীর সাগরে বিচরণ করে। সমুদ্রের নীল জলরাশিতে এরা একা অথবা দল বেঁধে লম্পঝম্প করে। জাহাজ অথবা ট্রলার নিয়ে চলাচলের সময় তাদের নৈপুণ্য দেখা যায়। মালয়েশিয়া, দুবাই, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে ডলফিনের অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী পর্যটকের নজর কাড়ে।
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার বলেন, স্পিনার ডলফিন সমুদ্রের পানির নিচে প্রতি ৫ সেকেন্ডে ১ থেকে ২ বার ঘুরে সাগরের পানির ওপরে উঠে বাতাসে ৭ থেকে ১২ বার ঘুরে পানিতে ডুব দিতে পারে। তাই এর নাম স্পিনার ডলফিন। অন্য প্রজাতির ডলফিনের পক্ষে এমনটা করা সম্ভব হয় না। এই প্রজাতির ডলফিন নানা ধরনের নৈপুণ্য দেখিয়ে মানুষকে মুগ্ধ করে। দাঁতযুক্ত এই প্রজাতির ডলফিনের দৈর্ঘ্য সাড়ে ৪ ফুট থেকে সাড়ে ৭ ফুট পর্যন্ত এবং ওজনে ২৩ থেকে ৭৯ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। কক্সবাজারে ভেসে আসা ডলফিনের দৈর্ঘ্য ছিল ৫ ফুট, ওজন ২৭ কেজি।