দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন সকালে মিরকাদিম পৌরসভার টেঙ্গর এলাকার রিকাবীবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের পাশে জিল্লুর রহমানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন সকালে মিরকাদিম পৌরসভার টেঙ্গর এলাকার রিকাবীবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের পাশে জিল্লুর রহমানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়

মুন্সিগঞ্জে শ্রমিক লীগ নেতাকে হত্যার ঘটনায় ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার মিরকাদিম পৌর শ্রমিক লীগের সহসভাপতি মো. জিল্লুর রহমানকে হত্যার ঘটনায় পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র শহিদুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে মামলা করা হয়েছে। আজ বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে নিহত ব্যক্তির স্ত্রী রেহানা বেগম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় ১৫ জনের নাম উল্লেখ করার পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা ৫-৬ জনকে আসামি করা হয়।

এর আগে গত রোববার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন সকালে পৌরসভার টেঙ্গর এলাকার রিকাবীবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের পাশে জিল্লুর রহমানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত জিল্লুর রহমান (৪২) নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মৃণাল কান্তি দাসের সমর্থক ছিলেন।

মুন্সিগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) থান্দার খাইরুল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, নিহত জিল্লুরের স্ত্রী বাদী হয়ে ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫-৬ জনকে আসামি করে মামলাটি করেছেন। মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক দল অভিযান চালাচ্ছে।

মামলার সংক্ষিপ্ত এজাহারে বলা হয়, নির্বাচনের দিন টেঙ্গর এলাকায় ভোটকেন্দ্র থেকে নৌকার এজেন্টদের বের করে দিয়ে দখলের চেষ্টা করেন স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকেরা। খবর পেয়ে টেঙ্গর এলাকার ভোটার স্লিপ বিতরণের টেবিলের সামনে উপস্থিত হন জিল্লুর। তখন মিরকাদিম পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলামের আর্থিক সহযোগিতায় ও নির্দেশে পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর লিটন মিয়াসহ অন্য আসামিরা জিল্লুরকে কুপিয়ে হত্যা করে ফেলে যান।

নিহত জিল্লুরের মেয়ে মৌমিতার অভিযোগ, তাঁর বাবা নৌকা প্রতীকের পক্ষে নির্বাচন করেন। এ জন্য শুরু থেকেই স্বতন্ত্র প্রার্থীর (কাঁচি) সমর্থক কাউন্সিলর লিটন, আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ও তাঁদের অনুসারীরা হুমকি দিয়ে আসছিলেন। নির্বাচনের দিন এলাকায় না থাকার জন্যও হুমকি দিয়েছিলেন। সেটি না মানায় বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

সদর ও গজারিয়া উপজেলা নিয়ে গঠিত মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন আগের দুবারের সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস। তিনি আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক। অন্যদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ ফয়সাল নির্বাচন করেন কাঁচি প্রতীক নিয়ে। তিনি মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার দুবারের মেয়র এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের ছেলে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে এ আসনে জয়ী হয়েছেন কাঁচি প্রতীকের মোহাম্মদ ফয়সাল।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সাবেক সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাসের সমর্থিত প্রার্থীর পক্ষে আওয়ামী লীগ নেতা শহিদুল ইসলাম কাজ না করায় মৃণাল কান্তির সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব শুরু হয়। মৃণাল কান্তির সমর্থকদের সঙ্গেও দ্বন্দ্বে জড়ান শহিদুল। মৃণাল কান্তি দাসের পক্ষে ছিলেন কাউন্সিলর লিটন ও জিল্লুর। দুই বছর আগে এলাকার আধিপত্য ও মিরকাদিম লঞ্চঘাটের দখলদারি নিয়ে লিটন ও জিল্লুরের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। ওই দ্বন্দ্বে কাউন্সিলর লিটনের ছেলে খুন হন। এ ঘটনার পর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম কাউন্সিলর লিটনকে তাঁর দলে ভেড়ান। দীর্ঘদিন জিল্লুর এলাকার বাইরে ছিলেন। নির্বাচনের সময় এলাকায় আসেন। নির্বাচনকে কাজে লাগিয়ে পূর্বশত্রুতার জেরেই জিল্লুরকে হত্যা করা হয়।