ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ছাত্রলীগ কর্মী আশরাফুল রহমান ওরফে ইজাজকে (২২) গুলি করে হত্যার সঙ্গে জড়িত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন হয়েছে। এ সময় হত্যায় জড়িত দুই প্রধান আসামির কুশপুত্তলিকা পোড়ানো হয়। আজ শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন। এ সময় তাঁরা প্রধান আসামিকে গ্রেপ্তারে ১৮ ঘণ্টার সময়সূচি বেঁধে দেন।
নিহত আশরাফুল ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কলেজপাড়ার আমিনুর রহমানের ছেলে। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগে স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। তিনি জেলা ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ও সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী চেয়ারম্যান প্রার্থী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন ওরফে শোভনের (আনারস প্রতীক) পক্ষের কর্মী ছিলেন।
চতুর্থ ধাপে ৫ জুন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর সন্ধ্যায় আনারস প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকেরা আনন্দমিছিল বের করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে জেলা শহরের কলেজপাড়ায় ওই মিছিলে গুলি করা হয়। এতে মিছিলে থাকা ছাত্রলীগ কর্মী আশরাফুল রহমান গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। নিহত আশরাফুলের বাবা বাদী হয়ে পরদিন ১৬ জনকে আসামি করে সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি জালাল হোসেন ওরফে খোকাকে প্রধান আসামি এবং জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি (এ হত্যাকাণ্ডের পর বহিষ্কৃত) হাসান আল ফারাবী ওরফে জয়কে ২ নম্বর আসামি করা হয়।
৭ জুন সকালে নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার কুতুবপুর গ্রাম থেকে হত্যাকাণ্ডের অন্যতম হোতা হাসান আল ফারাবী ওরফে জয়কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ছাত্রলীগের বেশ কিছু সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করায় এবং এলাকায় এককভাবে প্রভাব বিস্তার করতে আশরাফুলকে গুলি করে পরিকল্পিতভাবে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন হাসান। এই হাসানও নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেনের পক্ষের কর্মী।
এদিকে আজ বেলা ১১টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন নিহত আশরাফুলের সহপাঠী, স্বজনসহ এলাকাবাসী। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক কালীবাড়ি মোড়, টিএ রোড, মঠের ঘোড়া এলাকা প্রদক্ষিণ শেষে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে তাঁরা মানববন্ধনের আয়োজন করেন। মানববন্ধনে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেনে।
মানববন্ধনে সদর উপজেলার সুহিলপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ ভূঁইয়ার সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন সদর উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান শাহাদাৎ হোসেন, মজলিশপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নাসিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আজহারুল ইসলাম, সুহিলপুর ইউপি সদস্য কাজী খোকন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি জুবায়ের হোসেন প্রমুখ।
সদর উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ও জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে একটি কুচক্রী মহলের ইশারায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের মেধাবী ছাত্র, ছাত্রলীগ কর্মী আশরাফুল ওরফে ইজাজকে গুলি করে হত্যা করা হয়। মামলার ২৩ দিন অতিবাহিত হলেও প্রধান আসামি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি জালাল হোসেন ওরফে খোকা বা আর কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। কিন্তু জালাল হোসেন শহরের কলেজপাড়ায় অপরাধের অভয়ারণ্য তৈরি করে রেখেছেন। তাঁকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
অন্য বক্তারা বলেন, কলেজপাড়ায় চাঁদাবাজি, মানুষকে হয়রানিসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যে জালাল হোসেন করেননি। এলাকাবাসী তাঁর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। তাঁর ভয়ে এখনো কেউ কথা বলতে চান না। কিন্তু তাঁকে এখনো গ্রেপ্তার করছে না পুলিশ। বক্তারা প্রধান আসামিসহ অন্য আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান। প্রধান আসামিকে ১৮ ঘণ্টার সময়সূচি বেঁধে দিয়ে হুঁশিয়ারি দেন, দাবি আদায় না হলে তাঁরা কঠোর আন্দোলনে যাবেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসলাম হোসেন বলেন, পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালাচ্ছে।