ভয়াবহ বন্যার পর গোমতী নদীর পানি কমেছে। জেগে উঠেছে কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলার চরাঞ্চলগুলো। কিছুদিন আগেও যেখানে সবুজ ফসলের সমারোহ ছিল, সেখানে এখন কেবল বন্যার ক্ষত, তবে থেমে নেই কৃষকেরা। আবার তাঁরা ব্যস্ত হয়েছে উঠেছেন চরাঞ্চলের বুকে ফসলের আবাদে। চরে বিভিন্ন ফসলের বীজ বুনতে শুরু করেছেন তাঁরা।
সোমবার সকালে গোলাবাড়ি এলাকায় গোমতীর চরে গিয়ে এ দৃশ্য দেখা যায়। গোমতীর চরে সবজি আবাদ করে সংসার চালান জানু মিয়া। এবারের বন্যায় তাঁর খেতের ফসল নষ্ট হয়েছে। হঠাৎ আসা উজানের ঢলে ভেসে গেছে তাঁর খেতের সব ফসল।
জানু মিয়া জানান, তিনি মুলা, ফুলকপি, বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন সবজির চাষ করেন। গোমতীর চরে ১২ মাসই সবজির চাষ করা হয়। ২০ আগস্ট হঠাৎই ভারত থেকে আসা ঢলে সব সবজির খেত নষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ফসলের খেতের সঙ্গে আমার ঘরেও পানি প্রবেশ করে। কয়েক দিন নদীর বেড়িবাঁধে পরিবার নিয়ে ছিলাম। এ বন্যায় আমার সব শেষ হয়ে গেছে। এখন পানি কমেছে, তাই নতুন করে সব শুরু করেছি। বর্তমানে মুলার বীজ বুনছি। কয়েক দিনের মধ্যে ফুলকপি ও বাঁধাকপি লাগাব।’
নদী চরের অরণ্যপুর এলাকাতেও বীজতলা তৈরিতে কৃষকদের ব্যস্ততা দেখা যায়। সেখানে কথা হয় কৃষক আবদুস সালামের সঙ্গে। তিনি বলেন, তাঁর সব ফসল ভেসে গেছে। পানি কমেছে, তাই খেত প্রস্তুত করছেন। সেখানে সবজির চারা রোপণ করছেন। তবে কৃষি বিভাগ থেকে তাঁরা কোনো সহায়তা পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। তাঁর মতে, চরটির কয়েক হাজার কৃষক এবারের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
এবারের বন্যায় কুমিল্লার প্রায় ৭৪ হাজার হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমির ফসল একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। এসব ফসলের মধ্যে রোপা আমনের বীজতলা, রোপা আমন, শাকসবজি, রোপা আউশ ও আখ আছে। সব মিলিয়ে জেলার কৃষি খাতে এবারের বন্যায় প্রায় ৭৫৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
গোমতী চরের ফসল কুমিল্লার মানুষের সবজির চাহিদা মেটাতে বড় ভূমিকা রাখে বলে দাবি করেন অঞ্চলটির কয়েকজন কৃষক। তাঁরা জানান, এই চরে ১২ মাসই বিভিন্ন ধরনের সবজির আবাদ করা হয়। কুমিল্লার নিমসার বাজার হয়ে এসব সবজি দেশের বিভিন্ন স্থানেও যায়। কিন্তু বন্যার কারণে পুরো চরের প্রায় সব ফসল ভেসে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে জেলার হাটবাজারেও। তাঁরা প্রত্যাশা করছেন, পরিশ্রমের মাধ্যমে চরাঞ্চলে আবারও সবুজের হাসি দেখা যাবে।
জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এবারের বন্যায় জেলায় প্রায় ৭৪ হাজার হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমির ফসল একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে। এসব ফসলের মধ্যে রোপা আমনের বীজতলা, রোপা আমন, শাকসবজি, রোপা আউশ ও আখ আছে। সব মিলিয়ে জেলার কৃষি খাতে এবারের বন্যায় প্রায় ৭৫৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
আমরা আপাতত রোপা আমন নিয়ে কাজ করছি। এরই মধ্যে ১৪৯ মেট্রিক টন ধানবীজ, অন্যান্য কৃষি উপকরণ ও টাকা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা হিসেবে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।আইউব মাহমুদ, কুমিল্লার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক
দুপুরে কুমিল্লার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, ‘আমরা আপাতত রোপা আমন নিয়ে কাজ করছি। এরই মধ্যে ১৪৯ মেট্রিক টন ধানবীজ, অন্যান্য কৃষি উপকরণ ও টাকা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা হিসেবে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আর আউশ ধান এখন কাটা শুরু হয়েছে।’
কৃষকদের ঘুরে দাঁড়ানোর উদ্যোগ স্বাগত জানিয়ে আইউব মাহমুদ বলেন, এই মুহূর্তে পরামর্শ ছাড়া অন্যভাবে চরের সবজি চাষিদের সহযোগিতা করা সম্ভব হচ্ছে না। বন্যার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে চরের কৃষকদেরও কৃষি প্রণোদনা, বিনা মূল্যে সার, বীজ বিতরণসহ সার্বিক সহযোগিতার চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়া সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।