শ্রেণিকক্ষের দেয়ালে আঁকা আবু সাঈদের ছবি দেখছেন শিক্ষার্থীরা। দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কাটলা মেধাবিকাশ স্কুলে
শ্রেণিকক্ষের দেয়ালে আঁকা আবু সাঈদের ছবি দেখছেন শিক্ষার্থীরা। দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কাটলা মেধাবিকাশ স্কুলে

শ্রেণিকক্ষের দেয়ালে বুক পেতে দাঁড়িয়ে আছেন আবু সাঈদ

শনিবার দুপুর ১২টা। খুদে শিক্ষার্থীদের সবার চোখ সামনের দেয়ালের দিকে। উৎসুক সব চোখের সামনে ডান হাতে লাঠি নিয়ে বুক উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছেন এক সাহসী যুবক। শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ বলছে, ওই যে ওই যে, আবু সাঈদের বুকের ওইখানে পুলিশ গুলি করেছিল। মৃত্যুর সময় তিনি কত কষ্টই না পেয়েছিলেন।

এমন একটি আবেগঘন দৃশ্য দেখা গেল দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার কাটলা মেধাবিকাশ স্কুলে। বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশের একটি শ্রেণিকক্ষের বাইরের দেয়ালে আঁকা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়া আবু সাঈদের ছবি। আবু সাঈদের ছবির ব্যাকগ্রাউন্ডে লাল-সবুজের পতাকা। ছবির নিচে লেখা আছে শহীদ আবু সাঈদ। তার নিচে লেখা আছে শহীদ আবু সাঈদের জন্ম ও মৃত্যুর সাল। বিদ্যালয়ে ক্লাসের ফাঁকে সেই ছবি দেখার জন্য সেখানে জড়ো হয়েছে শিক্ষার্থীরা।

বিদ্যালয়ের পাশ দিয়ে যাওয়া রাস্তায় অভিভাবক ও সাধারণ পথচারীরা একপলক তাকিয়ে দেখছেন দেয়ালে বুক পেতে দাঁড়িয়ে থাকা সাহসী আবু সাঈদকে।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী খুশি আক্তার তার সহপাঠীদের জানিয়ে দিচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের সামনে বুক পেতে দাঁড়িয়ে থাকা সাহসী শিক্ষার্থী আবু সাঈদের বীরত্বের কথা। আবু সাঈদ তাঁর ডান হাতে থাকা লাঠি দিয়ে সামনে থেকে ছুটে আসা পুলিশের গুলি প্রতিহত করার চেষ্টা করেছিলেন বারবার। একের পর এক পুলিশের ছররা গুলিতে ঝাঁঝরা হয় আবু সাঈদের বুক ও পেট। সড়কের ওপর লুটিয়ে পড়েন আবু সাঈদ।

দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী খুশি আক্তার প্রথম আলোকে বলে, ‘আমরা টেলিভিশনে ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদকে নির্মমভাবে হত্যা করার দৃশ্য দেখেছি। বাংলাদেশে দ্বিতীয় স্বাধীনতা অর্জনে আবু সাঈদের আত্মত্যাগ আমাদের নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের জন্য গর্ব ও অনুপ্রেরণার। তিনি সারা জীবন আমাদের হৃদয়ে দেশপ্রেমের জ্বলন্ত উদাহরণ হয়ে বেঁচে থাকবেন।’

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ (২৫)। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন। আবু সাঈদ ১৬ জুলাই বেলা দুইটার দিকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিজের জীবন উৎসর্গের মাধ্যমে এক অনন্য দেশপ্রেম দেখান তিনি। তাঁর এ দেশপ্রেম নতুন প্রজন্মের খুদে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপলব্ধি ও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করার জন্য ৮ আগস্ট বিদ্যালয়ের দেয়ালে তাঁর সেদিনের দৃশ্যটি রংতুলির আঁচড়ে দৃশ্যমান করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

কাটলা মেধাবিকাশ স্কুলের পরিচালক মাহাবুর রহমান বলেন, ‘নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থীরা ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি। শিক্ষার্থীরা এসবের ইতিহাস তাদের পাঠ্যবইয়ে পড়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মতো সাহসী যুবকের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীন হয়েছে। শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নতুন প্রজন্মের বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর আত্মত্যাগ ও বীরত্বগাথাকে কোমলমতি ও খুদে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছড়িতে দিতে বিদ্যালয়ের দেয়ালে আবু সাঈদের ছবিটি অঙ্কন করা হয়েছে।’