গোমতী নদীর পানি দেখতে ভিড় করেছেন লোকজন। গতকাল বুধবার বিকেলে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পালপাড়া ব্রিজে
গোমতী নদীর পানি দেখতে ভিড় করেছেন লোকজন। গতকাল বুধবার বিকেলে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার পালপাড়া ব্রিজে

গোমতী নদীর রুদ্র রূপ দেখতে মানুষের ভিড়

ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও কয়েক দিনের ভারী বৃষ্টিতে গোমতী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলায় নদীর বাঁধে ফাটল দিয়ে পানি ঢুকছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গোমতী নদীতে তীব্র স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। অনেকে নদীর ফুলেফেঁপে ওঠা রূপ দেখতে ভিড় জমাচ্ছেন।    

গত মঙ্গলবার রাত থেকে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়। গতকাল বুধবার সকাল থেকে উজান থেকে প্রবল বেগে নেমে আসে পাহাড়ি ঢল। এর ফলে কুমিল্লাসহ মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ফেনী, নোয়াখালীর নদ–নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।  

গতকাল বিকেলে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার টিক্কারচর ব্রিজ, চাঁনপুর বেইলি ব্রিজ, পালপাড়া ও আলেখারচর ব্রিজ ঘুরে দেখা যায়, গোমতীর পানি দেখতে হাজারো উৎসুক মানুষের ভিড়। কেউ মুঠোফোনে সেলফি তুলছেন; কেউ ভিডিও করছেন। কেউ কেউ ফেসবুকে লাইভ করছেন। এ ছাড়া বুড়িচং উপজেলার ভান্তি, কামারখাড়া, বালিখাড়া, আলেখারচর, দুর্গাপুর, গোবিন্দপুর, মালাপাড়া এলাকায়ও গোমতীর তীরে মানুষের ভিড়। অনেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেড়াতে এসেছেন।

বুড়িচং উপজেলার কাহেতরা এলাকায় গোমতীর বেড়িবাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। গতকাল বিকেলে স্থানীয় তরুণ–যুবকেরা সেই বাঁধ মেরামত করছিলেন। এ সময় অন্তত ২০ জনকে সেলফি তুলতে ও ভিডিও করতে দেখা যায়। তাঁদের কর্মকাণ্ডে ক্ষুব্ধ হয়ে বাঁধ মেরামতের কাজে জড়িত জামাল হোসেন বলেন, ‘কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ।’

আদর্শ সদর উপজেলার ভাটপাড়া এলাকায় দেখা যায়, সেনাবাহিনীর একটি দল মাইকে বেড়িবাঁধ থেকে উৎসুক জনতাকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করছে। তারপরও সেখানে উৎসুক জনতার ভিড়।

উপজেলার টিক্কারচর ব্রিজে অনেক লোকজন এসেছেন। চটপটি ও ফুচকার দোকানে বেশ ভিড়। ফুচকা বিক্রেতা আবদুল জলিল জানান, টিক্কারচর ব্রিজে শুক্রবার বেচাকেনা কিছুটা বাড়ে, দু–তিন হাজার টাকা আয় হয়। গোমতীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আজ (গতকাল) মানুষের ভিড় বেড়েছে। এক বিকেলে পাঁচ হাজার টাকার ফুচকা ও চটপটি বিক্রি হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি আরও বাড়তে পারে।

বানাশুয়া রেললাইন ব্রিজে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অনেকে বেড়াতে এসেছেন। ওবায়দুল আহসান নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, ফেসবুকে ছবি দেখে গোমতী নদীর অবস্থা দেখতে এসেছেন। স্ত্রী–সন্তানদের নিয়ে অনেক জায়গায় ঘুরেছেন। পানিতে টইটম্বুর গোমতী নদী নিয়ে তিনি ভ্লগ ভিডিও করেছেন।

এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৭টায় পানি বিপৎসীমার ৭০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পানি আরও বাড়তে পারে। আর আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তা সৈয়দ আরিফুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় কুমিল্লায় ২২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আরও ৪৮ ঘণ্টা বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে।