গাজীপুরে দুজন সংসদ সদস্য নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে সভা করেছেন। তাঁরা দুজনই বর্তমান সংসদ সদস্য এবং দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর ও গাজীপুর সদর একাংশ) আসনের প্রার্থী। একজন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গাজীপুর-৩ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মো. ইকবাল হোসেন। তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। অপরজন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ও এই আসনে এবার আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী রুমানা আলী।
আজ শনিবার দুপুরে শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের সিগাল পার্কে সভা আয়োজন করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী রুমানা আলী। সেখানে নির্বাচনী এলাকার স্থানীয় সরকারের সব জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে তিনি মতবিনিময় সভা করে নৌকার পক্ষে কাজ করার অঙ্গীকার আদায় করেন। রুমানা আলী বক্তব্যে বলেন, ‘নৌকাকে এই মুহূর্তে ক্ষমতায় আনা বেশি জরুরি। কারণ, আওয়ামী লীগ সরকারই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।’
মাওনা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে ছিলেন গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জামিল হাসান, শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামসুল আলম প্রধান, শ্রীপুর পৌরসভার মেয়র আনিছুর রহমান, শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল, মাওনা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি জেড আই জালাল, গাজীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. সিরাজুল হক মাদবর, কাওরাইদ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ, পিরুজালি ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন, রাজাবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান হাসিনা মোমতাজ, গাজীপুর জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুস ছালাম মোল্লা প্রমুখ।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে রাত সোয়া ৯টার দিকে রুমানা আলীকে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
এদিকে বিকেলে শ্রীপুর উপজেলার বেরাইদেরচালা আলহাজ ধনাই বেপারী উচ্চবিদ্যালয় মাঠে কর্মিসভা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ইকবাল। সভায় কয়েক শ মানুষ উপস্থিত ছিলেন। শ্রীপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক নূরে আলম মোল্লার সঞ্চালনায় কর্মিসভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইকবাল। ইকবাল তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘দলের সমর্থন নিয়েই আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। গত পাঁচ বছরে আমি এলাকার উন্নয়নে যে কাজ করেছি, অতীতে এত কাজ কখনো হয়নি। সবাই আমার পক্ষে কাজ করবেন।’
সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ূন কবির, সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশিদ ফরিদ, শ্রীপুর উপজেলার পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মাহতাব উদ্দিন ও শ্রীপুর থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুল্লাহ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইকবাল হোসেন আচরণবিধি লঙ্ঘনের কথা নাকচ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি বাউন্ডারির ভেতরে আমরা একটি ছোট কর্মিসভা করেছি।’
এদিকে গাজীপুর মহানগরীতে একটি ওয়াজ মাহফিলে যোগ দিয়ে গাজীপুর-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী আলিম উদ্দিন ভোট চেয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। ২১ নম্বর ওয়ার্ডের নান্দুয়াইন এলাকায় ইত্তেহাদুল মাদারিসিল কওমিয়াহ মাদ্রাসায় ওই ওয়াজ মাহফিল হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাজী আলিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ওয়াজ মাহফিলে ভোট চাইনি, সবার কাছে দোয়া চেয়েছি।’
গাজীপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, অভিযোগ পেলে এখন আর সতর্ক করা নয়, সরাসরি প্রার্থীকে জরিমানা করা হবে। পাশাপাশি আচরণবিধি পর্যবেক্ষণ করার জন্য অনুসন্ধান কমিটিও কাজ শুরু করেছে।’
আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ-গাজীপুর সদর একাংশ) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আখতারউজ্জামানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। ওই আসনের নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির সভাপতি ও সিনিয়র সহকারী জজ-৫ আদালতের বিচারক আলিফ রহমান এ নোটিশ দিয়েছেন। এতে রোববার বেলা তিনটার মধ্যে তাঁকে সশরীর হাজির হয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘনের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
এ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকির শিবির থেকে গত বৃহস্পতিবার আখতারউজ্জামানের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের এ অভিযোগ করা হয়। লিখিত অভিযোগটি দেন মেহের আফরোজ চুমকির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব ও কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এইচ এম আবু বকর চৌধুরী।
লিখিত অভিযোগে আবু বকর চৌধুরী উল্লেখ করেন, গত ৩০ নভেম্বর বেলা ১১টার দিকে সহস্রাধিক কর্মী-সমর্থকের মিছিল নিয়ে উপজেলা চত্বরে উপস্থিত হন স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারউজ্জামান। পরে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়ে বেলা একটার দিকে বের হন তিনি। এ সময় তিনি উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে অবস্থানরত সহস্রাধিক কর্মী-সমর্থককে নিয়ে মিছিল ও শোডাউন করে নির্বাচনী প্রচারণা করেন। পরে বোয়ালী উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে পরীক্ষা চলাকালে মাইক ব্যবহার করে বক্তব্য দেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারউজ্জামান। এ সময় ভোটও চান তিনি। এসব ঘটনা নির্বাচনী আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
এ অভিযোগ আমলে নিয়ে আখতারউজ্জামানকে শোকজ করল নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি।