রাজশাহীতে পরিবহন ধর্মঘটে যাত্রীদের দুর্ভোগ

ধর্মঘটের কারণে বাসের কাউন্টার বন্ধ। নিরুপায় হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ঢাকাগামী এক যাত্রী। আজ বৃহস্পতিবার সকালে নগরের শিরোইল ঢাকা বাস টার্মিনালে।
ছবি: শহীদুল ইসলাম

মহাসড়কে নছিমন–করিমন–ভটভটিসহ অবৈধ যান চলাচল বন্ধ করতে ১০ দফা দাবিতে আজ বৃহস্পতিবার ভোর ছয়টা থেকে রাজশাহী বিভাগে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়েছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। এদিকে রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ হবে ৩ ডিসেম্বর। বিএনপির দাবি, গণসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করতেই এই পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।

আজ সকাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হলেও গতকাল বুধবার রাত থেকেই আন্তজেলার অনেক বাস রাজশাহী থেকে ছাড়েনি। যদিও আজ সকালে ঢাকাগামী অন্তত তিনটি বাস রাজশাহী থেকে ছেড়ে গেছে। তবে সেগুলোতে যাত্রী কম ছিল। সকাল আটটার পর রাজশাহী থেকে আর কোনো বাস ছাড়তে দেখা যায়নি। অন্য জেলা থেকেও কোনো বাস রাজশাহীতে ঢুকছে না।

এদিকে পরিবহন ধর্মঘটে বাস না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন দূরপাল্লার যাত্রীরা। অনেকেই পরিবহন ধর্মঘটের বিষয়ে কিছু জানেন না। সকাল সাতটার দিকে রাজধানীর ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান নগরের শিরোইলের ঢাকা বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর পরীক্ষা আছে। পরীক্ষায় অংশ নিতে হলে আজ তাঁকে ঢাকায় যেতেই হবে। কিন্তু বাস টার্মিনালে এসে দেখেন সবকিছু বন্ধ, কোনো বাস নেই। বাস ধর্মঘটের খবর তিনি জানতেন না। এখন বিকল্প উপায়ে ঢাকা যাওয়ার চিন্তা করছেন তিনি।

নগরের ভদ্রা কাউন্টার থেকে ঢাকা ছাড়া দেশের অন্য জেলাগুলোতে বাস যায়। সেখানেও সকালে কয়েকজন যাত্রীকে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেল। এর মধ্যে অনেকেই ধর্মঘটের ব্যাপারে না জেনেই বাসা থেকে বের হয়েছেন। আবার কেউ কেউ জরুরি প্রয়োজনে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। রংপুরগামী যাত্রী রহমত আলী বলেন, তিনি গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন। তাঁর পরিবারের একজন সদস্য খুব অসুস্থ। কিন্তু বাস না পেয়ে তিনি দুর্ভোগে পড়েছেন।

এদিকে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাসচালক ও চালকের সহকারীদের অলস সময় পার করতে দেখা গেছে। অনেকে আবার গাড়ি ধোঁয়ামোছা করে সময় পার করছেন। সকালে নগরের কাজলা এলাকায় রাস্তার পাশে বাস পরিষ্কার করছিলেন এস এস ট্রাভেলসের কর্মচারী মো. সিরাজ। তিনি বলেন, ‘আজ থেকে বাস ধর্মঘট শুরু হয়ে গেছে। এ জন্য বাসটি পরিষ্কার করে রাখছি। কয়েক দিন তো আর বাস চালাতে পারব না।’

কয়েক দিন বাস বন্ধ থাকবে বলে ধোঁয়ামোছা করে সময় পার করছেন শ্রমিকেরা।

নগরের শিরোইল এলাকায় এ এইচ এম কামারুজ্জামান বাস টার্মিনালে গিয়েও একই চিত্র দেখা গেল। বাসের শ্রমিকেরা রোদে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছেন। টার্মিনালের ভেতরে ও বাইরের রাস্তায় আন্তজেলার বাসগুলো দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। বাসচালক মো. তপন ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল বিকেল থেকেই কিছু রোডে ধর্মঘট শুরু হয়ে গেছে। তানোরে বিকেল থেকে বাস চলছে না। আগামী কয়েক দিন আর কোনো কাজ নেই। ধর্মঘট দেখতে টার্মিনালে আসছি।’

তবে ধর্মঘটের কারণে কয়েক দিন কোনো আয়-রোজগার হবে না বলে আক্ষেপের কথা জানালেন তপন। তিনি বলেন, ‘মালিক সমিতি ধর্মঘট ডাকলেও আমাদের কোনো টাকা দেওয়া হয় না। এখন শ্রমিক ইউনিয়ন যদি কিছু করে।’

এর আগে মহাসড়কে অবৈধ যান চলাচল বন্ধ করাসহ ১০ দফা দাবিতে গত শনিবার ধর্মঘটের হুঁশিয়ারি দেয় পরিবহন মালিক সমিতি। পরে সমিতির ১০ দফা দাবি পূরণের জন্য রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারসহ জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসনকে চিঠি দেয় তারা। কোনো আশ্বাস না পেয়ে আজ সকাল থেকে পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় মালিক সমিতি। তবে বিএনপি বলছে, অন্যান্য গণসমাবেশের মতো রাজশাহীর গণসমাবেশে মানুষকে আসতে বাধা দিতে এই পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়েছে।

বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার বলেন, দেশের অন্যান্য বিভাগের মতো এখানেও ধর্মঘট ডাকা হয়েছে। তবে গতকালই বিএনপির অনেক নেতা-কর্মী রাজশাহী পৌঁছে গেছেন। ধর্মঘট উপেক্ষা করে আজও নেতা-কর্মীরা আসছেন। ধর্মঘট ডেকে বিএনপির সমাবেশে লোকসমাগম ঠেকানো যাবে না।

ধর্মঘটের বিষয়ে রাজশাহী বিভাগীয় পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি সাফকাত মঞ্জুর প্রথম আলোকে বলেন, আজ ভোর থেকে তাঁদের ১০ দফা দাবিতে ধর্মঘট শুরু হয়ে গেছে। বিভাগের আট জেলায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধর্মঘট চলছে। কোথাও কোনো সমস্যা হয়নি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই ধর্মঘট চলবে। ধর্মঘটের মধ্যে সকালে রাজশাহী থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছু বাস রাজশাহীতে এসে আটকে পড়েছিল। তাদের যেতে দেওয়া হয়েছে। তবে তারা যাত্রী নিয়ে যায়নি বলে দাবি করেন সাফকাত মঞ্জুর।