পাহাড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী সমন্বিত অভিযানে নতুন সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দিল শারক্বীয়ার সাত সদস্য ও পাহাড়ি একটি ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী’র তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের কাছে থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানানো হয়। আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় র্যাব এ তথ্য জানায়।
এদিকে বান্দরবানের রুমা উপজেলাসংলগ্ন রাঙামাটির বিলাইছড়ির বড়থলি থেকে আজ সকালে রাঙ্গুইয়া তঞ্চঙ্গ্যা (৩৩) নামের এক যুবকের লাশ উদ্ধার করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ওই যুবককে ১৫ অক্টোবর জঙ্গিগোষ্ঠী অপহরণ করে নিয়ে যায় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। দুর্গম ওই এলাকায় প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী সমন্বিত অভিযান চলছে।
রাঙামাটির পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ আজ প্রথম আলোকে বলেছেন, বিলাইছড়ির বড়থলিতে একজন পাড়াবাসীর লাশ পাওয়া গেছে বলে তাঁরা জানতে পেরেছেন। কিন্তু সেখান থেকে কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
এর আগে ১০ অক্টোবর ঢাকায় র্যাবের সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলা হয়েছিল, নতুন জঙ্গি সংগঠন জামাতুল আনসার ফিল হিন্দিল শারক্বীয়ার সদস্যদের পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ি বিচ্ছিন্ন সংগঠনের ছত্রচ্ছায়ায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সেখানে বিভিন্ন বাহিনীর সমন্বয়ে সমন্বিত অভিযান চলছে। জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া দুর্গম পাহাড়ে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ক্যাম্পে প্রশিক্ষণশিবির স্থাপন করেছে বলে জানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জঙ্গিদের খোঁজে পাহাড়ে ‘সমন্বিত’ অভিযানে ‘বেশ অগ্রগতি’ হয়েছে বলে গতকাল বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা জানান, জঙ্গিবিরোধী অভিযান চলাকালে ১২ অক্টোবর বড়থলি ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের টাইগারপাড়া থেকে ২৮ জন শ্রমিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য সাইজামপাড়ায় গিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ২২ জন ১৩ অক্টোবর বাড়ি ফিরে গেলেও ৬ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে ছিলেন। ওই ছয়জন ১৫ অক্টোবর টাইগারপাড়ায় বাড়ি ফেরার পথে জঙ্গিদের মুখোমুখি পড়ে যান। দুজন শ্রমিক পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও চারজন জঙ্গিদের হাতে ধরা পড়েন। ওই চারজনের মধ্যে তিনজন ১৬ অক্টোবর পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও রাঙ্গুইয়া তঞ্চঙ্গ্যা পালাতে পারেননি।
বড়থলি ইউনিয়ন পরিষদের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ও টাইগারপাড়ার বাসিন্দা জামাইয়া তঞ্চঙ্গ্যা প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করার পর রাঙ্গুইয়া তঞ্চঙ্গ্যার লাশ আজ বৃহস্পতিবার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের উলুছড়িপাড়ার পশ্চিম পাশের জঙ্গলে পাওয়া গেছে। তাঁকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে।
রুমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন শিবলী প্রথম আলোকে বলেছেন, র্যাবের কাছে কেএনএফের সঙ্গে জঙ্গিদের থাকার তথ্যের ভিত্তিতে নিরাপত্তা বাহিনী দুর্গম এলাকাগুলোতে জঙ্গিবিরোধী অভিযান পরিচালনা করছে।
তবে এখন পর্যন্ত অভিযানের অগ্রগতি সম্পর্কে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। রাঙামাটির পুলিশ সুপার বিকেলে বলেছেন, অভিযানের ব্যাপারে সাংবাদিকদের পরে জানানো হবে।
তবে আজ সন্ধ্যায় র্যাবের পাঠানো খুদে বার্তায় বলা হয়, ‘বান্দরবান ও রাঙামাটির বিভিন্ন অঞ্চল হতে নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া'র ৭ জন, পাহাড়ি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের ৩ জনসহ মোট ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব; বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে।’