ইউনিয়ন পরিষদের এই কক্ষের দরজা-জানালা ভেঙে গতকাল রাতে টিসিবির মালামাল লুট করা হয়। আজ সকালে ঈশ্বরগঞ্জের সরিষা ইউনিয়ন পরিষদে
ইউনিয়ন পরিষদের এই কক্ষের দরজা-জানালা ভেঙে গতকাল রাতে টিসিবির মালামাল লুট করা হয়। আজ সকালে ঈশ্বরগঞ্জের সরিষা ইউনিয়ন পরিষদে

ময়মনসিংহে ইউনিয়ন পরিষদের দরজা-জানালা ভেঙে টিসিবির মালামাল লুট

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে একটি ইউনিয়ন পরিষদের কক্ষের দরজা-জানালা ভেঙে টিসিবির মালামাল লুটের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার দিবাগত রাতে উপজেলার সরিষা ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় সন্দেহভাজন কয়েকজনের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন টিসিবির ডিলার মো. সোহাগ। এদিকে টিসিবির মালামাল লুট হওয়ায় দূরদূরান্ত থেকে আসা উপকারভোগীদের খালি হাতে ফিরতে হয়েছে। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপকারভোগীরা।

ইউএনও সারমিনা সাত্তার বলেন, টিসিবির মালামাল লুট হওয়ার ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ডিলারের অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সরিষা ইউনিয়নের ৭৮৫ জন উপকারভোগীর জন্য টিসিবির ৫০ কেজি ওজনের ৩১ বস্তা ডাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। ডালগুলো গতকাল রাত সাড়ে ১২টার দিকে ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে এসে পৌঁছায়। এরপর ডিলার পরিষদের সচিবকে জানালে আসোম উদ্দিন (৬৫) নামের এক গ্রামপুলিশ সদস্যকে বুঝিয়ে দিয়ে চলে যেতে বলেন। সচিবের কথামতো গ্রামপুলিশের উপস্থিতিতে ডিলার ট্রাক থেকে পণ্য নামিয়ে পরিষদের পুরোনো একটি কক্ষে রাখেন। এ সময় স্থানীয় হোসেন আলীর ছেলে তাহের মিয়া (৪৫), সোহরাব আলীর ছেলে সবুজ মিয়া (৪০), লাল মিয়ার ছেলে দীন ইসলাম (৩৫) সেখানে উপস্থিত হন। তাঁরা ডিলারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলেন, ‘এত রাতে মালামাল নামাচ্ছেন, চুরি বা লুট হয়ে গেলে দায় কে নেবে?’ তখন তাহের মিয়া বলেন, ‘এক হাজার টাকা দেন, আমি পাহারার ব্যবস্থা করছি।’ তখন ডিলার ৫০০ টাকা দিতে রাজি হন। পরে তাহের ৫০০ টাকায় হবে না জানিয়ে বলেন, ‘দেশের যে অবস্থা, চুরি-ছিনতাই হলে আমাদের দোষারোপ করবেন না।’ এরপর তাঁরা সেখান থেকে চলে যান। এরপর গ্রামপুলিশকে পণ্য বুঝিয়ে দিয়ে কক্ষে তালা দিয়ে ডিলার বাড়িতে চলে যান। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাতটায় ইউপি সচিব কল করে ডিলারকে জানান, কক্ষের দরজা-জানালা ভেঙে টিসিবির পণ্য চুরি হয়েছে। এরপর বিষয়টি থানায় জানালে ঘটনাস্থলে পুলিশ যায়।

ডিলার মো. সোহাগ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি শতভাগ নিশ্চিত, এক হাজার টাকা না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে গ্রামপুলিশসহ ওই ব্যক্তিরা এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন। প্রশাসনের কাছে আমার দাবি, অভিযুক্তদের আইনের আওতায় এনে যেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তাহলে সব তথ্য বেরিয়ে আসবে।’

অভিযোগের বিষয়ে গ্রামপুলিশ সদস্য আসোম উদ্দিন বলেন, ‘ডিলার আমাকে জানায়, টিসিবির মালগুলো পাহারা দিলে ৫০০ টাকা দেবে। আমি তাঁকে বলি, আমি অসুস্থ মানুষ, এক হাজার টাকা দেন অন্য কাউকে দিয়ে পাহারা দেওয়াই। পরে ডিলার আর আমাকে কিছু না বলে চলে যায়। আমিও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। এরপর সকালে ফজরের নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় দেখি, টিসিবির মাল রাখা রুমের দরজা-জানালা ভাঙা। পরে আমি বিষয়টি তাৎক্ষণিক সচিব মহোদয়কে জানাই। এ ছাড়া আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।’

এক হাজার টাকার বিনিময়ে পাহারাদারের ব্যবস্থা করার কথা স্বীকার করেছেন তাহের মিয়া। তিনি বলেন, ‘যে ঘরটিতে পণ্য রাখা হয়েছিল, সেটার দরজা-জানালা আগে থেকেই ভাঙা ছিল। তাই বলেছিলাম দু-তিনজন পাহারাদারের ব্যবস্থা করতে। কিন্তু ডিলার বিষয়টি গুরুত্ব না দেওয়ায় আমি চলে যাই। আমার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ সত্য নয়।’

ইউপি সচিব মো. নুরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, পরিষদের যে কক্ষে পণ্য রাখা হয়েছিল, সেটি অনেক আগে থেকেই পরিত্যক্ত। দরজা-জানালা ভাঙাচোরা। পাহারার জন্য এক হাজার টাকা চাইলেও ডিলার ৫০০ টাকা দিতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু তাতে অন্যরা সম্মত হননি। মধ্যরাতে তিনজনের বাইরে কোনো লোকজন ছিল না। তাঁরা বলছেন, মালামাল রেখে যাওয়ার পর সবাই বাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।

এদিকে সকালে এলাকায় টিসিবির ওই মালামাল বিতরণের কথা ছিল। কিন্তু মালামাল লুট হওয়ায় উপকারভোগীরা তা পাননি। সরিষা গ্রামের তাহেরা বানু বলেন, ‘বাজারে জিনিসপাতির যে দাম, পণ্যগুলো পেলে উপকার হতো। আমাদের রিজিকের ওপর যারা হাত দিয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হোক।’

ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ওবায়দুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, লুট হওয়া মালামাল উদ্ধারসহ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা অব্যাহত আছে। পাশাপাশি আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।