তিন মাস আগেই ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে সরকারি জায়গাটি দখলমুক্ত করা হয়। কিন্তু ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাতারাতি সেই জায়গা আবার দখল হয়েছে। আগে টিনশেডের স্থাপনা থাকলেও এখন পাঁচতলা ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। স্থানীয় বাসিন্দারা রীতিমতো অবাক। ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার চেঁচুয়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে।
মুক্তাগাছার দুল্লা ইউনিয়নের চেঁচুয়া বাজারের কেশবপুর মৌজায় ১২৩ নম্বর দাগে সরকারি ১ নম্বর খাস খতিয়ানের ৫৩ শতক জমি দখলে রেখেছিলেন স্থানীয় দলিল লেখক শরিফুল ইসলাম। তাঁর বাড়ি চণ্ডিমণ্ডব গ্রামে। চলতি বছরের ২৫ মে জমিটি দখলমুক্ত করে স্থানীয় প্রশাসন। অবৈধ স্থাপনা ভেঙে সরকারি সম্পত্তি উল্লেখ করে একটি সাইনবোর্ডও টাঙিয়ে দেওয়া হয়। সুষ্ঠুভাবে বাজার পরিচালনা ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার স্বার্থে জমিটি উচ্ছেদ করে বাজার কমিটির কাছে হস্তান্তর করে প্রশাসন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুল্লা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) একজন সদস্য বলেন, দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে দলিল লেখক শরিফুল সরকারি জমিটি আবার দখলে নিয়েছেন। আগে টিনের ঘর থাকলেও এখন বহুতল ভবন করা হচ্ছে। স্থানীয় বিএনপির নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় তিনি এ কাজের সাহস পাচ্ছেন। দেশের বর্তমান অবস্থার কারণে কেউ কথা বলছেন না।
শরিফুল ইসলাম প্রশাসনের সাঁটানো সাইনবোর্ডও সরিয়ে ফেলেছেন। ১৫ দিন ধরে জমিটি দখলে নিয়ে তিনি স্থাপনা নির্মাণ করছেন। ইতিমধ্যে ভিত্তিপ্রস্তরের কাজ শেষে পিলার নির্মাণ করা হয়েছে। দোকারঘর করতে দেয়ালের কাজও শুরু করেছেন। গতকাল শুক্রবার দুপুরে কয়েক ফুট দেয়ালের কাজ শেষ হয়েছে দেখা যায়।
জানতে চাইলে শরিফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার বাবা ক্রয়সূত্রে জমিটির মালিক। জমিটিতে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয় অনেক দিন আগে। পাঁচতলা ভবনের ভিত্তি আগে থেকেই করা ছিল। তার ওপর টিনশেড ঘর ছিল। প্রশাসনের লোক এসে স্থাপনা ভেঙে দেন।’ তিনি বলেন, ‘কাগজপত্র সব আমাদের নামে। উচ্ছেদ আমি মানিনি। উচ্ছেদ করলেও কোনো কাগজ দেয়নি।’
শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘২০০২ সালে সরকার জমিটির ওপর দাবি তুলেছিল। সে বিষয়ে আমরা সর্বোচ্চ আদালত থেকে ২০২২ সালে ডিক্রি নিয়ে এসেছি। আমাদের জায়গা দিয়ে বাজারের ময়লা ফেলার সুযোগ চেয়েছিল। কিন্তু তা না দেওয়ায় পর্দার আড়ালে থেকে একটি চক্র বৈষম্যমূলক কাজটি করিয়েছে।’ তাঁর দাবি, সরকার পরিবর্তনের সুযোগে কাজ শুরু করেছেন, ব্যাপারটি ঠিক তা নয়। প্রশাসনিকভাবে সব জায়গায় কাগজপত্র জমা দিয়েই কাজ শুরু করেছেন। খাজনা নিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ে আবেদনও করা আছে। এরপরও আগামীকাল রোববার উপজেলায় ডেকেছে। সেখানে গিয়ে সব দেখাবেন।
দুল্লা ইউপির চেয়ারম্যান মো. হোসেন আলী বলেন, যে জায়গাটি আবার দখল হচ্ছে, সেটি আইমন নদের পাশের একটি সরকারি জায়গা। স্থানীয় প্রশাসন জমিটি উদ্ধার করলেও সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বিএনপির নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় আবার দখল করে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের কাজ চলছে। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছেন।
মুক্তাগাছা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তানভীর হায়দার বলেন, ওই জায়গায় মোট ৫৩ শতক সরকারি খাস জমি আছে। এর মধ্যে রাস্তার পাশে কিছু জমি টিনশেডের স্থাপনা করে দখলে ছিল। সেগুলো উচ্ছেদ করা হয়েছিল। আবার স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণের খবর পেয়ে মৌখিকভাবে কাজ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। আগামীকাল দখলকারীকে ডাকা হয়েছে। নির্দেশনা অমান্য করলে তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।