অদম্য ইচ্ছাশক্তি দিয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধিতা জয় করেছেন রাকিবুল হাসান ওরফে লিমন। জন্ম থেকেই দুই হাত অচল। এ কারণে জীবনের সব পরীক্ষায় পা দিয়ে লিখতে হয়েছে তাঁকে। তবু দমে যাননি রাকিবুল হাসান। এভাবে এবারের এইচএসসি সমমানের পরীক্ষায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে জিপিএ–৪.৮৩ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি।
রাকিবুল হাসান গাবতলী তাহেরা টেকনিক্যাল মাল্টিলিঙ্গুয়াল শর্টহ্যান্ড কমার্শিয়াল ইনিস্টিটিউট থেকে এইএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। তিনি বগুড়ার গাবতলী সদরের মাস্টারপাড়ার শহিদুল ইসলাম ও লতা খাতুন দম্পতির ছেলে।
বগুড়া শহরের নওয়াববাড়ি সড়কে আল আমিন কমপ্লেক্সের নিচে ছোট্ট একটা পানের দোকান রয়েছে শহিদুল ইসলামের। দোকানের আয়েই স্ত্রী, দুই ছেলেসহ চার সদস্যের পরিবারের খরচ চলে।
তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সংসারে অভাবের কারণে ছেলের উন্নত চিকিৎসা করাতে পারিনি। পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ দেখে ওকে স্কুলে ভর্তি করেছিলাম। পা দিয়ে লিখে এইচএসসি পরীক্ষায় পাস করার পর উচ্ছ্বসিত ও। এখন বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে বিবিএ নিয়ে পড়তে চায়। পড়াশোনা শেষ করে একটা চাকরি পেলে পরিবারের হাল ধরবে বলে জানিয়েছে রাকিবুল।’
রাকিবুল হাসান দুই বছর আগে গাবতলী পূর্বপাড়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে জিপিএ–৪.১১ পেয়ে এসএসসি সমমানের পরীক্ষায় পাস করেন।
অদম্য এই মেধাবীর বাবা শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার দুই ছেলের মধ্যে রাকিবুল হাসান বড়। জন্মগতভাবে পলিওমাইলাইটিস উইথ মেনিনজাইটিস রোগে আক্রান্ত রাকিবুলের দুই হাত দিয়ে কোনো কাজ করতে পারে না। ঠোঁটও বাঁকা। এ কারণে হাত দিয়ে লিখতে ও স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারে না ছেলেটা। পা দিয়ে লিখে পরীক্ষা দিয়েছে।’
তাহেরা টেকনিক্যাল মাল্টিলিঙ্গুয়াল শর্টহ্যান্ড কমার্শিয়াল ইনিস্টিটিউটের অধ্যক্ষ মাকছুদা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, ‘শারীরিক প্রতিবন্ধিত্ব জয় করে ভালো ফল অর্জন করে রাকিবুল দেখিয়ে দিয়েছে, প্রতিবন্ধীরা বোঝা নয়। পড়াশোনার পাশাপাশি কম্পিউটারেও দক্ষ সে। তার এ সাফল্যে আমরা গর্বিত।’